বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

মেমসাহেবের স্কুল


আজ কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বীথি চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। অন্যদেশ পরিবারের এই স্বজন কে অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।


শ্বশুরবাড়িতে ছাদে ওঠার অনুমতি নেই স্বর্ণমণির। বাইরে কোনও কুটুম্ব পরিজনের বাড়ি যেতে হলে গলা অবধি ঘোমটা দিয়ে পর্দা ঢাকা গাড়ি করে যাওয়া আসা। শহর থেকে বহুদূরে একটি গ্রামে মাটির বাড়িতে থাকত সে। এখন শ্বশুর বাড়ির জানলা দিয়ে কলকাতা শহরকে দেখেই সে অবাক হয়ে থাকে। কত বড় বড় বাঁধানো রাস্তা, রাস্তার দুপাশে কী সুন্দর আলো। এগুলোকে নাকি গ্যাসবাতি বলে। কত বড় বড় বাড়ি! কী বড় বড় ঘর। ঘরের সঙ্গে পাকা শৌচ। বড় চৌবাচ্চা। শ্বশুর বাড়ি এসে থেকে সে রোজ খুব যত্ন নিয়ে স্নান করে। স্বামীর সঙ্গে মাঝেমাঝে দেখা হয় স্বর্ণমণির। সকালে হাতে আতর মেখে তিনি বেরিয়ে যান আর অনেক রাতে হাতে জুঁই ফুলের গোড়ে মালা জড়িয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফেরেন। তবে যখন স্বর্ণমণির কাছে থাকেন তখন মানুষটি তাকে ভালোইবাসেন। স্ত্রীকে দামি দামি আতর, বিলিতি পারফিউম কিনে দেন গুণেন্দ্রনারায়ণ। তিনি স্বর্ণমণিকে বারণ করেছেন এ বাড়ির লোককে স্বর্ণমণি যেন ঘুণাক্ষরে না জানায় যে গুণেন্দ্র তাকে ভালবেসে কী কী উপহার দিয়েছে। স্বর্ণ ভয় পেয়ে তাই তার স্বামীর দেওয়া বিলিতি গন্ধ মাখেনা, শিশিটা বাপের বাড়ি থেকে অানা ট্রাঙ্কের নিচে লুকিয়ে রেখেছে। শ্বশুর বাড়িকে খুব ভয় পায় স্বর্ণমণি। এরা যদি রেগে গিয়ে কখনও তাকে দূর করে দেয়, তার কী হবে?

সে খুব ভাল আছে তার শ্বশুরবাড়িতে। তাকে এবাড়ির লোক কুন্তলীন তেল কিনে দেয়। কত সুন্দর সুন্দর শাড়ি তার। ছেলেরা বেরিয়ে গেলে রোজ বাড়ি ঢোকে এক কাপড়উলি। ছেলেরা কেউ তার কথা জানেইনা। রং বেরঙের জরিপাড় তাঁত, ঢাকাই, মসলিন সে নিয়ে অাসে। স্বর্ণমণিরও ভাগ্যে জোটে দু- একটা। শাড়ি ছাড়াও সে অানে সুন্দরী হবার নানা রকম জড়িবুটি, মোটা হবার ওষুধ, রোগা হবার ওষুধ, এমন কত কী। এমনকি স্বামী যদি ভাল না বাসে তারও ওষুধ অাছে ক্ষমা বলে এই কাপড়উলির কাছে। সে ওষুধ অবশ্যি দরকার পড়েনা স্বর্ণমণির। তবে রং ফর্সা করবার ওষুধে তার খুব ঝোঁক। শ্বাশুড়ির সামনে ভয়ে সে মুখফুটে বলতে পারেনা যদিও। কিন্তু তার বড়ো সাধ -- যে সে টকটকে ফর্সা হবে। তার রং আর পাঁচটা বাঙালি মেয়েরই মতো কিন্তু এবাড়ির গোলাপদিদির গায়ে যেমন সাদা ময়দার মত রং তেমন হতে খুব ইচ্ছে করে স্বর্ণমণির। তবে যতই সুন্দর আর ফর্সা হোক, গোলাপদিদি তো তাদের মত চুল রেখে, রঙিন শাড়ি পরে সাজতে পারবেনা। গোলাপদিদি এ বাড়ির মেয়ে। বিধবা হবার পর শ্বশুরবাড়ির লোক কাশী পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল ওকে। স্বর্ণমণির শাশুড়ি কান্নাকাটি করে শ্বশুরের হাতে পায়ে ধরে নিজের মেয়েকে বাড়িতে এনে তুলেছেন। এসব স্বর্ণমণি শুনেছে তার জায়েদের মুখে। তার বড় জা লক্ষ্মীরাণি তো প্রায়ই বলে গোলপদিদির জন্যে বাড়িতে অকল্যাণ হবে। বিধবা কখনও গেরস্ত বাড়িতে পুষতে নেই। মুখ দেখলে অমঙ্গল। অপয়া। বিধবারা সত্যি অপয়া কিনা স্বর্ণমণি জানেনা তবে তার ভয় করে যদি সত্যি গোলাপদির জন্যে তার স্বামীর কোনও ক্ষতি হয়। মা ঠাকুমার মত চোদ্দ বছরের স্বর্ণমণি নিজের হাত দুটো জোড় করে কপালে ঠেকায়। রক্ষা করো ঠাকুর। নিজের কোনও ক্ষতি হবে ভাবলেও কেঁপে ওঠে স্বর্ণমণি। সে ভাল আছে। মাথার তেল, সোনার গয়না, নতুন শাড়ি, পেট ভরে খাওয়া ছাড়া আর কী চাই তার? জানলার ধারে মাঝেমাঝে দাঁড়িয়ে বাইরে রাস্তা দেখলেও কেউ অাপত্তি করেনা এ-বাড়িতে। সেদিন রবিবার; ভালমন্দ রান্না হয়েছে। ছেলেদের খাইয়েদাইয়ে মেয়েদের খেতে খেতে অনেকবেলা হয়ে গিয়েছে। একখিলি পান মুখে দিয়ে জানলার সামনে সবে দাঁড়িয়েছে স্বর্ণমণি। তার স্বামী পালঙ্কের ওপর ঘুমোচ্ছে চিত হয়ে। নিচে সদর দরজায় কে কড়া নাড়ল। এ-সময় কে এল? রবিবারে তো কোনও বাসনউলি, কাপড়উলি এ বাড়িতে আসেনা। গরাদের ফাঁক দিয়ে মাথা নিচু করল স্বর্ণমণি। লম্বা সাদা জামা পরা একটা মেয়ে নিচে দাঁড়িয়ে। মাথার চুলগুলো সোনালি। চুলগুলো অাবার চুড়ো করে মাথার ওপর বেঁধেছে বোস্টুমীদের মত। যতটা ঝুঁকে দেখা যায় স্বর্নমণি দেখল। তার ইচ্ছে করল একছুটে নিচে গিয়ে ভাল করে ব্যাপারটা দেখতে। কিন্তু সে জানলা থেকে সরলনা। দরজা খুলেছেন তার শ্বশুর মশাই ধর্মনারায়ণ। শ্বশুরের সামনে এখন দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ানোর কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। ধর্মনারায়ণ কথা বলছেন মেয়েটির সঙ্গে। কী কথা হচ্ছে তা চেষ্টা করেও শুনতে পেলনা স্বর্ণমণি । একটু পরে বেশ জোরে শব্দ করে দরজা বন্ধ করলেন ধর্মনারায়ণ। স্বর্ণমনি দেখল মেয়েটা তখনও দরজায় দাঁড়িয়ে। একবার ওপরে মুখ তুলে তাকাল মেয়েটা। কী ফর্সা মেয়েটার মুখটা। মেম নাকি! সে তাদের গ্রামে দ-ুবার মেম দেখেছে। কিন্তু এই মেমটা তাদের থেকে বেশি সুন্দর। মেমটা কেন এলো তাদের বাড়িতে? ধর্মনারায়ণ গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে স্বর্ণমণির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে, চিৎকার করে নিজের ছেলেকে ডাকলেন। ''গুনেন? অ্যাই গুনেন? চিত হয়ে মৌজ করে শুয়ে অাছিস বাবা? গতর নাড়িয়ে দ্যাখ বাড়ির কী সব্বনাশ হচ্ছিল।" গুনেন ধড়ফড় করে উঠে ধুতিটা কোনও রকমে কোমরে জড়িয়ে চেঁচাল, "ডাকাত, ডাকাত। বাঁচাও।" গুণেন্দ্রর সদ্য ঘুমভাঙা চোখে মুখে আতঙ্ক। বাড়ির অন্য মেয়ে পুরুষ ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। শুরু হয়েছে প্রবল চেঁচামেচি। কিন্তু স্বর্ণমণি যাকে দেখেছে সেতো ডাকাত নয়। দোহারা চেহারার এক মেম। তাহলে কী এমন হল!

বিকেলে শ্বশুরমশাই তাঁর বাড়ির নিচের দালানে পাড়ার পুরুষদের নিয়ে বৈঠক ডাকলেন। মেয়েরা সেখানে অবশ্যই যাবেনা। বৈঠকের কারণ অাজকের এই মেম নারী। স্বর্ণমণি শুনল ওই সুন্দর মতোন মেম মেয়েটা নাকি এ পাড়ার সব কটা বাড়িতে গিয়েছে। তার শাশুড়ি কমললতা ছি ছি করছিলেন। কমললতা কপালে করাঘাত করে বললেন, "যে বাড়িতে সমত্থ মেয়েমানুষ রয়েচে সেখানেই হানা দিচ্ছে ডাইনিটা। মেয়েগুলোকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাবে। অলুক্ষুণে ইস্কুল করেছে একটা। মাগো রাক্ষুসি। লেখাপড়া শিখিয়ে পথে নামাবে ভদ্র বাড়ির বউ ঝিদের।" তার জা লক্ষ্মীরাণি হাসে, "রাঁড় বানাবে গো, রাস্তার রাঁড় বানাবে। বলি নাহলে লেখাপড়া শিকে মেয়েমানুষ করবে কী শুনি। এই মেমটা কায়দা শেখাবে গো, কায়দা।" লক্ষীরাণি হেসে ঢলে পড়ে, "চিৎপুরের রাঁড়গুলো কত কায়দা শেখে নইলে কী এমনি এমনি ব্যাটাছেলেরা ওদের গয়না দেয়, থ্যাটার করার টাকা দেয়?"

স্বর্ণমণি মেমটাকে একবার দেখেছে। কেন জানেনা স্বর্নমণির মেমটাকে নিয়ে লক্ষ্মীরাণির নোংরা নোংরা কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে করলনা। মেমটাকে দেখলেই ভাল লাগে। কেন ভাল লাগে তা স্বর্ণমণি জানেনা। তবে স্বর্ণমণি ভেবে পায়না মেমটা শুধু শুধু ভদ্র বাড়ির বউ ঝিদের ইস্কুল খুলতে গেল কেন? সে গ্রামে তার দাদাদের পাঠশালায় যেতে দেখেছে, সে জানে লেখাপড়া শিখতে বড্ড কষ্ট। তার দাদাকে পড়া না পারলে বেত দিয়ে পেটাত গুরুমশাই। মেয়েদের কত সুখ। মেয়েদের কোনও পাঠশালা নেই, গুরুমশাই নেই, বেতের বাড়ি খাওয়া নেই। তাছাড়া লেখাপড়া শিখলে মেয়েদের বর মরে। কোন মেয়ে চাইবে তার বর মরুক। রক্ষে করো। মেমটা পড়াশোনা শেখাতে এসে ঠিক করেনি। আজ পাড়ার বয়স্ক পুরুষরা সারা সন্ধে শুধু মেমটাকে নিয়েই কথা বলেছে। পুরুষরা খুব চিন্তা করছে ব্যাপারটা নিয়ে। রাতের অন্ধকারে মেমটা আবার কারুর বাড়িতে চোরের মত ঢুকবে নাতো? পাড়ার ছেলেরা লাঠি নিয়ে আজ পাড়া পাহারা দেবে। ঢুকুক ফিরিঙ্গি মেয়েছেলেটা। পাড়ার ছেলেরা লাঠি আর লম্ফ নিয়ে তৈরি। কিন্তু রাতে মেমটা আসেনা, সে দিনেই আসে। পাড়ার ছেলেরা তাকে লাঠির বাড়ি মেরে ঠান্ডা করবে সে উপায়ও নেই। মেমসাহেবকে মারলে যদি ব্রিটিশ সরকার পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দেয়। লাল পাগড়ি পুলিশকে যে খুব ভয় করে ছেলেরা। মেমটাকে ছাদ থেকে জুতো দেখানো হয়। জানলা দিয়ে ঝাঁটা দেখানো হয় তবু মেমটা আসে। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে হাতজোড় করে। স্বর্ণমণির বিরক্ত লাগে এখন। মেমটার কী খেয়েদেয়ে কোনও কাজ নেই? ওতো মেম, তাই ও জানেনা লেখাপড়া করলে এয়োতি মেয়েরা বিধবা হয়, আইবুড়ো মেয়েদের বর জোটেনা। এখন মেমটাকে নিয়ে শ্বাশুড়ি জায়েদের সঙ্গে স্বর্ণমণিও ফোড়ন কাটে। পাড়ায় এখন একটাই কথা দিনরাত। কেউ বলে রোগ ছড়াতে আসছে। কেউ বলে ডাইনি, তবে বেশির ভাগ লোকই বলে ভদ্রবাড়ির মেয়েদের নষ্ট করতে আসছে। মেয়েগুলোর মাথা খেয়ে তারপর রাস্তায় নামাবে।

ঠিক হোল মেমটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। আগের দিন রাত থেকে সারা পাড়ার সব কটা বাড়িতে পচা ডিম, মাছের নাড়িভুঁড়ি, নোংরা জল বালতিতে রেখে দিয়েছে সকলে। পরের দিন যেই না মেমটা একটা বাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছে ওমনি ওপর থেকে হড়হড় করে বাড়ির লোক ঢেলে দিল নোংরা জল। মেমটা একটু শিউরে উঠল প্রথমে। মেয়েরা হেসে এ ওর গায়ে সে তার গায়ে গড়িয়ে পড়ল। কিন্তু কী আশ্চর্য মেমটা আবার পরের বাড়িতে কড়া নাড়ল। সেখানেও তার মাথায় ঢালা হল জঞ্জাল। মেমটা থামলনা। পরের পর বাড়িতে কড়া নাড়তে লাগল। সবার নোংরা জল ফুরিয়ে গেল। মেম পাড়া ছেড়ে গেলনা। স্বর্ণমণির বিধবা ননদ গোলাপসুন্দরী হঠাৎ ছুটে নিচে নেমে সদর দরজা খুলে মেমেটাকে বলল - আমি ইস্কুলে যেতে চাই। আমাকে নেবে? এ জীবন যে আর আমার আর সহ্য হয়না। সারা পাড়া সেদিন রাগে দুঃখে অপমানে ফুঁসতে ফুঁসতে চুপ করে রইল। এক বৃদ্ধা দাসী আর লক্ষ্মীরাণি ছুটে এসে চুলের মুঠি ধরে বাড়ির ভিতর টেনে আনল গোলাপসুন্দরীকে।

পরদিন স্বর্ণমণির শ্বাশুড়ি আছাড়ি পিছাড়ি হয়ে কান্না শুরু করলেন। স্বর্ণমণির শ্বশুর ধর্মনারায়ণ ঠিক করছেন নিজের মেয়ে গোলাপসুন্দরীকে কাশীতে রেখে আসবেন। তাঁর নিজের বাড়িতে, এই মেয়ের যে বেলেল্লা তিনি দেখেছেন তাতে তাঁকে এই প্রায়শ্চিত্য করতেই হবে।

পরদিন তখনও সকলে ঘুমোচ্ছে গোলাপসুন্দরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ভোর রাতে। সকালে সারা পাড়া যখন গোলাপকে খুঁজছে তখন তাকে নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল সেই মেম। আজকে তার সঙ্গে আরও দুজন মেমসাহেব আর একজন শাড়ি পরা বাঙালি মহিলা। সেই মেমসাহেবটি সেদিন প্রথম জোরে কথা বলল। দোতলার জানলা দিয়ে সেকথা শুনতে পেল স্বর্ণমণি। মেমসাহেব বলল, আমি নিবেদিতা,যুগপুরুষ রামকৃষ্ণ আমার আদর্শ। স্বামী বিবেকানন্দ আমার গুরু। আমি আমার গুরুর নির্দেশে এদেশের মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবার কাজ করছি। আপনারা আমাকে মেরে ফেলুন তবু আমি এখান থেকে যাবনা। আমার সঙ্গে রয়েছেন আমার দুই আমেরিকান বান্ধবী আর জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের বিদূষী কন্যা সরলাদেবী চৌধুরাণী। গোলাপসুন্দরী কোনও দোষ করেনি। সে শুধু পড়তে চেয়েছে। সে বুঝেছে পড়াশোনা না শেখার অভিশাপ। শুধু গোলাপ সুন্দরী নয় এপাড়ার আরও দশজন মেয়ে লুকিয়ে আমাকে জানিয়েছে তারা পড়তে চায়। যারা পড়তে চায় তাদের আমি পড়াবোই। দরকার হলে সারাদিন রাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকব তবু বাড়ির মেয়েদের ইস্কুলে অামি নিয়ে যাবোই।

নিবেদিতাকে কোনওভাবেই সেই পাড়া থেকে সরানো যায়নি। দিনের পর দিন তিনি বাড়ি বাড়ি ঘুরেছেন। একদিন মাথা ঘোমটায় ঢেকে তাঁর ইস্কুলে গিয়েছে গোলাপসুন্দরী। কারণ পাড়াটা আস্তে আস্তে বদলে যেতে শুরু করেছে। স্বর্ণমণির স্বামী গুণেন্দ্রনারায়ণ ভোগী পুরুষ হলেও নির্দয় নন তিনি কিছুতেই তাঁর বোন গোলাপকে কাশী যেতে দিতে চাননি। এদিকে গোলাপও অনড় নিবেদিতা বলে ওই মেমসাহেবের ইস্কুলে সে যাবেই। একদিন গুণেন্দ্র নিজে গোলাপকে ইস্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসেছে। স্বর্ণমণি দ্যাখে গোলাপ রোজ পড়তে বসে। নামতা। প্রথমভাগ। শব্দরূপ। কথামালা। রাইমস। শাশুড়ি কমললতাকে গোলাপ কথামালার গল্প পড়ে বলে দুপুরে। স্বর্ণমণিও শোনে বসে বসে। শাশুড়ি গর্ব করে বলেন, "মেয়ের অামার ভারি মাথা। মেয়ে প্রমোশন পেয়েছে গো, প্রমোশন।" লক্ষ্মীরাণি রাগ করে। বাড়ির মেয়েরা এখন গোলাপের কাছে রোজ তার ইস্কুলের গল্প শোনে। শ্বশুর ধর্মনারায়ণ কিছুদিন যাবত শয্যাশায়ী। বাড়ির কড়া পরিবেশ এখন অনেকটা শিথিল। স্বর্ণমণি দ-ুমাসের সন্তান সম্ভবা। সে মাঝে মাঝে গোলাপের বইগুলো উল্টে দ্যাখে। নিজের স্বামীকে সে বলে রেখেছে তার মেয়ে হলে সে কিন্তু মেয়েকে পড়াবে। নিবেদিতা নামে ওই মেমসাহেবের ইস্কুল তো তাদের বাড়ির পাঁচটা বাড়ি পরেই।




.