শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

শাড়ি সুখ,পর্ব -৮

পম্পি চৌধুরী -- গৃহবধু । বিয়ের আগে স্কুলে পড়াতেন । অঙ্ক তাঁর প্রিয় বিষয় । রান্না থেকে গৃহসজ্জা , ছেলের পড়শোনা সব সামলে নিজের জন্য সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়েন এদিক ওদিক । ঘোরা তাঁর প্রিয় নেশা । শাড়ি নিয়ে অন্যদেশে তিনি বলেন ...

মহামারি বিশ্ব জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে । এমন দিন আমরা জীবিতকালে দেখিনি । দেখতেও চাই না । স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাহত । তবু তো শরত এলো , এলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব । করোনাকালে পূজাই যেখানে প্রতীকী মাত্র, সেখানে কি শাড়ি পরব এইবার, আমরা কিনব শাড়ি ? আরে পুজো আবার শাড়ি ছাড়া হয় না কী ? সারাবছর যতই বেহিসেবী শাড়িতে আলমারি ভরিয়ে তুলি না কেন ,পূজায় নতুন শাড়ি না হলে চলে নাকি ?

5f94dc147e77b.jpg

স্বর্ণচুরি

শারদীয় দূর্গা পূজা ও নতুন শাড়ি বাঙালি বধুর জীবনে একতারে বাঁধা । একে অপরকে ছাড়া চলে না । মা আসছেন তাই মাতৃবরণে নতুন শাড়ি চাই -ই চাই । প্রথমে মা (দূর্গা) এর জন্য শাড়ি কিনব । প্রতিবছর ( আমার শাশুড়িকেও দেখতাম আগে মায়ের শাড়ি কিনতেন ,তারপর পরিবারের অন্যদের জন্য যথাযথ পোশাক । শেষে নামতেন শাড়ি কিনতে )।

5f946ab99ac45.jpg

শাড়ির সঙ্গে আমার জন্মাবধি সখ্য । মা দিদা ঠাকুমাদের শুধু শাড়ি পরতে দেখেছি । মা-ই প্রথম শাড়ি পরা শিখালেন । সরস্বতী পুজোর দিন ছোট শরীরে মা ছোট শাড়ি কিনে পরিয়ে দিতেন । সেইদিন টি ঘোরের মধ্যে কাটত । নিজেকে কেমন যেন বড় বড় লাগত । কেমন যেন মোহময়ী ।

একটা গিন্নি গিন্নি ভাব । একটু ভয় ও করত । কিন্তু সর্ব শরীর জুড়ে একটা ঘোর কাজ করত । আমি যেন ঠিক আমি নই । অন্য কেউ । আয়নায় নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখতাম ।

5f946aece058d.jpg

বেনারসি

সেই থেকে শাড়ির সঙ্গে ভাব শুরু । শাড়ি হয়ে উঠল আমার প্রিয় সঙ্গী । আমার প্রেম ভালোবাসা । ব্যক্তিজীবনে কাজের সুবিধার্থে অন্য পোশাক পড়লেও ( সালোয়ার সুট, জিন্স) শাড়ি সর্বাধিক প্রিয় পোশাক । আলমারিতে তিল ধারণের জায়গা নাই । ভারত বাংলার নানা প্রদেশের শাড়িতে টুইটুম্বর, তবু পুজো আসছে নতুন শাড়ি কিনব না তাকি হয় ? স্বপ্নেও ভাবতে পারি না শাড়ি ছাড়া পুজো সম্ভব ?

5f946b703e811.jpg

কাঞ্জিভরম

বঙ্গ নারীর অঙ্গে শাড়ি । হ্যাঁ আমার সব প্রেম শাড়ি কে ঘিরে । শাড়ির সঙ্গে বাঙালি নারীর রয়েছে গভীর যোগসূত্র। সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শাড়ির যেমন ব্যবহার রয়েছে তেমনি নারীর সৌন্দর্য প্রকাশে শাড়ির যেন তুলনা হয় না। বিভিন্ন উৎসবকে বিবেচনা করে বাঙালি নারীর শাড়ির রঙের মাঝেও রয়েছে বৈচিত্র্য।

5f946b9899aa3.jpg

তাঞ্চই বেনারসি

আমার মা শাশুড়ি মা দুইজনই শাড়ি প্রেমী ছিলেন । বিয়ের পর শাশুড়িমার আলমারি যখন গুছিয়ে দিতাম মা পরম স্নেহে বলতেন সব তোমার । যা ভালো লাগে পরতে পারো । আমার শাশুড়িমার কালেকশন ঈর্ষণীয় ছিল । চওড়া পাড়ের শাড়ি পরতেন তিনি । তাঁর পুত্রটিও আমার থেকে বেশি শাড়ি প্রেমী । বিয়ের পর দেখেছি বাড়ি সব শাড়িই তাঁর উদ্যোগে কেনা হয় । মায়ের শাড়ি নির্বাচনেও তাঁরই হাত । আমার জন্য শাড়িও তিনিই কিনেন । আর তাঁর পছন্দ লা-জবাব । বন্ধুরা যখন বলে এত সুন্দর কাঞ্জিভরমটা কোথায় পেলি, আমি আড়চোখে দেখে নিতাম খুশিতে তাঁর মুখও ঝলমলিয়ে উঠেছে ।

5f946c2811e0c.jpg

ধরমাভরম

আমার আলমারির সিংহভাগ শাড়িই আমার মানুষটির পছন্দের । আর সেই পছন্দে একশত ভাগ পছন্দে আমিও জড়িয়ে থাকি ।

তাঁরই উৎসাহে প্রতিবার পুজোর শাড়ি কিনতে আমরা কলিকাতা চলে যেতাম ।

এইবার কাল করোনার কারণে ঘর ছেড়ে বেরুনো মুশকিল । তবু মুখ ঢেকে গৌহাটির বানিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ফাঁসি বাজারে কয়েকবার ঢুঁ মারা হইল বৈকি ।

5f94740b5b727.jpg

বালুচরি

আমি সব ধরণের শাড়ি ভালোবাসি ।সিল্ক শাড়ির সাথে আর কিছুর তুলনা করা যায় না। যেহেতু সব রমণীর পছন্দ ও ভালোবাসা শাড়িকে ঘিরে । য ত মিহি সুতার নরম সিল্কের কাপড়ের ওপর জরির সুতা দিয়ে নিখুঁতভাবে তৈরি হয় বেনারসি শাড়ি। যার মাঝে লুকিয়ে থাকে নববধূর স্বপ্ন আর ভালোবাসা। বিয়ের আয়োজনে যেকোনো ধর্মে হোক, শাড়ি যে শুধু কনে পরে তা কিন্তু নয়, মোটামুটি বিয়ের বাড়ির সব মেয়েই শাড়ি পরে। কিশোরী থেকে যুবতী, যার শরীরে ঘিরে থাকে বারো হাত শাড়ি, তাকে দেখে দৃষ্টি থমকে দাঁড়ায়।

5f94dc8ec2f8a.jpg

মাইশোর সিল্ক

আমার শাড়িরা আমার সন্তানের মতোই পরম স্নেহে লালিত পালিত হয় । আমার শাড়ির ভান্ডারে রয়েছে ,-- হরেক রকম

বেনারসি ,বালুচরি, বোম্বকাই,, স্বর্ণ কাতান , স্বর্ণ চুরি , কাঞ্জিভরম, মাইশোর সিল্ক, সম্বলপুরী, পিওর সিল্ক, ঘিচা, মধুবনী, আসামের মুগা সিল্ক ইত্যাদিতে । আলমারি শোভা বাড়িয়েছে সিল্কের বিচিত্র কালেকশনে ।

5f94746bbabb2.jpg

ব্রোকেট কাঞ্জিভরম

বেনারসিতে রয়েছে আভিজাত্যের পরিচয় । বেনারসি আমার প্রিয় শাড়িদের মধ্যে একটি । বেনারসিও বহুপ্রকার । আমার পছন্দ কড়িয়াল ও জামেভার ।

কাঞ্জিভরম

দক্ষিণ ভারতের একক অনন্যসাধারণ শৈলী কাঞ্জিভরম সিল্ক । নানা রঙের কাঞ্জিভরম আমার অঙ্গের শোভা । মাইশোর সিল্ক তো অনন্য এক সৃষ্টি । অন্যান্য প্রদেশের রেশম থেকে সামান্য আলাদা ।

5f94dda47e59d.jpg

আসামের মুগা সিল্ক

আমি সিল্ক ভালোবাসি । বাজার চলতি ফ্যান্সি শাড়িতে মন টানে না । শিফন বা ক্রেপ সেই অর্থে ভালোবাসি না । সিল্কের মোহহয় রেশমের স্পর্শে মন ভরে থাকে কানায় কানায় ।বারো হাত লম্বা একটি সেলাইবিহীন কাপড়কে সুকৌশলে নিখুঁতভাবে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার শৈল্পিক সৌন্দর্য শুধু বাঙালি নারীরাই জানে। আবার এই বিশাল কাপড় শরীরে জড়িয়ে সব কাজ করার ক্ষমতা শুধু নারী মানে বাঙালি নারীরাই জানে।