শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

ডিব্রুগড়ের কচুশাক বিক্রেতা থেকে মোদীর মন্ত্রীসভায়

খাবারের জোগাড় করতে এক সময় জঙ্গল থেকে কচু ও ঢেকি শাক তুলে আনতে হত। বাজারে বিক্রি করে হাতেগোনা যা পয়সা পেতেন সেটা দিয়েই মিলেমিশে ভাগ করে খাবার খেতেন। আর সেই ছেলেটিই এবার স্থান করে নিলেন নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায়।

তিনি রামেশ্বর তেলি। ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা রামেশ্বর মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছেন এ বার। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে আসমের এই এমপিকেই বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

রামেশ্বর তেলির ছোটবেলা খুব অভাবের মধ্যে কেটেছে। বাবা ছিলেন চা শ্রমিক। আসামের ডিব্রুগড়ের চা বাগানেই ছোট্ট ঘরে ভাই, দুই বোন নিয়ে মোট ৬ জনের বাস। বাবার টাকায় ঠিকমতো খাবারও জুটত না তাদের। রামেশ্বরের বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। তখন থেকেই নিজেদের খাবার খরচ নিজেই উপার্জন করতে শুরু করেন। দু’বছরের ছোট ভাই গুণেশ্বরকে সাথে নিয়ে রোজ আশেপাশের জঙ্গল চষে বেড়াতেন। সঙ্গে করে কচু আর ঢেকি শাক নিয়ে ফিরতেন। সেগুলোই বিক্রি করে রুটি কেনার পয়সা জোগাড় করতেন।

বাবার মৃত্যুর পর তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। মা, ভাই ও দুই বোনের সংসারের হাল ধরতে হয় রামেশ্বর তেলিকে। তাই পড়াশোনা বেশি করা হয়নি।

রোজগারের জন্য বাড়ির কাছেই একটি পানের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে যা উপার্জন হতো তাতে সংসার চলত। একটু একটু করে সেই টাকা জমিয়ে দুই বোনের বিয়েও দেন।

কলেজে পড়ার সময় রামেশ্বর তেলি আসমের চা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থা (আটসা)য় যোগ দেন। আটসা নেতা তেলির জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে বিজেপি নেতাদের। ২০০১ সালে দুলিয়াজান থেকে বিজেপির হয়ে রাজ্য বিধানসভার এমপি হন নির্বাচিত রামেশ্বর। ২০০৬ সালেও জেতেন ভোটে হন। তবে ২০১১ সালে হেরে যান; কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপির টিকেটে প্রার্থী হন লোকসভার নির্বাচনে। কংগ্রেসের পাঁচ বারের এমপি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে তাক লাগান তিনি।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে পবনসিংহই তার প্রতিপক্ষ ছিলেন। ২০১৪ থেকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে এবার তাকে ৩ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়েছেন রামেশ্বর। যা আসমের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধান। বিপুল জনভোট, রামেশ্বরের জনপ্রিয়তার জন্যই তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করেন মোদী।

কচু, ঢেকি শাক বা পানের দোকান— এগুলোর আর কোনওটাই তাকে এখন চালাতে হয় না। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংসারের অভাবও আর তেমনটা নেই। তবে রামেশ্বরের জীবনযাপন কিন্তু তেমনটাই রয়েছে। তার মা, ভাই এখনও চা বাগানের সেই দরমার ঘরেই থাকেন। রাজনীতির কাজে বাড়িতে খুব বেশি থাকতে পারেন না রামেশ্বর। তবে বাড়ি ফিরলে এই দরমার ঘরই তার আস্তানা।
রামেশ্বরের এক কাকা এখনও ঠেলা চালান। অন্য এক কাকা গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। আর এক কাকা অটোচালক।

তবে প্রথমে সংসার ও পরে রাজনীতির ঘানি টানতে গিয়ে নিজের কথা এখনও ভেবে উঠতে পারেননি রামেশ্বর। তাই ৪৯ বছর বয়স হলেও নিজের সংসার গোছানো হয়ে ওঠেনি রামেশ্বরের। বৃহস্পতিবারে ছেলেকে শপথ নিতে দেখে গর্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রামেশ্বরের মা। এখন শুধু একটাই ইচ্ছা, রামেশ্বরের বিয়ে। পাত্রী খোঁজাও নাকি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।