শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

প্রসঙ্গ ‘এন-আর-সি’ : কিছু কথা, কিছু জিজ্ঞাসা..,অন্তিম ভাগ


রাজ পরিবারের অন্দরেই ব্যবহৃত হতো বাংলা। তখন থেকেই বাংলা ভাষাকে নিজস্ব মান্য ভাষা হিসেবেই গন্য করা হত সেখানে।ত্রিপুরি রাজবংশের ঘটনাপঞ্জি(ইতিহাস) ‘রাজমালা’ তো লেখা হয়েছিল বাংলা পদ্যে,পঞ্চদশ শতাব্দীতে ধর্ম মানিক্য ১-এর শাসনকালে। এই ধারা চলে এসেছে শেষ রাজা কিরীট প্রদ্যোত দেব বর্মণের যুগ পর্যন্ত (১৯৭৮-- )।(যদিও ১৯৪৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ত্রিপুরা রাজ্য (রাজবংশ শাসিত) মিশে যায় স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। সেই সময়ের শেষ রাজা অর্থাৎ মাণিক্য ছিলেন কিরীট বিক্রমকিশোর মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মণ। ) তো, ওই ত্রয়োদশ শতাব্দীর বহু আগে থেকেই রাজানুকূল্যে বাঙালিরা বসবাস করে আসছেন এই ত্রিপুরায়।ত্রিপুরি রাজবংশের সময়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে বাঙালির গমনাগমন বা প্রব্রজন স্বীকৃত ছিল । রাজপরিবার বা টিপরা জনগোষ্ঠী টিপরা-বাঙালি বিভেদ কখনো কল্পনাই করতে

পারেনি।কারণ বাংলা ভাষাটি রাজভাষা(সরকারি) ও যোগাযোগকারী ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল অনেক আগে থেকেই।পরবর্তী কালে ভারতে অন্তর্ভুক্তির পর প্রথম ইংরেজি,দ্বিতীয় বাংলা এবং তৃতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে ধার্য করা হয়েছে টিপরা অর্থাৎ ককবরক ভাষাকেই ।তো, আদিকাল থেকেই রাজ্যটির বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে জড়িয়ে পড়েছেন ও পড়ছেন টিপরা ও বাঙালি উভয়েই, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।হ্যাঁ, দেশভাগ ও বাংলাদেশ যুদ্ধজনিত কারণে ত্রিপুরায় কিছু পরিমাণে প্রব্রজন ঘটেছে সত্যি।এটি একটি জাতীয় সমস্যা। বিশ্ব-রাজনীতির নিরিখে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে।তবে, এই প্রব্রজনে ত্রিপুরার উন্নয়নে কোনও ক্ষতি সাধন হয়নি। কিন্তু ন্যস্ত স্বার্থ এটিকে নিয়ে বিভেদের রাজনীতি করেছে।হানাহানিতেও প্ররোচিত করেছে।এই বিভেদ,এই হানাহানির রাজনীতি বাড়ায় সমস্যা, বাড়ায় অশান্তি, বাড়ায় রক্তপাত,যা কখনোই সুপথ দেখাতে সাহায্য করে না,অমঙ্গলকর। কিন্তু ওই একদল ভণ্ড মুখোশধারী, সর্ব যুগেই যাদের অবস্থান খুঁজে নিতে অসুবিধে হয় না, এই সমস্যা, এই বিভেদ, এই অশান্তি জিইয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর হয়, তাদের ক্ষমতা ভোগ করার যাবতীয় কায়েমি স্বার্থের খাতিরেই। আচ্ছা, অসমের (ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা) আসল খিলঞ্জিয়া যারা, এই যেমন মরান, বরাহি,কেওট,কছারি,মিছিং,আহোম ইত্যাদি , যাদের নিয়ে মিশ্র প্রক্রিয়ায় অসমিয়া জাতিটি গড়ে উঠেছে এবং উঠছে , তাদের অস্তিত্বকে দেখছি আবার চাগাড় দেওয়া হচ্ছে জনজাতি হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ! ভোট পাওয়ার আশায় কি? বোড়োরা তো ইতিমধ্যে আলাদা অস্তিত্ব নিয়েই ফেলেছে। এতে করে অসমিয়া জাতিটির পরিসর ক্রমশ কমে আসবে না কি? এ নিয়ে কেনই বা প্রতিবাদ উঠছে না !? যত দোষ নন্দ ঘোষ অর্থাৎ বাঙালিদের !?বাঙালিদের ওপরই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে অসমিয়া হয়ে যাওয়ার জন্য! অথচ যেসব ছোটো ছোটো জাতি- উপজাতিগুলি দিয়ে বৃহত্তর অসমিয়া জাতিটি ইতিমধ্যে সম্প্রসারিত হয়ে উঠেছে ওগুলি যে নিজস্ব পরিচিতি পেতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সে দিকে দৃষ্টি নেই কেন!?কেনইবা ওগুলি নিজস্ব পরিচিতি পেতে চাইছে, ও-নিয়ে সরেজমিনে তদন্তের প্রয়োজন নেই কি? এই বাঙালিদের নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করতে হবে। শুধু রাজনীতি নয়, নির্মম রাজনীতি। হত্যার রাজনীতি। যে দলেরই পাল্লা ভারী থাকে ওরা অসহায় বাঙালিদের বলির পাঁঠা করে।সন্ত্রস্ত করে তোলে বাঙালি জনজীবনকে। সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তো ওদেরকে নিয়ে আর রাজনীতি (বলির পাঁঠা ) করা যাবে না। ধলায়

যে পাঁচ বাঙালির হত্যা হল সেটা তো নির্মম রাজনৈতিক হত্যা। এরা তো সবাই ভারতীয়। অসমিয়া সাহিত্য- সংস্কৃতিকে ইতিমধ্যে এরা গ্রহণ করে ফেলেছে। এঁদের মৃত্যুর কূলকিনারা আজও পাওয়া গেল না কেন? কারা হত্যাকারী? সবই রহস্য!? ‘এন-আর-সি’ কে কেন্দ্র করে চলছে বাঙালিদের ওপর হয়রানি। শাসকদল তো দেখছি আবার বাঙালি হিন্দুদের পক্ষে শোরগোল জুড়ে দিয়েছে । অথচ, ‘এন-আর-সি’র ট্রাইব্যুনালে হেনস্তা হচ্ছে বাঙালি হিন্দুরাই বেশি, যোগ্য নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও। ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী হচ্ছে হিন্দুরাই বেশি। অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করছে হিন্দুরাই বেশি ! ভেতরে ভেতরে কী যে রাজনীতি হচ্ছে।!! কুটিল ভোট-রাজনীতি।

সমাপ্ত