শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

লেলিহান অগ্নিশিখার গ্রাসে শতাব্দী প্রাচীন প্যারিসের গর্ব নোত্র দাম ক্যাটিড্রাল

লেলিহান অগ্নিশিখার গ্রাসে ধসে গেছে শতাব্দী প্রাচীন প্যারিসের নোত্র দাম ক্যাটিড্রাল ।প্যারিসের বিখ্যাতউপাসনা গৃহ ( গির্জা ) নোত্র দাম ক্যাটিড্রাল বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের কবলে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে । নীল আকাশ ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে মুহূর্তে কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল । চারিদিকে ভয়ের সন্ত্রাস । প্যারিসের আকাশে অগ্নিকাণ্ড ও ধূসর ধোঁয়ার বিশাল মেঘগুলি আগুনে জ্বলছিল যেন । প্যারিসের আকাশে আগুণের তীব্র ঝলকানি দেখে ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে পর্যটকের দল ও । চোখের আগে নোত্র দাম ক্যাটিড্রালের উচ্চ মিনার খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো । মাটিতে লুটিয়ে পরহলী শতাব্দীর গর্ব । সাড়ে আটশো বছরেরও বেশি পুরনো গির্জার ধাতব চূড়াটি আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ে ।অগ্নিকাণ্ডের কারণনিশ্চিত করা যায় নি কিন্তু ক্যাথিড্রালটি 850-বছর-বয়সী গোথিক মাস্টারপিসের গুলিআরও ভালোভাবে সংরক্ষণকরার জন্যসংস্কার সাধনের কাজ চলছিল । অনুমান করা হচ্ছে মেরামতির গাফিলতির জন্য-ইআগুন লেগেছে হয়ত ।

স্মরণ থাকতে পারে কয়েকদিন আগে বিশ্ব বিখ্যাত গির্জা ঘরটি সারানোর জন্য সুবিশাল ক্রেন দিয়ে ক্যাথিড্রালের প্রাচীনতম মূর্তিগুলিকে নিমেষে শূন্যে তুলে ফেলা হয়।

মনে হচ্ছিল যেন নীল আকাশের বুকে উড়ে যাচ্ছে ধাতবমূর্তি। ঐতিহাসিক নোতরদাম গির্জা থেকে যেন খুলে বেরিয়ে এসে আকাশ পথে কোথাও যাচ্ছে সারিসারি মূর্তি। প্যারিসের বিখ্যাত নোতরদাম ক্যাথিড্রাল থেকে আসলে আকাশ পথে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১৬ টি ব্রোঞ্জ মূর্তি। প্রাচীন এই মূর্তিগুলির পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করার জন্যই এমন অভূতপূর্বভাবে সেগুলিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বহু প্রাচীনকালে নির্মিত ব্রোঞ্জের ওই ভারী মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের ১২ টি যিশুর নির্বাচিত ধর্মপ্রচারক এবং চারজন ধর্মযাজকের মূর্তি। নোত্র দাম দ্য পারিস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে অবস্থিত একটি ক্যাথেড্রাল, অর্থাৎ বিশপের আসনবিশিষ্ট গির্জা এই ক্যাথলিক গির্জাটি বর্তমানে প্যারিসের আর্চবিশপ বা মহাবিশপের অধীনে রয়েছে।

গির্জাটি প্যারিস শহরের ৪র্থ আরোঁদিসমঁ বা ওয়ার্ডে, সেন নদীতে অবস্থিত ইল দ্য লা সিতে নামক দ্বীপের পূর্ব পাশে অবস্থিত। গির্জাটির পশ্চিমমুখী অংশটির সামনে রয়েছে উন্মুক্ত জঁ-পল চত্বর।

বিশপ মোরিস দ্য সুলির উদ্যোগে ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে গির্জাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দুইশত বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে এবং চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি ১৩৪৫ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। এ কারণে ভবনটির নির্মাণশৈলী স বজায়গায় অভিন্ন রূপ নয়। তবে প্রধানত এটি গোথিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি ভবন। পরবর্তীতে ১৮৪৪ থেকে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থপতি ভিওলে-ল্য-দুকের অধীনে ক্যাথেড্রালটিকে পুনরুদ্ধার ও সংস্কার করা হয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে আড়ম্বরের সাথে ভবনটির ৮৫০তম জন্মদিন পালন করা হয়।

দীর্ঘকাল প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে নোত্র্-দাম-এর প্রসিদ্ধি ছিল। ১৮৩১ সালে এটি প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল । ভিকতর উগোর উপন্যাস ‘নোত্র্ দাম দ্য পারি-‘ তে ভবনটিকে কেন্দ্রীয় ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। অভিষেককালে ফ্রান্সের রাজা ও সম্রাটদের এই গির্জাতেই শপথ পড়ানো হত। আধুনিক ফ্রান্সের অনেক রাষ্ট্রপতির যেমন শার্ল দ্য গল, জর্জ পোঁপিদু, ফ্রঁসোয়া মিতেরঁ প্রমুখের শেষকৃত্য এই গির্জাতেই অনুষ্ঠিত হয়।

গগনস্পর্শী উচ্চতা ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর জন্য নোত্র-দাম গির্জাটি পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এটি প্যারিস নগরী, ফ্রান্স, এমনকি সমগ্র ইউরোপের পর্যটকদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্যাথেড্রাল। প্রতি বছর ২ কোটি লোক এটি দেখতে আসে এবং প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ পর্যটক গির্জার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এ গির্জায় প্রবেশের জন্য পর্যটকদের কোনরূপ দর্শনী দিতে হয় না।