শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

​সংযুক্তার মৃণাল- তর্পণ


ষোলোকলা পূর্ণ হবার সন্ধ্যে...
গীত, বাদ্য, কাব্য, চিত্র, ভাস্কর্য, বাচিকশৈলী, চলচ্চিত্র, নাট্য - চারু, কারু ও ললিতকলার এমন সুচারু সমন্বয় যখন ষোলো' র সন্ধ্যেয় ঘটে, তখন ষোলো কলা পূর্ণ হয়। গত ১৬ই এপ্রিল, ইন্ডিয়ান হ্যাবিটাট সেন্টারে প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রী মৃণাল সেনের স্মরণ ও বিবিধভাষী কবি সম্মেলনের যুগ্ম পরিবেশনে সন্ধ্যাটি হয়ে উঠেছিল মনোজ্ঞ ও আনন্দময়। প্রযত্নে ইউনাইটেড উইমেন ফোরাম।
নারীদের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে তাদের সংহত করে এগিয়ে নিয়ে যাবার ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠা সংযুক্তা মহিলা মঞ্চ ( ইউনাইটেড উইমেন ফোরাম) সবেমাত্র দুইয়ে পা রেখেছে। তবু এরই মধ্যে তার টলমলে পায়ে লেগেছে ধরিত্রীর সহনীয় গাম্ভীর্য।

5cb8aff98d5b5.jpg

সেদিনের ভাবগম্ভীর সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন শ্রদ্ধেয়া লেখিকা ইনা পুরী, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্য গবেষক শ্রী সৈয়দ হাসমত জালাল ও দিল্লির বিশিষ্ট নাট্যকার 'সংশপ্তক' নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী তড়িৎ মিত্র।
মৃণাল সেনের সমুদ্রের মতো অনন্ত ঘটনাবহুল জীবনের এক একটি আঙ্গিক তুলে ধরেছেন অতিথিরা। ইনা পুরী ' র কথায় আমরা দেখতে পাই মৃণালের সংগে তাঁর পুত্র কুণালের সম্পর্কের বন্ধুত্বপূর্ণ রূপরেখাটি। মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে যেন রাজনীতি না করা হয়, এই ছিল তাঁর পুত্রের প্রতি অমোঘ নির্দেশ। তড়িৎ বাবু মৃণাল সেনের 'বাইশে শ্রাবণ' সিনেমার সঙ্গে একাত্ম করে ফেলেন পিকাসোর 'গোয়ের্ণিকা'। সৈয়দ হাসমত জালাল একদিন প্রতিদিন খারিজ ও ক্যালকাটা ট্রিলজি' র উপর আলোকপাত করেন। -প্রখ্যাত শিল্পী হেনা চক্রবর্তী আঁকেন মৃণাল সেনের অনবদ্য ছবি ।5cb8ce2ee540b.jpg
অতিথিদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সং যুক্ত মহিলা মঞ্চের পক্ষ থেকে পরিবেশিত হল - ' আমি মৃণাল'.। মৃণালের ভাষ্যে মৃণালের তর্পন। মৃণাল সেনের রচিত বিভিন্ন বই এবং ইটারভিউ থেকে কিছু কিছু অংশ এবং তাঁর বিভিন্ন সিনেমা থেকে প্রাসঙ্গিক অডিও ব্যবহার করে সেগুলিকে একসঙ্গে গেঁথে এক অনন্যপাঠের আয়োজন সন্ধ্যেটিকে আরো মৃণালমনস্ক করে তুলেছিল।

5cb8b0a7b5c6e.jpg

এরপর ছিল যথাক্রমে ইংরেজি, হিন্দী, উর্দু ও বাংলা কবিদের কবিতাপাঠ। মা থেকে স্বাধীনতা, প্রেম থেকে বিরহ, ধূলিময় রাস্তা থেকে ছন্দোময় কবিতার অপার উদযাপন - এক অভিনব মাত্রা দান করেছিল। অনুষ্ঠানটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার পিছনে বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী শ্রীমতী আভেরী চৌরে' র সুচারু সঞ্চালনা ছিল অনস্বীকার্য। স্বনামধন্য শিল্পী শ্রীমতী হেনা চক্রবর্তীর আঁকা মৃণাল সেনের পোর্ট্রেট ও তাঁর নিজের হাতে গড়া স্মারক, - যা দিয়ে প্রধান অতিথি ও কবিদের সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছিল- তা এই সন্ধ্যের অমূল্য সম্পদ।

5cb8c9b37592a.jpg

শুধু বাংলা নয়; হিন্দী বাংলা ওড়িশা ও তেলেগু ভাষায়ও মৃণাল সেন সিনেমা করেছেন। তাঁর এই ভিন্ন ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও উন্মুক্ততার সঙ্গে ভিন্নভাষী কবিসম্মেলনের ভাবনাকে একই সূত্রে গেঁথে দেওয়ার এই প্রয়াস রাজধানীর বুকে সর্বপ্রথম। আশা করা যায়, সংযুক্তা মহিলা মঞ্চের পরিবেশনায় এইরকম অনন্যসাধারণ ভাবনা ও আঙ্গিকের অনুষ্ঠান রাজধানীর মননশীল দর্শককে বারংবার আনন্দ দেবে।সংযুক্ত মহিলা মঞ্চ , দিল্লি এর এই অনুষ্ঠান সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের একটি অভিনব প্রচেষ্টা যা অত্যন্ত সফলভাবে শিল্প সাহিত্য চলচ্চিত্রকে একসঙ্গে বেঁধে ফেলেছিল হ্যাবিটাটের আঙ্গিনায় । সংযুক্ত মহিলা মঞ্চ দিল্লি কয়েকজন সংস্কৃতিপ্রমী মহিলার স্বচ্ছ সংস্কৃতি আন্দোলনের একটি প্রয়াস । সমাজ ও শিল্পচেতনার মুক্তচিন্তার একটি যথার্থ প্ল্যাটফর্ম ।ঋত্বিক ঘটক থেকে মৃণাল সেন ইনাপুরী থেকে শুক্লা ব্যানার্জি অতীতের সঙ্গে বর্তমানের এই মেলবন্ধন সংযুক্তা মহিলা মঞ্চ কৃতিত্ব বৈকি । 'বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান ' -- বহুভাষী বহু ধর্মের জাত অজাতের সীমারেখা ভেঙে দিয়ে ষোলতে দিল্লি হয়ে উঠলো ষোড়শী । জয়শ্রী শিবানী ইন্দ্রানী ইন্দিরা শুক্লা মৌমিতা রীতা অঞ্জলি -- সংযুক্তার এই নেপথ্যচারিনী গণ একমঞ্চে নিয়ে এলেন হিন্দী উর্দু ইংরেজি বাংলা কবিদের কলকাকলি