শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

গোলাম রসুলের কবিতা

ঘুম নেই

বৃষ্টিকে আমি অভূতপূর্ব সম্মান জানিয়ে কতদিন ভিজেছিলাম জানি না
আর যে শহরটা ডুবে যাচ্ছে তার ওপর ভাসছে সানাইয়ের সুর
দুহাতে ধরা মহান সমুদ্র


আছাড় মারছে হাওয়া
আর বদমায়েশি করছে আমাদের পোতাশ্রয় গুলো


ঘুম নেই
রাত্রিকে আমি চিনতে পারেনি
কসাইখানা
মানুষের হিংসার লালা স্রাবে স্ট্রিট লাইটের আলোগুলো তৈরি করেছে পরপর দূর্গ


জমে যাওয়া বদ রক্ত এই শহর


পিশাচ সন্ধ্যা নেমেছিলো
ধর্মহীন সিঁড়িতে বসে গান গেয়েছিলো আমার হৃদয়
যখন গলি গুলো চরে বেড়াচ্ছিল উদাসীন


বড় খারাপ সময়
কলাগাছ রাজনৈতিক দল মনে করিয়ে দিলো একবার ঈশ্বরকে


মিছিল চলে গেলো
রাস্তায় এখনো ধোওয়া কাচা হচ্ছে আশা


রাজপ্রাসাদ ও কাঁদছে


কাকের দেহ রেখায় অন্ধকার
রাত্রির মধ্যভাগে পেতলের চাঁদ
ঘন্টা বাজছে হাঁটুর ভেতরে
একটাও হাড় আস্ত নেই


কতদিন আমি বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম মনে নেই

--------------------


স্তম্ভের সিঁড়ির ওপর

সে রাত্রিতে অনেক রক্ত মাখা রুমাল দেখেছিলাম আকাশে
নক্ষত্রের আলো ভেবে নিভিয়ে দিয়েছিলাম আমার হৃদয়
বুকের ভেতরের জল ঘুমের থেকে ও নিশাচর ছিলো

আমার মেরুদন্ড দিয়ে একটি ভাঙা গাড়ি যাতায়াত করছিলো

উঠোনে প্রাচীন মরুভূমি
রুক্ষ মেঘের ছায়া
মেষ পালকের রাগ
জীবন যেমন হয়

চাঁদ তখন একটি আহত শিশুর দেহ

অন্ধকার যুগ
অব্যবহৃত কুয়ো
আর পুরোনো হয়ে আসা মানুষের শরীর

যুদ্ধের পরবর্তী অংশ
আয়নার আত্মা
কিছু লেখার জন্য আমি আঙুল ডুবিয়ে নিচ্ছিলাম সমুদ্রে
এমন ছিলো আমাদের ভাগ্য


তারপর অভূতপূর্ব বৃষ্টি


শূন্যের দোতলা ঘর
স্তম্ভের সিঁড়ির ওপর
রোদ পোহাচ্ছে সাপ
দেয়ালে তখন রুদ্ধশ্বাস মৃত্যু



একটি কবরের আলো আমাকে প্রদক্ষিণ করছে অনন্ত কাল
----------------


ধর্মহীন মাঠ


র্ধর্মহীন এই মাঠ
কুয়াশারা এখানে চরে বেড়ায়
আর ঘাসের জন্ম থেকে উদাহরণ তুলে নিয়ে আকাশে নৌকা ভাসায় জন্ম জন্মান্তর



পুঞ্জীভূত ক্ষোভ
আর অনন্ত কান্না
একটা পাঠশালা নেই যে রক্ষা করবে


দিগন্তে একটি নরকের মানচিত্র
নগরীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি
একটি বাজপাখি
উড়ে যাচ্ছে মহাকাল


সন্ধ্যা নামছে
গাছ মন্দির আলো
মানুষের চোখের মতো এক মৌজা জলাভূমি
ওখানে প্রার্থনা রেখে মাটি চাপা দিয়ে গেছে বন্ধুর মতো নির্জন কেউ


প্রাক মধ্যযুগীয় বর্বর হাওয়ায় এখনো ভাসছে কিছু প্রাসাদ
শূন্য বেদী
নদী প্রদক্ষিণ করছে জীবন


অন্ধকার
সূর্য একটি নৈসর্গিক মুখ
দারিদ্র্যের ধারালো অস্ত্রে
নিঃশব্দে কেটে যাচ্ছে পাথর


দুঃখের সাদা
আমি কিছু জানি না যে বোধ
আর নিজে হাতে তৈরি নিজের সমাধি ঘুরে ঘুরে বেড়ায় নিশাচর


আমাকে অনুসরণ করে
ধর্মহীন মাঠ
-----------------


জনতার চাঁদ


শেষ মিছিলে ক্লান্ত পৃথিবীর ছায়া পড়েছে
আর ছায়ায় কিছু রক্ত রয়েছে তাই দেখা যাচ্ছে মানুষের হৃদয়
মাথার ওপরে জনতার চাঁদ
ভাগ্য যেমন হয়

দুশ্চিন্তার কাক
ইলেকট্রিক তার
পোড়া ইটের বাড়ি
আমারা সম্মান জানাচ্ছি নাগরিক সমাজকে

আকাশে কাজ করছে মানুষের একঝাঁক হাত
শ্রমিকের মর্যাদা মেঘ আর পিরামিড আমাদের ভবিষ্যৎ

অন্ধকার মাতাল জলাধার
ব্যবহার করা শব্দের ডাস্টবিন
আর হাই ড্রেনের সুগন্ধ উচ্ছ্বাস
বই পাঠশালা
আট দশটি কথা

টেবিল প্লেট চামচ একটি নক্ষত্র
দিগন্ত পানশালার দেয়াল
পাখির দেহ

ঝোপের ভেতরে তালাচাবি দেওয়া রোম্যান্টিক প্রেম
কল্পনার ভিটে বাড়িতে আলো জ্বলছে
অবশিষ্ট আদিমতার এখনো সেই বাগান
তারপর বৃষ্টির সন্ধ্যা ঠিক একটি নরকের সংস্করণ

নীল মোহনা
নদীগুলো সব ফিরে যাচ্ছে বিরহের দিকে
মিছিলের শেষে ক্লান্ত পৃথিবীর ছায়া পড়েছে

-------------