শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

কথাগুলো বলা হলো না, পর্ব -১৭

১৭

আমার বারণ, ঝিনুকের কান্না, কোনো কিছুই মাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারলো না, সিঁড়ি বেয়ে মা ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেলো, একটা ঘুণপোকা যে মায়ের বুকে বাসা বেঁধেছে সেটা জানতাম কিন্তু মাকে যে তা ভিতর ভিতর এতখানি নিঃস্ব করে তুলেছে সেটা বুঝতে পারিনি। মায়েরা যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক বাদে বাড়ির ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠলো, ঝিনুক এসে জানালো যে আলোককাকুর ফোন।

বাবা, দাদু ফোন করেছে, তোমায় ডেকে দিতে বললেন।

কাকু জানালেন যে মা আর ছবি ঠিকঠাক তাদের নতুন বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছে, খবরটা দিয়ে কাকু থামলেন একটু, একটা কথা বলব বাবু?

বলুন না কাকু।

বলছি কী, আজকালের মধ্যে সময় করে একবার বৌদির সঙ্গে গিয়ে দেখা করো, ওনাকে বোঝাও যে এই বয়সে এভাবে তোমাদের ছেড়ে ওনার একা একা থাকাটা ঠিক হচ্ছে না ...

কিন্তু মা তো কোনো কথা শুনতেই চাইছে না।

জানি, আসলে তোমার মা বড় অভিমানিনী মহিলা, কোনো কারণে এই মুহূর্তে ওনার মনের মধ্যে কোনো একটা অভিমান বাসা বেঁধেছে, যাই হোক, এখন এসব নিয়ে ভাবলে হবে না, যে করেই হোক ওনাকে তোমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে, এই বয়সে ছবির ভরসায় ওনার এই একা একা থাকাটা মোটেই যুক্তি সঙ্গত নয়।

সে তো বুঝি কিন্তু ...

কথা শেষ করতে দেন না কাকু, দেখো বাবু, আমার কী মনে হয় জানো, অভিমান তো আছেই কিন্তু তার সঙ্গে তোমার মায়ের মনে কোথাও যেন একটা বড় শূন্যতারও সৃষ্টি হয়েছে, আর সেই শূন্যতা ওনাকে আরো একা করে দিতে চাইছে যেন।

একটা কথা বলুন, অভিমানের কারণটা নয় বুঝতে পারছি, সেদিন উর্মি মায়ের আর আপনার সঙ্গে যা ব্যবহার করেছে বা ইদানীং ঘরে যেভাবে মাকে উপেক্ষা করছে তাতে মায়ের অভিমান হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এই শূন্যতার কারণটা কী।

ফোনের অপর প্রান্তে কাকু যেন একটা শ্বাস নেন, তোমার মা মানুষটা কিন্তু চিরদিনই ভীষণ একা আর বিশুদার মৃত্যুর পর সেই একাকীত্বটা যেন ওনাকে একদম ঘিরে ধরেছে, নার্সিংহোমে থাকাকালীন একদিন আমায় কী বললেন জানো, আচ্ছা অলোক, বলুন তো, একটা মানুষ যদি বোঝে যে তার জীবন ক্রমশ অর্থহীন হয়ে পড়ছে তাহলে তার তখন কী করা উচিৎ? আমি জিজ্ঞাসা করলাম হঠাৎ এসব কথা কেন, উত্তরে ওনাকে চুপ করে থাকতে দেখে নিজেই আবার জিজ্ঞাসা করলাম, একটা কথা বলো, আসলে তুমি কার জীবন মিন করতে চাইছ?

কী বললো মা আপনাকে?

বললো ধরুন যদি বলি আমার!

আমি তখন বললাম তোমার জীবন আবার অর্থহীন হতে যাবে কেন, উলটে আমার তো মনে হয় চারপাশের এই এত মহিলাদের থেকে তোমার জীবন অনেক অনেক বেশী মিনিংফুল।

সেটা আপনার বোঝার ভুলও তো হতে পারে।

না বোঝার ভুল হবে কেন, একবার ভেবে দেখো তো, তোমার আশেপাশের বেশীরভাগ মহিলারাই জীবন মানে কিন্তু শুধু ঘর গৃহ-স্থলীর কাজ করা আর পরিবার পরিজনের দেখভাল করা, তোমার সেখানে এই সমাজে একটা আলাদা কিন্তু একক পরিচিতি আছে, সঙ্গীত শিল্পী কাজল করকে গানের জগতে সবাই কিন্তু চেনে, এটা কি কম প্রাপ্তি?

অলোক কথাটা মনে হয় আপনাকে আমি ঠিক মত বুঝিয়ে বলতে পারিনি, ফেলে আসা জীবনে সত্যিই আমার একটা পরিচিতি ছিল আর সেই পরিচিতির বেশীরভাগ কৃতিত্বটাই অবশ্য আপনার, আপনিই আমাকে গানের জগতে সবার সামনে নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু এসব আজ অতীত, আমি আজ আমার এই বর্তমান বেঁচে থাকাটা নিয়ে বলছি, একটু ভেবে দেখুন তো, আজকের আমার এই বেঁচে থাকাটা কি একটা জড় পদার্থের মত নয়, আমি কি আজ সংসারে একটা বোঝায় পরিণত হইনি, সংসারের মানুষগুলির কাছে আমি তো আজ একটা সমস্যাই শুধু।

আরো অনেক কথা বলছিল সেদিন তোমার মা, আমি ওনাকে ওনার কথার মাঝে একসময় থামিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, একটা কথা বলো, বাবু বা উর্মি তারা কি তোমায় কখনো বলেছে বা তোমার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করেছে কি যাতে তোমার মনে হচ্ছে বা মনে হয় যে তুমি ওদের একটা সমস্যায় পরিণত হয়েছ।

কী বললো মা?

বললো, না, না, এটা সত্যি যে বাবু বা উর্মি মুখে বা তাদের ব্যবহারে আমি যে ওদের একটা বোঝায় পরিণত হয়েছি সেটা কখনই বোঝানর চেষ্টা করেনি কিন্তু ওরা বলেনি বলেই যে আমাকেও এটা মেনে নিতে হবে তার তো কোনো মানে নেই, অলোক, আমি জানি, আজ আমি এই সংসারে একদম অপ্রয়োজনীয়, সত্যিই ওদের একটা বোঝা, ওরা না পারছে সেই বোঝাটাকে নামাতে না আমি ওদের কোনো হোমে বা যজ্ঞে লাগছি।

কথা ঘোরাতে ওনাকে তারপর আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ঠিক আছে তর্কের খাতিরে না হয় ধরেই নিচ্ছি যে তুমি আজ তোমার ছেলের সংসারে একটা বোঝা কিন্তু এখন তুমি কী করতে চাও?

জানি না, আর সেটাই তো সমস্যা, বুঝতে পারছি না যে কী করা উচিৎ, কখনও মনে হচ্ছে একটু একা থাকলে বোধ হয় ভালো থাকব, এই সংসারের পিছুটান থেকে যদি বেরিয়ে আসতে পারি তাহলে হয়তো জীবনের বাকী কটা দিন নিজের মত করে বাঁচতে পারব।

কথাটা বলা সহজ কিন্তু এই এই বয়সে একা থাকাটা কী তোমার পক্ষে আদৌ সম্ভব?

কেন সম্ভব নয়?

শরীর বা স্বাস্থ্যের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, যতদূর তোমাকে আমি জানি তাতে এটা বলতে পারি যে পরিবার পরিজন ছেড়ে বিশেষত বাবুকে ছেড়ে তুমি দুদিনেই কিন্তু হাঁপিয়ে উঠবে, তার থেকে বলি কী, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে কটা দিন রেস্ট নাও, তারপর কোথাও থেকে একটু ঘুরে এসো, দেখবে তাতে মনটা অনেক শান্ত হবে।

এ তো গেলো একদিনের কথা, আরেকদিন নার্সিংহোমে গিয়ে দেখি তোমার মা এক দৃষ্টিতে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন, তুমি হয়তো খেয়াল করে দেখেছ যে তোমার মা নার্সিংহোমের যে কেবিনটায় ছিল তার জানলার বাইরে একটা পার্ক আছে, ঐ পার্কটায় বিকেলের দিকে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে আসে, তা সেদিন খেলতে আসা বাচ্চাগুলির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে আমায় বললেন, আচ্ছা অলোক, আপনার কখনো ছোটবেলার কথা মনে পড়ে?

আমি বললাম, কেন মনে পড়বে না, ইনফ্যাক্ট ছোটবেলাটা তো আমাদের জীবনের এমনই এক পর্ব যা মানুষ কখনই ভুলতে পারে না বা ভুলতে চায় না, সত্যি কথা বলতে কী মানুষের যত বয়স বাড়ে ছোটবেলার স্মৃতি কিন্তু ততই যেন শিকড় হয়ে মানুষকে জড়িয়ে ধরে।

একদম ঠিক বলেছেন, স্মৃতিগুলি সত্যিই শিকড়ের মত আমাদেরকে পেঁচিয়ে ধরে, নিয়ে যায় যেন একদম মাটির কোলে, জানেন, আজকাল চোখ বন্ধ করলেই ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে, চোখের সামনে সব কিছু যেন একদম সিনেমার মত ভেসে ওঠে, খুব ইচ্ছে করে তখন সময়ের উলটো রথে চড়ে আবার ফিরে যাই সেই জিয়াগঞ্জে, বাবা, সুরোচাচা সবাই যেন ওরা স্মৃতির পর্দায় ফিরে আসে তখন, মনে হয় এই তো আমি স্কুল থেকে ফিরছি, সুরোচাচা ধাবার সামনে এসে বসেছে, বাবা চায়ের গ্লাস হাতে নিয়ে সুরোচাচাকে বলছে, নাও সুরোভাইয়া, চা খেয়ে যশোমতী মাইয়া গানটা একবার ধরো তো, তোমার গলায় গানটা শুনলে মনটা কেমন যেন জুড়িয়ে যায় একেবারে, আমি বাবার কথায় সায় দিয়ে বলে উঠি, হ্যাঁ হ্যাঁ চাচা, আজ কিন্তু আমিও গাইবো তোমার সঙ্গে, সত্যি বলছি অলোক, এই স্মৃতিগুলি আজকাল যেন ভীষণ আমায় তাড়া করে, আর সেই স্মৃতির ভারেই নিজের অজান্তেই আমি কখন যেন আপনাদের সবার থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাই, আপনাদের মাঝে থেকেও তখন নিজেকে যেন আমি একটা দ্বীপে বন্দী করে ফেলি।

কই মা তো আমায় এসব কথা কখনো বলেনি, আচ্ছা কাকু, আপনার কী মনে হয়, আমি যদি গিয়ে মাকে ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে মা ফিরে আসবে?

জানি না কারণ তোমার মা বড় অন্তর্মুখী এক মহিলা, ওনার চারিধারে একটা গণ্ডি কাটা আছে আর সেখানে কারোর প্রবেশ অধিকার নেই, তবে একটা কথা বলতে পারি ওনাকে যদি কেউ ফিরিয়ে আনতে পারে সেটা তুমিই, কারণ তোমায় উনি ভীষণ ভালবাসেন, হয়তো নিজের থেকেও বেশী, তোমার কথা কিন্তু সহজে উনি ফেলতে পারবেন না।






বাবা, মা জিজ্ঞাসা করছে তোমায় খেতে দেবে কি না, ঝিনুক ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঝিনুককে বললাম উর্মিকে গিয়ে যেন বলে আমার খিধে নেই আর ওরা যেন খেয়ে নেয়, মেয়েটা চলে যেতে কিছুক্ষণ বাদে বেডরুম আর ব্যালকনির মাঝের যে দরজাটা আছে তার পর্দা সরিয়ে উর্মি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো।

না খাওয়ার আবার কী হলো!

চুপ করে থাকি, এই মুহূর্তে উর্মির সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে না, ওর কি আজ একবারের জন্যও উচিৎ ছিল না যে মাকে গিয়ে বলা, না মা, আপনি যাবেন না, এই বাড়ি ছেড়ে কিছুতেই আমরা আপনাকে যেতে দেব না ...

কী হলো, একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি তো, নাকি আজকাল আমার কথার উত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করো না, কথাগুলি বলার সময় আজকাল উর্মির চোখে-মুখে আমার জন্য যে অবজ্ঞা লেখা থাকে সেটা যেন এবার ফুটে উঠলো।

কী যেন হয়ে গেলো আমার মাথার মধ্যে, সাধারণত উর্মির এধরনের কথায় আজকাল আমি আর রিঅ্যাক্ট করি না, কিন্তু আজ উর্মির চোখেমুখে লেগে থাকা অবজ্ঞাটাকে ইগনোর করতে পারলাম না, মাথার মধ্যে যেন হঠাৎ করে আগুন জ্বলে উঠলো, চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলাম, সত্যিই যদি তোমার কথার উত্তর দেওয়া প্রয়োজন মনে না করি তাহলে কি তোমার কিছু বলার আছে?

আমার এই প্রত্যাঘাতের জন্য উর্মি হয়তো প্রস্তুত ছিল না, আমার মুখের দিকে তাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো এক মুহূর্তের জন্য আর তারপর স্বভাব সিদ্ধ গলায় বলে উঠলো, বলার আর কী থাকবে, তবে জানা থাকলে ভালো হয়, যেচে যেচে তাহলে আর অপমানিত হতে হয় না।

অপমানটা কে কাকে করছে, সেটা একবার ভেবে দেখেছ?

এই তোমার কী হয়েছে বলো তো, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছ কেন, আর শোনো, তোমার যদি কিছু বলার থাকে না তাহলে সেটা সোজাসুজিই বলবে, আমি তোমাদের মতো অত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতেও পারিও না আর বললে বুঝতেও পারি না।

আচ্ছা উর্মি একটা কথা বলো তো, তোমার কি মনে হয় না যে আজ অন্তত একবারের জন্যও তোমার মাকে গিয়ে বলা উচিৎ ছিল, মা আপনি এ বাড়ি ছেড়ে যাবেন না।

এ তো আচ্ছা মুশকিল! তোমার মাকে কি আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছি যে আমাকে ওনাকে গিয়ে বারণ করতে হবে, আর উনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যে কী না সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন, আমি তো বুঝতে পারছি না যে সেখানে আমার বলা বা না বলায় কী ফারাক!

সত্যি উর্মি! মাঝে মাঝে তুমি এমন বিহেভ করো যে মনে হয় সত্যিই তুমি খুব সহজ সরল স্বভাবের একজন মানুষ যে কী না সংসারের কোনো প্যাঁচ পয়জারই বোঝে না, কী অনায়াসে না বললে, মা নিজের ইচ্ছেয় চলে গিয়েছে! এত বড় মিথ্যে কথাটা কী করে বলতে পারলে তুমি! নিজের বুকে একবার হাত দিয়ে বলো তো, তোমার মনে হয় না যে সেদিন ঘর ভর্তি লোকের সামনে যেভাবে তুমি মাকে অপমান করেছিলে সেই অভিমানেই মা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।

শোনো, একদম ফালতু কথা বলবে না, আর সত্যি সত্যিই যদি সেই কারণে তোমার মা বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তো বলব বেশ হয়েছে, বুড়ো বয়সে এক ভদ্রমহিলা বাইরের লোক ঘরে ডেকে এনে পিরিত মাড়াবে আর তাই দেখেও চুপ করে বসে থাকতে হবে, না, আমি অন্তত সেটা পারব না, উর্মি গলার স্বরটা বদলাতে শুরু করে, উষ্মার সঙ্গে এখন সেখানে সূক্ষ্ম বিদ্রূপও যেন মিশে আছে, আসল কথাটা কী জানো, ওসব অপমান-ফপমান সব ফালতু কথা, শকুনি বুড়োটার এ বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছি না, তাই তোমার মা বাড়ি ভাড়া নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন যাতে বুড়োটাকে ডেকে রাসলীলা করতে পারে, বোঝো না কেন এসব!

উর্মি, প্লিজ ভদ্রভাবে কথা বলো।

আরে রাখো তোমার ভদ্রতা, এবার উর্মির গলার স্বরও চড়ছে, বিয়ের পর থেকে তোমাদের ওসব ভদ্রতা না অনেক দেখেছি, এখন প্লিজ খেতে এসো, আমার ভীষণ খিধে পেয়েছে, সকাল থেকে কিছু খাইনি।

খাওনি কেন, তোমায় খেতে কি কেউ বাড়ন করেছিল?

খাওয়ার আর সময় পেলাম কোথায়, সকাল থেকে তো তোমরা মা-ছেলে মিলে এমন ড্রামা শুরু করলে!

চমৎকার! একটা মানুষ নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো আর তুমি বলছ কী না সেটা একটা ড্রামা! শাবাশ!

ড্রামা নয় তো কি, এক ভদ্রমহিলা মরার বয়সে এসে পৌঁছেছে, সে কী না তার প্রেমের টানে নিজের বাড়ি, নিজের পরিবার সব ছেড়ে অন্য কোথাও চললো, ঠিক আছে, যাও, এই বয়সেও প্রেমের যদি এত কুর-কুরানি থাকে তাহলে আমি বাঁধা দেওয়ার কে, অন্য কোথাও গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে ওসব ঢলাঢলি করতে থাকো, কে বারণ করেছে, কিন্তু তার জন্য আবার অত বড় বড় ডায়লগ দেওয়ার কী আছে ... আমাদের এই সমাজটা এমন ভাবে তৈরি যে এখানে আজও একজন অনাত্মীয় নারী আর পুরুষের সম্পর্ক শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্কে কেউ মেনে নিতে চায় না ... ঠিক যেন বাংলা সিরিয়ালের বুলি আওড়াচ্ছিল, ঝ্যাঁটা মারি অমন মহিলার মুখে, ছেলে বুড়ো হয়ে চুলে পাক ধরে গেলো, আর মা কী না এখনও পর পুরুষের সঙ্গে রঙ্গ করছে...

আবারও বলছি চুপ করো, এবার কিন্তু সত্যিই তুমি লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছ, এরপর...

এরপর, এরপর কী করবে, মারবে? শোনো, তোমার ওসব ধমকি না অন্য কোথাও গিয়ে দিও, আমায় দিতে এসো না, আমাদের কথাগুলি এখন হাওয়ায় ভেসে রাস্তা অবধি পৌঁছচ্ছে, চলমান পথিকেরা অনেকেই ঘাড় উঁচিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে যে আমাদের ব্যালকনিতে ঠিক কী হচ্ছে। এক ঠ্যালায় উর্মিকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে নেই, উর্মির বাঁ হাতটা আমার ডান হাতে ধরা, নিজের হাতটা ছাড়ানোর জন্য উর্মি ঝটকা মারে, ছাড়ো, লাগছে কিন্তু।

জিজ্ঞাসা করেছিলে না এরপর কী করব, আমার ভিতরের ক্রোধটা যেন নিজের অজান্তেই উর্মির হাতের ওপর আমার হাতের চাপটা আরো বাড়িয়ে দেয়।

ককিয়ে ওঠে উর্মি, নিজেকে ছাড়াতে ওর ডান হাতটা দিয়ে আমার বুকে একটা ধাক্কা মারে, মুখে বলতে থাকে, সত্যি কথা বললে না গায়ে অমনিই ফোসকা পড়ে, আরে বাবা যাদের ঘোমটার তলায় অতসব খ্যামটা নাচ থাকে না তাদের মুখে অত বড় বড় কথা বলতে নেই।

উর্মি-ই-ই-ই, চুপ করবে কি না বলো, লাস্ট বার বলছি কিন্তু।

কীসের জন্য চুপ করবো, আর কার ভয়েই বা চুপ করব, লম্পটদের লম্পট বললে তাদের অত চিল্লাতে নেই, চিল্লালে নিজেদেরই মানহানি হয়, আয়নায় গিয়ে বরঞ্চ একবার নিজেদের মুখগুলো দেখো, দেখবে চুনকাম করা চরিত্রদের পলেস্তারাগুলি কেমন খসে-খসে পড়ছে, বুড়ো বয়সে প্রেমের টানে মা কী না চললো ঘর ছেড়ে, এদিকে ছেলে ঘরে বসে তা নিয়ে বৌকে শাসাচ্ছে, আহা-হা! সোনার ফ্যামিলি যেন, একটু থামে উর্মি, বড় করে একটা শ্বাস নেয়, এবার উর্মির গলাটা আবার যেন বদলাতে থাকে, আসলে কী জানো কুশল, তোমাদের ফ্যামিলির রক্তেই দোষ, তুমি, তোমার মা, তোমরা হচ্ছ গিয়ে আসলে সেই দোষেরই শিকার।

আর পারলাম না, সকাল থেকে নিজের কাছে হেরে যাওয়ার ক্ষোভটা যেন আমার ডান হাতের পাঞ্জায় ভর করে উর্মির বাঁ গালের ওপর নেমে এলো। উর্মি ভাবতেই পারেনি যে এভাবে ওর গালে আমি পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দেব, কেমন যেন থতমত খেয়ে গেলো প্রথমে, এক রাশ বিস্ময়ে আমার দিকে একবার চেয়ে টলতে টলতে গিয়ে খাটের ওপর বসে পড়লো, আমাদের গলার আওয়াজে ঝিনুক কখন যেন বেডরুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল, মেয়ে দেখলাম মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে, শিট, এ আমি কী করলাম, নো, নো, নো, আই শুডন্ট হ্যভ ডান ইট, উর্মির গায়ে হাত তোলাটা মোটেই উচিৎ হয়নি, ইট ওয়াজ আ ব্লান্ডার, ইয়েস উর্মি, তোমার গায়ে হাত তুলে আমি খুব ভুল করেছি, উর্মির দিকে এগিয়ে যাই, উর্মির চোখে এখন যেন আর সেই হতবাক হওয়ার ভাবটা নেই, তার বদলে এখন সেখানে একরাশ ঘৃণা, ইয়েস, শী হ্যজ এভরি রাইট টু হেট মি, তবু আমাকে ওর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে, বাবা একদিন আমার সামনে মায়ের গায়ে হাত তুলেছিল, সেদিন বাবার ওপর আমার খুব রাগ হয়েছিল, ওকে, দিস মে বি এ ডিফারেন্ট সিচুয়েশন, কিন্তু ঝিনুকেরও নিশ্চয়ই আজ আমার ওপর সেই রকমই রাগ হচ্ছে, আর ঝিনুক যদি রাগ না করেও আই মাস্ট সে ইট ওয়াজ এ মিস্টেক ফ্রম মাই সাইড, উর্মির হাতদুটো আমার দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে চাই, ওকে বলতে চাই, সরি, কিন্তু উর্মি আমায় সেই সুযোগ দেয় না, এক ঝটকায় নিজের হাতটা আমার হাত থেকে সরিয়ে নেয়।

খবরদার, আমাকে ছোঁবে না, যদি ছোঁও তাহলে এই ঝিনুকের মাথায় হাত রেখে বলছি কিন্তু, তুমি আমার মরা মুখ দেখবে। ঝিনুক উর্মিকে দুহাতে আরো শক্ত করে যেন জড়িয়ে ধরে, উর্মি তখনও বলে যাচ্ছে, আর একটা কথা শুনে রাখো, আজ যে তুমি আমার গায়ে হাত তুললে তার জন্য তোমায় কিন্তু সারা জীবন পস্তাতে হবে, তোমার আর তোমার মায়ের জীবন আমি যদি ছারখার করে না দিতে পারি তাহলে আমার নাম জেনে রেখো উর্মিমালা নয়।



ধুত্তুরি ভালো লাগছে না, এভরিথিং ইজ গোয়িং রং, ঘণ্টা খানেক হলো ঝিনুককে খাইয়ে উর্মি ওকে নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে গিয়েছে, যাওয়ার সময় আমাকে বলেও যায়নি, ঠিক আছে, উর্মির যাওয়া নিয়ে আমি অত চিন্তিত নই, ইন অল প্রবাবিলিটিস ঝিনুককে নিয়ে ও ওর মায়ের কাছে গিয়েছে, এর মধ্যে সেখানে গিয়ে যদি পৌঁছে যায় তাহলে এতক্ষণে মা বেটী আমার আর আমার মায়ের নামে সাতকাহন গাওয়াও শুরু হয়ে দিয়েছে, রিয়েলি আই অ্যাম নট ওরিড ফর অল দিস, বিয়ের পরে এরকম অনেকবারই হয়েছে, ঝগড়া করে উর্মি বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে আর কেঁদে কেঁদে ওর মায়ের কাছে আমার নামে নালিশ করেছে, কিন্তু আজ আমার একটাই ভুল হয়েছে আর সেটা হচ্ছে উর্মির গায়ে হাত তোলা, মোটেই এটা করা উচিৎ হয়নি, রাগের মাথায় আজ আমি একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছি, কিন্তু এখন কী করি আমি, না, এই ফাঁকা বাড়িটায় আর এক মুহূর্তও আমার থাকতে ইচ্ছে করছে না, আজ সকাল থেকেই একটার পর একটা যে সমস্ত ঘটনা ঘটে চলেছে তাতে আমার এখন খুব ভয় করছে, মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে যদি আমি এই বাড়িটা থেকে বেরতে না পারি তাহলে হয়তো আই শ্যাল হ্যভ টু ফেস অ্যানাদার অকওয়ার্ড সিচুয়েশন, ট্রাক-শুটের লোয়ারটা ছেড়ে ট্রাউজারটা গলিয়ে নেই, মেন দরজায় তালা লাগিয়ে ভাবতে থাকি চাবিটা কী করব, জানিও না উর্মি যাওয়ার সময় ডুপ্লিকেট চাবিটা নিয়ে গিয়েছে কি না, যাক গে, আমার চাবিটা বরঞ্চ সুদীপজেঠুদের ঘরে দিয়ে যাই।



করুণাময়ীর মোড়ে এসে ফাঁকা ট্যাক্সিতে উঠে বসি, সর্দারজি মিটার ডাউন করতে করতে জিজ্ঞাসা করলেন, সাব, কিধার যানা হ্যাঁয়, সত্যি তো, কোথায় যাব এখন, মনের মধ্যে হাতড়াতে থাকি জায়গাগুলো, কিন্তু এমন একটা জায়গাও মনে পড়ছে না যে যেখানে গিয়ে এই মুহূর্তে আমি একটু শান্তিতে থাকতে পারব, ব্রিজ পার করে ট্যাক্সিটা কখন যেন ট্রামডিপোর মোড়ে লালবাতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, সাব বাতাইয়ে, কাঁহা যানা হ্যাঁয়, দুম করে বলে ফেলি, সিঁথির মোড়, অলোককাকু ফোনে তখন মায়ের নতুন ঠিকানাটা সিঁথির কাছাকাছিই বলেছিল, যাই, মায়ের কাছেই বরঞ্চ যাই, গিয়ে মাকে বলি, প্লিজ ফিরে এসো, আমি আর পারছি না, আর কেউ বুঝুক বা না বুঝুক তুমি তো অন্তত আমায় বোঝো, সেই তুমিও যদি আজ আমার থেকে দূরে সরে যাও তাহলে কী নিয়ে বাঁচব আমি, প্লিজ মা, বাড়ি ফিরে চলো, বাড়ি ফিরে তোমার বিছানায় আমাকে তোমার পাশে একটু শুতে দাও, তোমার ডান হাতটা আমার চুলগুলিতে একটু বিলি কাটুক যতক্ষণ না আমি ঘুমিয়ে পড়ি, আমার এখন একটা লম্বা ঘুমের খুব দরকার, আমার সব স্নায়ুগুলি ঘরে-বাইরের চাপ নিতে নিতে বড় যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, দে নিড কমপ্লিট রেস্ট, ট্যাক্সির খোলা জানলা থেকে ভেসে আসা হাওয়ায় একটু ঝিমুনির মত এসেছিল, ড্রাইভার সাহবের হঠাৎ করে ব্রেক কষায় চমকে উঠলাম, সামনের গাড়িটা হাজরা মোড়ে ইনডিকেটর না দেখিয়েই হঠাৎ করে টার্ন নিচ্ছিল, ভাগ্য ভালো, আমার ড্রাইভার সতর্ক ছিল, তাই কোনো অ্যাকসিডেন্ট হয়নি, আচ্ছা, মায়ের কাছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে, মনে হয় মাকে আর একটু সময় দেওয়া উচিৎ, এমনও তো হতে পারে দু-একদিন আমাদের না দেখে, বিশেষত ঝিনুককে না দেখে মায়ের মনের ভিতর যে অভিমানটা জমে উঠেছে সেটা নিজের থেকেই গলতে শুরু করবে, থাক, আজ নয়, দু-একদিন বাদেই না হয় মায়ের কাছে যাব, কিন্তু এখন কোথায় যাব তাহলে আমি, আমার যে এখন একটু শান্তির বড়ই দরকার, একটু নিরিবিলি, একটু একাকী থাকা, আই নিড টু ইনহেল সাম ফ্রেশ অক্সিজেন যাতে আবার আমি তরতাজা হয়ে জীবনের যুদ্ধে নামতে পারি, রবিবারের ফাঁকা রাস্তায় আজ রাস্তাটা যেমন অনেকটা দূর অবধি দেখা যাচ্ছে, আমিও যেন আমার জীবনের রাস্তাটা বড় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এখন, এ টাফ টাইম ইজ ওয়েটিং ফর মি, সর্দারজি, প্লিজ শোভাবাজারকে তরফ চলিয়ে।




সেদিনও ট্যাক্সিতে উঠে বিদেশ ট্যাক্সিওয়ালাকে বলেছিল, ভাই শোভাবাজার যাব।

তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা, নিজের টেবিলে বসে কাজ করছি, বিদেশ কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, লাঞ্চের পর ওর সঙ্গে এক জায়গায় যাব কি না, তাহলে যেন তাড়াতাড়ি করে হাতের কাজ শেষ করে নেই। অফিসে বিদেশ আমার সব থেকে কাছের সহকর্মী, সহকর্মী না বলে ওকে আমার জিগরি দোস্তও বলা চলে, জিজ্ঞাসা করলাম কোথায়?

পরে বলবো’খন, এর আগেও অনেকবার এরকম হয়েছে, ওর স্বভাবটাই এরকম, কথায় কথায় হুল্লোড় করা, সবাইকে চমকে দেওয়া, এটাই হচ্ছে বিদেশ, মনের দিক দিয়ে ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো, আমার খুব ভালো লাগে ওকে, বললাম, বস যদি ছুটি না দেয়।

ধুত্তুরি হুতোমের থেকে ছুটি নিতে তোকে কে বললো?

ছুটি নেব না তো অফিস থেকে বেরবে কী করে?

তুই শালা একটা! শোন, হুতোমকে অত ছুটি ফুটির কথা বলার দরকার নেই, বসকে আড়ালে বিদেশ হুতোম বলেই ডাকে, মিত্র নাকি সব সময় নিজের মুখটাকে হুতোম প্যাঁচার মতই করে রাখেন। বলবি লাঞ্চের পর কাস্টমর ভিজিট আছে।

ঠিক হলো যে লাঞ্চের পর আজ তাহলে দুজনাই ‘কাস্টমর ভিজিটে' যাবে, বিদেশ আমার দিকে একবার চোখ টিপে নিজের ডেস্কের দিকে হাঁটা লাগালো আর আমি আবার কাজে মন দিলাম।

লাঞ্চ সেরে অফিস থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে ওঠার পর জানতে পারলাম যে আমাদের ডেসটিনেশন শোভাবাজার। শোভাবাজার শুনে মনের মধ্যে একটা কৌতূহল হচ্ছে, আসলে অফিস কাটার এই ভেঞ্চারগুলিতে সাধারণত আমরা এসপ্ল্যানেড, পার্ক-স্ট্রিট এসব জায়গায় যাই, লাইটহাউস, রক্সি বা গ্লোবে সিনেমা দেখে আশেপাশের কোনো বারে বসে একটু মদ্যপান করা আর তারপর নিজের নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা লাগানো, কিন্তু আজ বিদেশের চোখমুখ যেন অন্যরকম ভেঞ্চারের কথা বলছে, মনের মধ্যে কৌতূহল হচ্ছে, ট্যাক্সির ব্যাকসিটে শরীর এলিয়ে তাই জিজ্ঞাসা করলাম, শোভাবাজারে কী রে, কী আছে ওখানে?

নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদেশ যেন এখন একটু সিরিয়াস, তোকে আজ একজনের সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে যাচ্ছি এন্ড আই অ্যাম শিওর যে তার সঙ্গে আলাপ করে তুইও কিন্তু চমকে উঠবি।

তা সেই আলাপ করানোর বিশেষ মানুষটি কে?

সে গেলেই বুঝতে পারবি, এখনই এত অধৈর্য হোশ না।

এ তো আচ্ছা গেরো, কার সাথে আলাপ করতে যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি, কিছুই জানি না, জিজ্ঞাসা করলে তার কোনো সরাসরি উত্তর নেই, বিদেশ যেন কথার খেলায় মনের ভিতরের কৌতূহলটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এবার তাই গলায় আরো একটু কাতরতা মিশিয়ে বললাম, গুরু বল না, কার সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে যাচ্ছিস, মনের মধ্যে একটা সন্দেহ হচ্ছে, বিদেশ কি তাহলে রিসেন্টলি শোভাবাজারের দিকে কারোর সঙ্গে প্রেমে পড়েছে, তার সঙ্গেই কি আলাপ করানোর জন্য আমায় নিয়ে যাচ্ছে, কে জানে, হবে হয়তো।

মুখে একটা দার্শনিক হাসি নিয়ে বিদেশ এবার আমার প্রশ্নের উত্তরে বললো, একটা কথা জানিস তো, পর্দাকে সব সময় তার নিজের মত করে রোল করতে দেওয়া উচিৎ, তাতে দেখবি জীবনের চমকটা অনেক বেশী করে উপভোগ করতে পারছিস, সো, প্লিজ অ্যালাও দ্য স্ক্রিন টু রোল অন ইটস ওন, আর আমায় এখন কিছুক্ষণের জন্য ঘুমোতে দে, পেটে ভাত পরেছে, আই নিড এ ন্যাপ নাও, ট্যাক্সিওয়ালাকে শোভাবাজারের ঠিক মোড়ে নামবে বলে বিদেশ চোখ বুজলো।

শোভাবাজারের মুখে ট্যাক্সি থেকে নেমে আমরা হাঁটতে হাঁটতে এখন গ্রে স্ট্রীট পার করে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রীটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। শোভাবাজারে এর আগে এলেও এদিকটায় কখনো আসিনি, তবে এই জায়গাগুলির ব্যাপারে অনেক শুনেছি, শোনার কারণটা অবশ্য খুব একটা উল্লেখ করার মত নয়, আমরা এখন যে রাস্তাটা ধরে চলেছি তার চারিদিকে একটা সম্পূর্ণ যেন অপরিচিত পরিবেশ, প্রতিদিনকার চেনাশোনা জগতের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই, তবে দুপুর বলে গলিগুলিতে এখন সেরকম ব্যস্ততা নেই, অল্প কয়েকজন মেয়ে গলির মুখগুলিতে মুখে রং মেখে দাঁড়িয়ে আছে আর আমাদের মত কাউকে এসে দাঁড়াতে দেখলে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, রাস্তার কোনের পান-বিড়ীর দোকানটার সামনে বিদেশ সিগারেট কিনবে বলে দাঁড়ালো আর আমাদের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে রাস্তার ওপাশের বাড়িটার রকে যে রোগা মত লোকটা এতক্ষণ হাতে বেলফুলের মালা নিয়ে বসেছিল সেই লোকটা এগিয়ে এলো।

বাবু, মালা নিয়ে যান, একদম টাটকা ফুলের মালা, মালার থোকাটা আমাদের নাকের ডগায় তুলে লোকটা জুলজুল করে এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, এক একটা লোক থাকে না দেখলেই গা-টা যেন রি-রি করে ওঠে, এ লোকটাও সেরকম, রোগা লিকলিকে ক্ষয়াতে চেহারার সঙ্গে মানানসই চোয়ারে মুখ, সুরমা টানা চোখের নিচে পরত পরত কালি, চুলে মনে হয় কিছুদিন আগে মেহেন্দি লাগিয়েছিল, এখনও তার মরচে ধরা লাল রঙ আলতো করে লেগে রয়েছে, পরনে সাটিনের পাঞ্জাবিটা দুপুরের রোদে চকচক করছে, তার চেয়েও বিরক্তিকর লোকটার চোখের দৃষ্টি, কেন জানি মনে হচ্ছে ঐ দৃষ্টি ধরে একবার চলতে শুরু করলে নরকের দ্বারে পৌঁছনটা শুধু সময়ের অপেক্ষা, লোকটার দৃষ্টি থেকে চোখ ফেরাতে উলটো দিকে মুখ ফেরাই, সামনের চায়ের দোকানে তারস্বরে এখন টেপ রেকর্ডার বাজছে, পিয়া তু অব তো আজা, একটা দশ এগারো বছরের ছেলে সেখানে গানের তালে তালে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে নাচছে, চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসা কেউ একজন খুব জোড়ে একটা সিটি মেরে উঠলো, একজন দেখলাম একটা পাঁচ টাকার নোট ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো, আউর একবার নাচকে দেখা, বিদেশের সিগারেট কেনা হয়ে গিয়েছিল, সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কটা খুলে ও একটা সিগারেট ধরালো, মালাওয়লা এবার আমায় ছেড়ে বিদেশকে নিয়ে পড়লো, বিদেশের কানের কাছে সমানে ঘ্যান-ঘ্যান করছে লোকটা। স্যার বাঙ্গালি, পাঞ্জাবী, মারাঠি, হাউজ ওয়াইফ, কলেজ গার্ল, যেরকম চাইবেন সেরকমই পেয়ে যাবেন, সিগারেটের ফিল্টারটা এক টোকায় পাশের নর্দমায় ফেলে বিদেশ ইশারায় আমায় হাঁটতে বললো, লোকটা কিন্তু সঙ্গ ছাড়লো না, সেলসের লোকেরা যেমন বিজনেসের গন্ধ পেলে কিছুতেই কাস্টমারদের লেজুড় ছাড়ে না তেমনি এই লোকটাও এখন আমাদের পিছু নিয়েছে, মাইরি বলছি স্যার, লীনাকে দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে লাইনের মেয়ে, দেখবেন ইংরেজিতে কেমন ফটফট করে কথা বলছে, যদি নাচ দেখাতে বলেন তবে পপ গানের সঙ্গে নেচেও দেখাবে, আর যদি স্যার ঘরোয়া পরিবেশ পছন্দ করেন তাহলে বলুন সীমার ঘরে নিয়ে যাচ্ছি, দেখবেন একদম গৃহ-স্থলী গৃহ-স্থলী ছাপ।

কিছুক্ষণ আমাদের পিছু পিছু চলার পর লোকটা এক সময় হাল ছাড়লো, আর আমি বিদেশের হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলাম, বস, এ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায়?

বিদেশের মুখে এখনও সেই বুদ্ধ মার্কা ভাব, আরে ইয়ার, এত হাইপার হচ্ছিস কেন, আমার মুখে-কপালে জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘামের কণাগুলির দিকে তাকিয়ে বিদেশ বলে ওঠে, শোন, ফর ইওর ইনফরমেশন, আমরা এখন ইমাম বক্স লেনের দিকে যাচ্ছি।

ইমাম বক্স লেনে, সেখানে কী আছে?

বললাম না একজনের সঙ্গে তোকে আজ আলাপ করিয়ে দেব।

এক মিনিট, রাস্তার ধারের একটা রকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি আমি, না ব্যাপারটা ঠিক মত বোঝা দরকার, বিদেশকে আমি বিশ্বাস করি বা ভরসা করি, কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে ও নিজেই কিছু ভুল করছে, পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরাই, আমার দেখাদেখি বিদেশও সিগারেট ধরায়, দুপুরবেলায় রাস্তায় এখন সেরকম লোকজন না থাকলেও যারা আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছেন তারা সবাই একবার করে আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছেন, দুটো মেয়ে আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়লো, একজন আরেকজনকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই, এনাদের বল না, এই রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট না ফুঁকে আমাদের ঘরে গিয়েও তো বসতে পারে, ফ্যানের হাওয়ায় ওনারা সিগারেটে টানবেন আর আমরা ওনাদের সেবা করব, কী বলিস রুবি, কথাগুলি বলতে বলতে মেয়েটা অন্য মেয়েটার গায়ে হেসে গড়িয়ে পড়লো, অন্য মেয়েটাও এবার আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, তুম দো, হাম দো, রব নে বানায়া জোড়ি, কাহেকো টাইম বরবাদ কর রাহো, আ যাও, হাম তুমহারা ইন্তেজার কর রাহি, মেয়েটা বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে দু-কলি গেয়েও উঠলো, হাম-তুম, এক কামড়ে-মে বন্ধ হো, অর চাবি খো গ্যায়া, আমাদের দিক দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মেয়ে দুটো এক সময় নিজেরাই চলে গেলো।

ব্যাপারটা ক্রমশ যেন এবার আমার কাছে ক্লিয়ার হচ্ছে, কিন্তু বিদেশ কেন এখানে আমায় নিয়ে এলো, না, না, ইট'স এ টোটালি ডিফারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আমার মত ছাপোষা মেন্টালিটির সংসারী মানুষদের জন্য এই পৃথিবী নয়, এর থেকে দূরে থাকাই ভালো, কিছুক্ষণের শারীরিক সুখ ছাড়া এখানে পাওয়ার জন্য কিছু নেই, কিন্তু একটু অমনোযোগী বা বেহিসেবী হলে হারানোর জন্য অনেক কিছুই পড়ে আছে, পয়সাকড়ি বা অসুখবিসুখের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, তার থেকেও যেটা ভয় সেটা হচ্ছে মান-সম্মান, না, বিদেশ, এসব জায়গা আমার মত ভীরু মানুষদের জন্য নয়, এই লাল রঙের পৃথিবীটায় আমি ঢুকতে চাই না। একটু ইতস্তত করে শেষ অবধি বলেই ফেলি, দেখ বিদেশ, আমার মনে হচ্ছে তুই এখানে কোনো মেয়ের ঘরে গিয়ে উঠবি, কিন্তু বিশ্বাস কর আমার এসবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই, ইনফ্যাক্ট আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে, প্লিজ আমায় ছেড়ে দে।

বিদেশ সিগারেটে একটা লম্বা টান দেয়, ঠিকই বলেছিস, আমি এখানে টিয়া বলে একটা মেয়ের ঘরে যাব বলে এসেছি, আর টিয়ার সঙ্গে আজ তোর আলাপ করিয়ে দেব … আমাদের কথার মাঝে পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত গলায় বেলফুলের মালা পরা একটা মাঝ বয়সী লোক টলতে টলতে ঠোঁটের কোনে একটা সিগারেট ঝুলিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো, ম্যাচিস প্লিজ, নিজের মনেই তারপর বলতে থাকলো, কী বললেন, টিয়ার কাছে যাবেন, কিন্তু টিয়া তো নেই, ও তো খাঁচা ছেড়ে উড়ে গিয়েছে, আপনারা বরঞ্চ ময়নার কাছে যান, মাইরি বলছি, এই-এই আপনাদের গা ছুঁয়ে বলছি, লোকটা দুলকি চালে আমাদের গা ছোঁয়ার জন্য সত্যি সত্যিই এগিয়ে আসতে থাকলো, দেখবেন ময়না একদম ঠিক রেখার মত দেখতে, আর নাচেও ঐ রকম, এই তো কিছুক্ষণ আগে আমাকে শোনাচ্ছিল, দেশলাইটা ফেরত দিতে দিতে লোকটা জড়ানো গলায় এবার গাইতে শুরু করলো, সেলামি ইশক মেরি জান কবুল কর লো… বেশীক্ষণ অবশ্য লোকটা আমাদের জ্বালাতে পারলো না, পাশের গলি দিয়ে একটা মাঝবয়সী মহিলা আর একটা ষন্ডাগন্ডা টাইপের ছেলেকে দৌড়ে আসতে দেখে লোকটা পালাতে গিয়ে রাস্তার ওপর মুখ থুবড়ে পড়লো আর ষণ্ডাগুণ্ডা ছেলেটা লোকটার পিছনে কপাৎ কপাৎ করে দুটো লাথি মেরে গালাগাল দিয়ে বলে উঠলো, বটা, তোকে বলেছি না, পকেটে পয়সা না থাকলে এখানে আসবি না ...

ছিঃ ছিঃ, এ আমি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি, পরিচিত কেউ যদি এই মুহূর্তে আমাকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে সারা জীবনের জন্য পাড়ায় মুখ দেখাতে পারব না, বিদেশের ওপর কিন্তু এখন প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে, কেন আমায় আজ ও এই নরকে নিয়ে এলো, বিদেশের হাতটা জোড়ে চেপে ধরে বলে উঠি, ভাই তুই তোর টিয়ার কাছে যা, আমি বাড়ি চললাম।

বিদেশ এবার যেন একটু গম্ভীর হয়েই জবাব দিলো, দেখ কুশল, তুই যা ভাবছিস তা কিন্তু নয়, টিয়ার কাছে আমরা যাচ্ছি কিন্তু সেটা ফুর্তি করার জন্য নয়, গলার স্বরটা একটু বদলে যায় বিদেশের, ঠিক আছে, তোকে তাহলে ব্যাপারটা খুলে বলি, এই মেয়েটার সঙ্গে কিছুদিন আগে আমার আলাপ হয়েছে আর ওকে দেখার পর আমার মনে হয়েছে যে তোর সঙ্গেও ওর আলাপ হওয়াটা একান্ত জরুরি।

কেন, এখানকার এই সব মেয়ের সঙ্গে আলাপ করে আমি কী করব, হাঁটতে হাঁটতে আমরা এখন গলিটার মুখে যে টি পয়েন্টটা আছে সেখান থেকে বাঁদিকে বাক নিয়েছি।

সেটা তুই মেয়েটার সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরই বুঝতে পারবি। আমার মনের অবস্থাটা আমার চোখেমুখেও যেন ফুটে উঠেছে, বিদেশ এবার আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললো, অত টেনশন নিস না, এই জায়গাটায় হাঁটলে বা এখানকার কারোর সঙ্গে দুটো কথা বললে কারো কিন্তু চরিত্র খারাপ হয় না, চরিত্র খারাপ হওয়ার হলে সেটা ঘরে বসেও হতে পারে, আর একটা কথা শুনে রাখ, ভাবিস না জ্ঞান দিচ্ছি, আমাদের চারপাশে এই যে এত মানুষ দেখছিস তাদেরকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর, দেখবি বেশীরভাগ মানুষই জীবনের রাস্তা বলতে কিন্তু শুধু সামনের দিকটাই বোঝে, অথচ দেখ আমাদের জীবনের আরো তিনটে দিক আছে, মানে আরো তিনটে রাস্তা, সেই রাস্তাগুলির কথা বেশীরভাগ মানুষই আমরা কিন্তু জানি না বা জানতেও চাই না, অথচ ঐ সব রাস্তাগুলোতেও অনেক সময় আমাদের জন্য অনেক কিছু পড়ে থাকে, ইটস আপ টু আস, পথের ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই ভালো-মন্দের মাঝে কোনটা আমরা নেব আর কোনটা আমরা নেব না, খনির মধ্যে পড়ে থাকা হাজারো কালো পাথর বা ধুলো সরিয়ে শেষ অবধি চকমকি পাথরটাকে খুঁজে নেব কি না তা আমাদেরকেই ডিসাইড করতে হবে, যে মেয়েটার সঙ্গে আজ তোকে আলাপ করিয়ে দেব বলে তোকে এখানে নিয়ে এসেছি সে পেশায় একজন দেহ পসারিণী হতে পারে কিন্তু তার একটা খুব বড় গুন আছে, আর ওর সেই গুনের সঙ্গেই তোর আজ পরিচয় করিয়ে দেব আর আমি শিওর টিয়ার ঐ গুণটা জানার পর তুইও কিন্তু ওকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করবি।

কিন্তু গুণটা কী সেটা তো আগে বল।

এতদূর যখন এসেই পড়েছিস তখন আর একটু ধৈর্য ধর, ঐ যে বললাম না চমকের পর্দাটাকে সব সময় নিজের মত করেই রোল করতে দেওয়া উচিৎ।

এই রকম পরিস্থিতির কিন্তু একটা নেশা থাকে আর সেই নেশা একবার মনের মধ্যে ঢুকে গেলে তার থেকে মনটাকে ঘুরিয়ে রাখা আমার মত মানসিক ভাবে কমজোরি মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব, নিজের মনের মধ্যে তাই যুক্তি সাজাতে থাকি, আচ্ছা এমনটাও তো হতে পারতো, বিদেশ আজ তার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে আমায় নিয়ে যেতে পারত, তাহলে কি আমি ওর সঙ্গে সেখানে যেতাম না, ধরে নেই না কেন টিয়া বলে মেয়েটি আসলে বিদেশের সেরকমই কোনো আত্মীয়া, পা বাড়াই সামনের দিকে, আচ্ছা একটা কথা বল তো, এই মেয়েটাকে তুই জোটালি কোথা থেকে।

সে অনেক গল্প, পরে কোনোদিন ডিটেলে বলব'খন, এখন শুধু জিস্টটা শুনে রাখ, একদিন ধর্মতলায় মেট্রো সিনেমার সামনে ওর সঙ্গে আমার আলাপ হয়, আর সেই আলাপটাই সময়ের সাথে সাথে বিস্তার নেয়, কেন জানি না টিয়ার জীবনের সব কথা শোনার পর সাম-হাউ আমার মনের মধ্যে ওর জন্য একটা... মে বি, আমি হয়তো তোকে ব্যাপারটা ঠিক বোঝাতে পারছি না।

বুঝেছি, ইউ মিন টু সে যে টিয়া নামের এই মেয়েটির প্রতি গ্রাজুয়ালি তোর মনের মধ্যে একটা সিমপ্যাথেটিক ভালবাসার জন্ম হয়েছে।

ভালবাসা কি না জানি না তবে এটা ঠিক ওর জন্য আমার মনের মধ্যে একটা সহানুভূতি আছে, আসলে কী জানিস, স্বামী ছেলে শাশুড়ি সবাইকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য টিয়া যে দিনের পর দিন নির্যাতনের এই জীবন মুখ বুজে মেনে নিচ্ছে, ওর সেই স্পিরিটটাকে আমি রেস্পেক্ট করি।

তা ওর ফ্যামিলি মানে ওর স্বামী ছেলে এরা সব কোথায়, ওরাও কি এখানে ওর সঙ্গে থাকে?

আমার কথা শুনে বিদেশ হাসতে থাকে, আরে, না, না, এটা এমন একটা জায়গা না আনলেস সারকামস্টান্স ফোর্স কেউ তার পরিবার নিয়ে এখানে থাকে না, টিয়ার স্বামী আর পরিবারের বাকী সবাই টালিগঞ্জ রেলব্রীজের পাশে যে বস্তিটা আছে সেখানে থাকে।

তুই তো বলছিস টিয়ার স্বামী আছে, তাহলে ও এরকম একটা পেশায় জড়িয়ে পড়লো কিভাবে, আই মিন ওর স্বামী কি এসব জানে, ভদ্রলোক কি সবকিছু মেনে নিয়েছেন?

ভদ্রলোক! শালা ঐ স্কাউন্ড্রেলটার জন্যই তো মেয়েটার আজ এই দুর্দশা, আগে কোথায় একটা লেবারের কাজ করত, কিন্তু চুরি করে ধরা পড়ায় কাজটা গেছে আর সেই থেকে বাবু ঘরে বসে বসে শুধু মাল খায় আর পয়সার দরকার পড়লেই টিয়াকে মারধর করে, টিয়া যত বলতো, ও একটা ঘরের বৌ, কোথা থেকে পয়সা পাবে, হারামিটা শুনতই না, এমন মার মারতো যে টিয়া মাঝে মাঝে ভাবতো সুইসাইড করবে, কিন্তু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে শেষ অবধি নিজেকে নিরস্ত করে ও।

আর ওর শাশুড়ি, উনি কিছু বলতেন না তার ছেলেকে?

ছেলেকে! উল্টে টিয়াকে বলতো, বাপ তো বিয়ের সময় একটা কানাকড়িও দেয়নি, তা এই যে খেয়ে না খেয়ে গতর বানিয়েছিস সেটাও তো বেঁচে সংসারের একটু সুরাহা করতে পারিস।

কী বলছিস! একজন মহিলা আরেকজন মহিলাকে এই ভাবে…

অবাক হোশ না, আমাদের এই পোশাকি জীবনটা ছেড়ে মানুষের জীবনের ভিতরে গিয়ে একটু উঁকি মার, দেখবি সেখানে এরকম কত গল্প জমা আছে, তা যা বলছিলাম, শেষমেশ এক সময় বাধ্য হয়েই টিয়া আধিয়া হয়ে এখানে আসা-যাওয়া শুরু করে, আর এখন তো ও এখানকার পার্মানেন্ট ওয়ার্কার বনে গিয়েছে।

আধিয়া মানে, আমি বিদেশের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি।

ওঃ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তুই এই দুনিয়ার কোনো খবরই রাখিস না, বিদেশের গলায় যেন একটু ঠাট্টার সুর, এই যে রাস্তার দুধারে বা গলির মধ্যে এত বাড়ি দেখছিস এই সব বাড়ির মালিক বা মালকিনরা কিন্তু এখানে ঘরগুলি মেয়ে-প্রতি ভাড়া দেয়, যেসব মেয়েরা ঘরভারা পায় তাদের এখানে বলে পার্মানেন্ট ওয়ার্কার, বাড়ির মালিকের সঙ্গে তাদের একটা অলিখিত চুক্তি থাকে, এ ভেরি ক্লিয়ার-কাট বিজনেস এগ্রিমেন্ট, রাতে মেয়েরা যা পয়সা পাবে তার মিনিমাম ফিফটি পার্সেন্ট বাড়ির মালিককে দিতে হবে।

যদি কেউ না দেয় বা অ্যাকচুয়ালি পাওয়া পয়সার অঙ্কটাকে কমিয়ে বলে, আফটার অল বাড়ির মালিক তো আর পয়সা লেনদেনের সময় ওখানে থাকে না, বিদেশকে ওর কথার মাঝেই জিজ্ঞাসা করে উঠি।

তুই যেটা বললি সেটা ঠিক মানে বাড়িওয়ালা বা বাড়িওয়ালী পয়সার লেনদেনের সময় স্পটে থাকে না কিন্তু এখানকার সবাই এখানকার অলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলে, সাধারণত কেউ তা ভাঙতে চায় না বা আরো সঠিক করে বলতে গেলে বলতে হয় তাদের পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়, আসলে এই যে বাড়ির মালিক বা মালকিনদের কথা বলছি তারা খুব পাওয়ারফুল হয়, তাদের হাতে পোষা গুণ্ডা থাকে, তাই কোনো মেয়ে যদি বাড়িওয়ালাকে ঠকাতে চায় বা ঠকাতে গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে তার এখানে ব্যবসা করা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়, বাড়িওয়ালা পোষা গুণ্ডারা খুন করে বডি এমন সব জায়গায় গুম করে দেয় যে পুলিশের বাবারও ক্ষমতা থাকে না সেই সব লাশ উদ্ধার করার।

বাপরে বাপ! কী সব বলছিস, এসব তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার স্যাপার।

হ্যাঁ, ভয়ংকরই বটে, এখানকার লাইফ সত্যিই একটু অন্য রকম, তা যা বলছিলাম, দুপুরের দিকে সাধারণত এই সব পার্মানেন্ট ওয়ার্কাররা রাতের জন্য নিজেদের তরতাজা করতে একটু ঘুমিয়ে নেয়, আর তখন বাড়িওয়ালা ঐ মেয়েগুলিকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাকি ঘরগুলো ঘণ্টা প্রতি ভাড়া দেয়।

কারা ভাড়া নেয় তখন এই ঘরগুলো?

কারা ভাড়া নেয়! শুনলে অবাক হবি, আমাদের শহরে পথ চলার সময় আমরা যেসব মেয়েদের দেখি তাদের মধ্যেই প্রয়োজনের তাগিদে কেউ কেউ তখন দুপুরবেলায় এই ঘরগুলি ভাড়া নেয়, আসলে রেড লাইট এরিয়ায় থাকা মেয়েদের বাদ দিয়েও কিন্তু এই শহরের বা শহরের আশেপাশে হাজার হাজার মেয়ে আছে যারা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, পেটের টানে বা পরিস্থিতির শিকারে বাধ্য হয়ে তারা আসছে এই আদিমতম পেশায়, ক্লায়েন্ট পেলে দুপুরের দিকে তারাই এসে এই ঘরগুলি ভাড়া নেয়, আর এদেরকেই বলে আধিয়া, টিয়াও প্রথমদিকে আধিয়া হয়েই এখানে আসত, তারপর এখন যে ঘরটায় ও থাকে সেই ঘরে আগে যে মেয়েটা ছিল সে বম্বে চলে যাওয়ায় টিয়া বাড়িওয়ালা সঙ্গে কথা বলে পার্মানেন্টলি এখানে চলে আসে।

কিন্তু টিয়া আগে যেখানে থাকত সেখানকার লোকজনেরা মানে পাড়া প্রতিবেশীরা ওর স্বামী-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসা করে না যে টিয়া এখন কোথায়?

বিদেশ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, টিয়ার বর আর শাশুড়ি নাকি পাড়া প্রতিবেশীদের বলেছে বাপের বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে টিয়া পুকুরের জলে ডুবে মারা গিয়েছে।

সত্যিই আমি বিদেশের কথাটা যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে বাড়ির লোকরা কী না এই সমাজের চোখে মৃত বলে বানিয়ে দিয়েছে! রিয়েলি আই কান্ট বিলিভ ইট!




না, বিদেশ ভুল বলেনি, মেয়েটাকে দেখলে সত্যিই বোঝা যায় না যে পৃথিবীর আদিমতম ব্যবসার সঙ্গে সে যুক্ত, কালোপানা মুখটা জুড়ে একটা অদ্ভুত শ্রী মেয়েটার, কথাবার্তাতেও ভীষণ মার্জিত, মেয়েটির সঙ্গে বিদেশ আমার আলাপ করিয়ে দিলো, আমাকে দেখিয়ে বললো, টিয়া এর মায়ের নাম জানো? আমি বুঝতে পারলাম না যে এই পরিবেশে বিদেশ হঠাৎ করে কেন মায়ের প্রসঙ্গ তুললো, ইনফ্যাক্ট আমার কিন্তু একটু খারাপই লাগছে, এই পরিবেশে আমি আমার মায়ের পরিচিতিতে পরিচিত হতে চাই না, ঠিক আছে এখান থেকে বেরই, তারপর বিদেশকে জিজ্ঞাসা করব। বিদেশ ততক্ষণে টিয়াকে বলে উঠলো, আমি কিন্তু বন্ধুকে আজ তোমার গান শোনাবো বলে নিয়ে এসেছি।

এ বাবা, তাহলে তো শিউ ভাইয়াকে ডাকতে হয়, মেয়েটার গলায় যেন নূপুরের ধ্বনি, বড় মিষ্টি। ঝুল বারান্দার রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে সে বললো, ছোটু, দেখ তো শিউভাইয়া কোথায়, শিউভাইয়াকে এখুনি এখানে আসতে বল। আমি বিদেশের মুখের দিকে তাকাতে বিদেশ জানালো যে শিউ মানে শিউনারায়ন, এখানকার তবলচী, এক ঘণ্টা বাজানোর জন্য শিউনারায়ন দেড়শ টাকা নেয়, সঙ্গে বাবুদের দেওয়া দু-দশ টাকা বকশিস, এখানকার অনেক কিছুই দেখছি বিদেশ জানে, শিউনারায়নের পার ডে ইনকাম নাকি মিনিমাম সাতশো আটশো টাকা, তার মানে মাস গেলে প্রায় বিশ-পঁচিশ হাজার টাকা, শালা, গ্রাজুয়েট হয়ে চাকরি করেও মাস গেলে অনেকেই এই টাকার মুখ দেখে না!

বাবরি চুলের শিউনারায়ন তবলায় চাটি মেরে জানিয়ে দিলো যে সে প্রস্তুত, ভিতরের ঘর থেকে টিয়া সাজগোজ সেরে হারমোনিয়ামের সামনে এসে পা মুড়ে বসেছে, এই পা মুড়ে বসা, ওর পরনের এই সাদা আর শ্যাওলা রঙয়ের শাড়ি, মুখের হালকা প্রসাধন, বিনুনি করে বাঁধা লম্বা কালো চুলের গোরায় আলতো করে জড়িয়ে রাখা বেলফুলের মাথা, আমি যেন এর আগে কোথাও দেখেছি এসব, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না, সত্যিই এখানকার মেয়েদের সম্পর্কে আমার যে ধারনা ছিল, এই যেমন এরা ভীষণ চটুল বা উগ্র হয়, টিয়া কিন্তু সেই ধারনা আজ ভেঙ্গে দিচ্ছে, কী অদ্ভুত একটা কমনীয়তা ওর সারা মুখ জুড়ে, ওর অতল কালো চোখদুটোয় আমি যেন জলবিন্দুর মত মণি-দুটোকে টলোমলো করতে দেখছি, ভয় হচ্ছে, যে কোনো মুহূর্তে ঐ জলের ফোটা কান্না হয়ে ঝরে পড়বে, হারমোনিয়ামের রিডে আঙুল রাখলো টিয়া, এ কী, এ সুর তো আমার চেনা, কত রাতে এই সুরে আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে, ঘুম ভেঙ্গে ঘরের খোলা জানলায় এসে দাঁড়িয়েছি, দেখেছি পাশের ঘর জুড়ে খেলে বেড়াচ্ছে চাঁদনি রাত আর কাজল করের হৃদয় নিংড়ানো দর্দ ভরা কাহানী, দর্দ রহেতা হ্যায় ফির ভি প্যারই জিন্দেগী হ্যাঁয় ... শুধু কাজল করের গাওয়া গানই মেয়েটা গাইছে না, ওর গলাটাও যেন হুবহু মায়ের গলারই কার্বন কপি, বিদেশ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, বলার দরকার নেই, আমি জানি ও কী বলতে চাইছে, কী বন্ধু, বলেছিলাম না, দেয়ার ইজ এ সারপ্রাইজ ফর ইউ!




টিয়াকে অন্যদিনের তুলনায় আজ ভীষণ মনমরা লাগছে, কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করাতে বললো যে ওর শাশুড়ি আজ সকালে মারা গিয়েছে, জানেন খুব ইচ্ছে করছিল যে শ্মশানে গিয়ে বুড়িকে একবার শেষ দেখা দেখে আসি।

তা গেলে না কেন?

ও বাবা যাব কী করে, শ্মশানে তো নিশ্চয়ই পাড়ার লোকেরাও এসেছিল, ওরা তো জানে যে আমি মরে গিয়েছি।

কী বলবো, চুপ করে থাকি, টিয়া নিজের মনেই বলে যাচ্ছে, জানেন, যখন ওখানে থাকতাম তখন বুড়ি কিন্তু আমায় কম জ্বালায়নি, এমনও হয়েছে যে ওর ছেলের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হচ্ছে, রান্নাঘর থেকে বুড়ী গরম খুন্তিটা নিয়ে এসে ছেলের হাতে দিয়ে বললো, মাগীর চোপায় খুন্তিটা চেপে ধর তো, চোপা একদম চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাক, কথাগুলি বলতে বলতে টিয়া কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলো, তবু কী জানেন, শত হলেও উনি আমার গুরুজন, তাই মনটা আজ ভীষণ খারাপ লাগছে!

নিজের অজান্তেই আমার বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো, হায় রে, উর্মির মধ্যে যদি এই মনুষ্যত্বর সামান্য ছিটেফোঁটাটুকু অবশিষ্ট থাকতো আজ!



শোভাবাজার থেকে ফেরার পথে পাড়ার মোড়ে এসে দূর থেকে বাড়ির দিকে তাকালাম, না, আমাদের ফ্লোরে কোনো আলো জ্বলছে না, তার মানে উর্মিরা এখনো বাড়ি ফেরেনি বা বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে পরেছে, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলাম, গ্রিলের দরজায় বাইরে দিয়ে তালা লাগানো, তার মানে উর্মিরা ফেরেনি, নিচে নামলাম, সুদীপজেঠুদের ঘর থেকে চাবি নেওয়ার সময় জেঠু জিজ্ঞাসা করলেন, বৌমারা ফিরবে না আজ?

না, গলার স্বরটা যতখানি সম্ভব স্বাভাবিক রেখে জেঠুকে জানালাম যে উর্মি আর ঝিনুক আজ ও বাড়িতেই থাকবে, জানি না দুপুরের কথা কাটাকাটির ব্যাপারটা জেঠু টের পেয়েছেন কি না তবে ওনার সামনে এমন ভাব করলাম যে মাঝে মাঝে উর্মি যেমন ঝিনুককে নিয়ে বাপের বাড়ি যায়, আজও তেমনি গিয়েছে।

চাবিটা দিয়ে জেঠু আমার কাঁধে হাত রাখলেন, মনটা শান্ত করো কুশল, তুমি এখন একটা ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছ, তবে জানই তো সব ঝড়ই এক সময় থেমে যায় আর পৃথিবীটা তখন শান্ত হয়ে ওঠে আবার।

ওপরে উঠে তালা খুলে শ্বশুরবাড়িতে ফোন করলাম, নম্বর ডায়াল করার সময় বুকের ভিতরটা দুরদুর করছিল, হে ভগবান, যে ফোনটা ধরবে সে যেন বলে যে উর্মি আর ঝিনুক ও বাড়িতেই রয়েছে, শালাবাবু ফোন ধরলেন, আমাকে নিশ্চিন্ত করে জানালেন যে উর্মিরা ওখানেই রয়েছে, আজ ফিরবে না, এই কথাটা জানানোর জন্য উনি এর আগেও একবার আমাদের বাড়ির নম্বরে ফোন করেছিলেন, কিন্তু ফোন বেজে গিয়েছে, কেউ ধরেনি, ফোন রাখার আগে খুব গম্ভীর গলায় শালাবাবু জানালেন, কুশল, কাল অফিস ফেরত একবার আমাদের বাড়িতে এসো তো, তোমার সঙ্গে দরকারি কথা আছে, কথাটা বলে ফোনটা রেখে দিলেন উনি, তবে শেষ কথাগুলোয় যেন আদেশের সুর ছিল, আদালতের নোটিশ টাঙ্গানোর মত করে বললেন, শ্রীমান কুশল কর, কাল সন্ধ্যায় তোমার বিচার হবে, তুমি যথা সময়ে আদালতে এসে হাজির হয়ো, বিচারের পর তারপর ডিসাইড করা হবে যে ইন ফিউচার, তোমাকে স্বামীর বা পিতার রোলে আর অভিনয় করতে দেওয়া হবে কি না।

ধুর শালা, যা হওয়ার তাই হবে, আমি এখন আর কাউকে পরোয়া করি না, মা আমায় তার ছেলের জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছে, উর্মি তো সেই কবেই হাবভাবে বোঝাতে শুরু করেছে যে অ্যাট হার কাইন্ড কনসিডারেশন ওনলি আজও আমি ওর স্বামীর তকমাটা বয়ে বেড়াচ্ছি, শালা এটা একটা জীবন! কী ঘরে, কী বাইরে, সব সময়ই যেন অন্যের দয়াতে বেঁচে থাকা! না এভাবে বেঁচে থাকা যায় না, পৃথিবীকে আমারও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার যে আমিও একজন মানুষ, শুধু মাত্র বাধ্য কর্মচারী, বাধ্য পুত্র বা বাধ্য স্বামী হয়ে বাঁচার জন্য আমার জন্ম হয়নি, খালি ঝিনুকটার কথা ভেবে বুকের ভিতরটা কেমন যেন টনটন করে ওঠে, মেয়েটা আমায় সত্যিই ভীষণ ভালবাসে, যাই হোক, এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে'খন, এখন খুব খিধে পাচ্ছে, যাই, করুণাময়ীর মোড়ে গিয়ে দেখি পটলার হোটেলে কিছু পাওয়া যায় কি না।




ক্রমশ