বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

কথাগুলো বলা হলো না,পর্ব - ৫

ও ঠাকুমা, তাল কাকে বলে বলো তো?

সকাল থেকেই আজ সমানে বৃষ্টি পড়ে চলেছে, থামবার যেন কোনো লক্ষণই নেই, বাবাকে অনেকবার করে আজ কাজে যেতে বারণ করা হলো কিন্তু বাবা শুনলো না। মাকে বললো, আরে বাবা, বোঝো না কেন , অকারণে ছুটি নষ্ট করাটা মোটেই ঠিক নয়, ন'টা নাগাদ বাবা বেরিয়ে গেলে তাই মা এবার আমায় নিয়ে পড়লো , কিন্তু এইসব বৃষ্টির দিনে স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকার কথা ভাবাই যায় না , তাই গম্ভীর হয়ে মাকে বললাম আজ হাফইয়ারলি পরীক্ষার সিলেবাস দেওয়ার কথা আছে, স্কুলে যেতেই হবে। আসল কারণটা অবশ্য অন্য, আজ যে রকম বৃষ্টি হচ্ছে তাতে রেইনি ডে হয়ে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা আর একবার রেইনি ডে হয়ে গেলে স্কুলের মাঠে আজ চুটিয়ে ফুটবল খেলা হবে, বাবলাকে বলবো ওর বাড়ি থেকে গিয়ে ফুটবলটা নিয়ে আসতে, নাইন বি'র সঙ্গে ম্যাচটা আজ হয়েই যাবে ।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য রেইনি ডে হলো না তবে ছাত্র আর টিচার দু পক্ষেরই উপস্থিতি খুব কম হওয়ায় টিফিনের পর হেডস্যার ছুটি দিয়ে দিলেন , বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টিটা কিন্তু আবার ঝেঁপে এলো, এত জোড়ে এলো যে ছাতাতেও মানছিল না, কাক-ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরতে ঠাকুমা বলে উঠলো, ও বৌমা, বাবুর বুকে-পিঠে একটু গরম তেল মালিশ করে দাও তো , দেখবে ঠাণ্ডাটা তাহলে আর লাগবে না।

তেলে এক কোয়া রসুনও ফেলে দেই, কি বলেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ, দাও, গরম তেলের সঙ্গে রসুনের তেজ শরীরের মধ্যে একবার গেলে ঠাণ্ডা বাবাজী দেখবে আর পালাবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। মা তেল গরম করে আমার বুকে পিঠে মালিশ করে দিচ্ছে , ঠাকুমা অলস ভাবে ঘর বারান্দায় পায়চারী করছে , কী বৃষ্টিটাই যে শুরু হলো !

যা বলেছেন, আকাশ যেন একদম ফুটো হয়ে গিয়েছে , সকাল থেকে পড়ছে তো পড়ছেই ।

তোমার তো আজ আবার গানের ক্লাস আছে, কী করে যে যাবে কে জানে ।

আমিও তো তখন থেকে সেটাই ভাবছি, ওদিকে মাস্টারমশাই আজ আবার অবশ্য করে যেতে বলেছেন।

কেন গো, তোমাদের ক্লাসে আজ আজ স্পেশাল কিছু আছে না কি ?

কী জানি, তবে মাস্টারমশাই সেদিন বলছিলেন যে আজ নাকি কার আসবার কথা আছে।

মা রেডি হয়ে ছাতাটা নিয়ে বেরতে যাবে ঠিক তখনই অলোককাকুর গাড়িটা এসে দাঁড়ালো আমাদের বাড়ির সামনে।

যাক বাবা , রওনা হওনি তাহলে, আমি তো ভাবছিলাম বেরিয়েই পড়েছ। বারান্দার গ্রিল খুলে কাকুকে ভিতরে আসতে বলে মা জিজ্ঞাসা করে , আপনি আবার এই বৃষ্টি বাদলার মধ্যে কোথা থেকে ভিজতে ভিজতে এলেন ?

বলছি, আগে এক কাপ চা খাওয়াও, যা বৃষ্টি পড়ছে তাতে একটু বাদে বাদে চা না খেলে শরীরটা যেন একদম বাসী মুড়ির মত নেতিয়ে যাচ্ছে।

বৌমা, তুমি বরঞ্চ অলোকের সঙ্গে কথা বলো, আমি ততক্ষণে ওর জন্য চা করে নিয়ে আসি, ঠাকুমা রান্নাঘরের দিকে হাঁটা লাগালে কাকু জানালেন যে উনি গলফগ্রিনে এসেছিলেন।

আরে বলো না, সেই কবে থেকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করব বলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছি কিন্তু ওনার সময়ই হচ্ছিল না, আর আজ সকালে হঠাৎ ফোন করেছেন ভদ্রলোক, তা ওনার ওখান থেকে বেরিয়ে মনে পড়লো যে তোমারও তো আজ ক্লাস আছে , তাই ভাবলাম ফেরার সময় তোমাকে একেবারে গুরুজির ওখানে ড্রপ করে দিয়ে যাই।

প্রসঙ্গ বদলালো মা, আচ্ছা অলোক, একটা কথা বলতে পারেন?

কী?

বলছিলাম আজ মাষ্টার মশাইয়ের ওখানে কার যেন আসার কথা আছে, আপনি কিছু জানেন?

মায়েদের কথার মাঝেই ঠাকুমা চা নিয়ে এলো , ঠাকুমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে কাকু জানালেন যে ইসমাইল বালওয়া বলে এক ভদ্রলোক যিনি একটি ক্যাসেট কোম্পানির আংশিক মালিকও বটে তাঁরই আজ পণ্ডিত দাদুর ওখানে আসবার কথা , শুধু তাই নয় কাকু এ-ও জানালেন যে ভদ্রলোক আজ আসছেন ওনাদের কোম্পানি থেকে কিছুদিনের মধ্যে যে নতুন একটা রাগ সঙ্গীতের ক্যাসেট বার হবে তার জন্য নতুন মুখ খুঁজতে।

সাড়ে চারটে নাগাদ মা আর অলোককাকু বেরিয়ে গেলে ঠাকুমা আর আমি আবার গল্প শুরু করলাম, ও ঠাকুমা বললে না তো, তাল কাকে বলে?



লাঞ্চ সেরে সবে নিজের জায়গায় এসে বসেছি অমনি ইনটারকমে ক্যারলের গলা ভেসে এলো, ক্যারল হচ্ছেন গিয়ে আমাদের অফিসের রিসেপশনিস্ট, বয়স পঞ্চাশের ওপারে হলে হবে কী ভদ্রমহিলা মনে-প্রাণে যেন একদম কিশোরী, সবাই আমরা ওনাকে খুব পছন্দ করি, ওনার কথাবার্তায় বা আচার আচরণে সব সময় যেন একটা ভীষণ আন্তরিকতা মিশে থাকে, প্রতি বছর ক্রিসমাসের দিন উনি আমাদের সবাইকে ওনার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন, বার দুয়েক গিয়েওছি , ওনার স্বামী রবিনও খুব সহজ সরল মানুষ, জোরে জোরে কথা বলেন আর কথায় কথায় হেসে ওঠেন , স্বামী স্ত্রী দুজনাই ওনারা বুঝতে দেন না যে এক মাত্র ছেলের অ্যাকসিডেন্টে মারা যাওয়ার কী সুতীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন ওনারা।

এই যে কুশল, কোথায় ছিলে, সেই কখন থেকে ফোনে নো রিপ্লাই হয়ে যাচ্ছে ।

গলায় একটা নকল দুঃখের ভাব ফুটিয়ে তুলে বলি, সরি ডার্লিং, ফোনে না পেয়ে তুমি নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাচ্ছিলে, ইংরেজিতেই কথাগুলি বললাম ক্যারলকে ।

আমি না পেলেও কেউ কিন্তু সত্যি সত্যিই পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে! ক্যারলও হাসতে হাসতে ইংরেজিতেই উত্তর দিলো।

আমি শিওর তুমি এটা বলবে না যে সেই কষ্ট পাওয়া মানুষটি একজন পুরুষ!

না না সে মোটেও পুরুষ নয় বাট আই ডোন্ট নো হার নেম, জানতে চেয়েছিলাম বাট শি সেইড শী উইল কল ইউ এগেন।

কে হতে পারে মনের মধ্যে পরিচিতা সব ভদ্রমহিলাদের নাম নিয়ে ওপর নিচ করতে করতেই ফোনটা আবার বেজে উঠলো।

হ্যালো।

আচ্ছা, আপনি কোন কোম্পানির আফটার শেভ ইউজ করেন বলুন তো?

চমকে উঠি, বড় কোম্পানির অ্যাডের কোনো নতুন স্টাইল নয় তো, ভদ্রমহিলা ততক্ষণে আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই আবার বলতে শুরু করেছেন, চুপ করে রইলেন কেন, আচ্ছা তার মানে আপনি কোনো নির্দিষ্ট ব্রান্ডের আফটার শেভে ঠিক অভ্যস্ত নন, তাইতো? ফোনের অপর প্রান্তে রিনরিন করে কথাগুলো বেজে উঠলো।

মনে মনে এবার একটু ডিফেন্সিভ হয়ে যাই, বলতে পারতাম আমি শুধু পার্টিকুলার একটা ব্রান্ডেরই তাদের এডু কোলনের গন্ধ দেওয়া আফটার শেভ ইউজ করি, কিন্তু তার বদলে গলায় অকারণে একটা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলাম , ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড , মে আই নো টু হুম আই অ্যাম স্পিকিং?

ওরে বাবা, অফিসে দেখছি একদম সাহেব হয়ে থাকেন!

আর একবার মনের মধ্যে সব পরিচিতা মহিলার কণ্ঠস্বর রি-ওয়াইল্ড করতে থাকি, একজনের কথা মাথায় আসছে, কিন্তু শিওর নই, দেখাই যাক না, নিজে থেকে যখন ফোন করেছেন তখন শেষ অবধি নিশ্চয়ই আর নিজের পরিচয়টা গোপন রাখবেন না, সো বেটার টু হ্যভ পেসেন্স, মুখে বললাম, না, না, সেরকম কিছু নয়, আসলে মানে .........

এ বাবা, তোতলাচ্ছেন কেন, সামনা সামনি যখন কথা বলেন তখন তো আপনাকে বেশ স্মার্ট বলেই মনে হয় , বাই দ্য ওয়ে, আমি উর্মি, চিনতে পারলেন তো ?

উর্মির কথাই ভাবছিলাম, কিন্তু উর্মি আমার অফিসের ফোন নম্বর কোথা থেকে পেলো, সেদিন রেস্টুরেন্টে আমিই তো শুধু ওর বাড়ির ফোন নম্বর নিয়েছিলাম, মনের কথাগুলি আড়াল করে বললাম, চিনতে পারব না কেন, জানেন না, মানুষ চেনার ব্যাপারে পুরুষদের থিওরি সুন্দরী মেয়েদের থেকে ঠিক উলটো।

আচ্ছা! তাই নাকি! তা একটু বুঝিয়ে বলবেন সেই উলটো থিওরির ব্যাখ্যাটা!

দেখুন এটা তো মানবেন যে আপনারা মানে এই সুন্দরী মহিলারা স্বল্প পরিচিত পুরুষদের চিনতে পারলেও অনেক সময়ই কিন্তু না চিনতে পারার ভাণ করেন আর পুরুষরা দেখুন ঠিক এর উল্টো স্বভাবের হয়, মানে পুরুষরা সুন্দরী মহিলাদের চিনতে না পারলেও সেটা কখনোই প্রকাশ করে না , বরঞ্চ আগ বাড়িয়ে একদম পরিচিতর মত কথা বলতে শুরু করে দেয়, তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনাকে কিন্তু আমি ঠিকই চিনেছি ।

যাক বাবা! শুনে নিশ্চিন্ত হলাম! উর্মির গলায় ফাজলামির সুর।

আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করব? অভয় দিলে অবশ্য একটা নয় দুটো কথা জিজ্ঞাসা করতাম ।

ঠিক আছে, অভয় দিলাম, এবার জিজ্ঞাসা করে ফেলুন কী জানতে চান, তবে আশা করি প্রশ্নগুলি সেনসিটিভ হবে না।

না , না, মোটেও সেনসিটিভ নয় , আসলে আমি জানতে চাইছি যে আমার অফিসের ফোন নম্বরটা কোথা থেকে পেলেন?

ওহ! এই কথা! আমি ভাবলাম কী না কী! আরে বাবা সেদিন প্লেনে অফিসের নামটা বলেছিলেন মনে আছে, আর কোলকাতা টেলিফোন দপ্তর থেকে যে মোটা ডাইরেক্টরিটা দেয় সেটা দেখার কায়দা জানা থাকলে কোনো অফিসের ফোন নম্বর জোগাড় করাটা কি খুব একটা শক্ত কাজ, নিন এবার দ্বিতীয় প্রশ্নটাও করে ফেলুন ।

তখন ঐ যে আফটার শেভের ব্যাপারে কী সব যেন বলছিলেন, আই মিন আপনি কি আফটার শেভের বিজনেস করেন ?

এবার উর্মি আমার কথা শুনে হাসতে শুরু করে , না মশাই, আপনাকে দেখে যতখানি স্মার্ট ভেবেছিলাম আপনি কিন্তু আসলে ততখানি স্মার্ট নন।

তার মানে?

মানেটা খুবই সোজা , মেয়েদের শখ নিয়ে মুখে যতই বড় বড় কথা বলুন না কেন আসলে আপনি একটি হাঁদারাম।

দেখুন, এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে , আমাকে ভালো মানুষ পেয়ে যা খুশী বলে যাচ্ছেন, দ্যট ইজ নট ফেয়ার , মজা করেই কথাগুলি বললাম ।

ঠিক আছে হাঁদারামটা উইথড্র করছি, আপনি হাঁদারাম নন, ইউ আর এ ড্যাশিং হি-ম্যান , কি এবার খুশী তো?

থ্যাংকস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট, কিন্তু ঐ আফটার শেভের ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলুন না, খুব জানতে ইচ্ছে করছে ।

উর্মি যেন নিজের মনেই কথাটা বলে ওঠে, উফফ! কী কুক্ষণেই যে কথাটা বলেছিলাম! শুনুন মশাই অত বুঝিয়ে বলতে পারব না, স্রেফ এটুকু বলতে পারি যে আফটার শেভের ব্যাপারটা এখানে একটা রূপক, এর চেয়ে যদি বেশী কিছু জানতে চান তাহলে আপনার কোনো চালাক চতুর বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবেন, সে বলে দেবে, এখন বলুন তো কাল বিকেলে ফ্রি আছেন কি না।

একটু বাচালতা করার ইচ্ছে হলো, আমার মতো হাঁদারামরা তো ছুটির দিনে ফ্রি-ই থাকে , বলুন ম্যাডাম কাল আপনার জন্য কী করতে পারি?

আমার জন্য কিছু করতে হবে না, তবে কাল বিকেলে ফ্রি থাকলে মেনকাতে হৃষীকেশ মুখার্জীর যে সিনেমাটা চলছে সেটা দেখতে যাওয়া যেতে পারে।

এই সিনেমাটার কথা কালই একটা ম্যাগাজিনে পড়ছিলাম , হৃষীকেশ মুখার্জীর স্বপ্নের সিনেমা, প্রথমে ভেবেছিলেন অমিতাভ বচ্চনকে নায়ক করে বানাবেন আর নাম রাখবেন থ্যাঙ্ক ইউ, মিস্টার লাল, কিন্তু কোনো কারণে সিনেমাটা তখন বানানো হয়নি, এতদিন বাদে বানালেন, তবে নায়কের রোলটা করেছেন অনিল কাপুর, সিনেমাটার নামও বদল হয়ে গিয়েছে, যাইহোক একটু গম্ভীর হয়ে বলি , তা যাওয়া যেতেই পারে, বলুন তাহলে কটা টিকিট কাটব ?

এ বাবা! আমি আবার কখন আপনাকে টিকিট কাটার কথা বললাম ?

টিকিট না কাটলে সিনেমাহলে ঢুকব কী করে! অবশ্য নিউ এম্পায়েরর পর মেনকা সিনেমাহলটাও যদি আপনারা কিনে নেন তাহলে অন্য কথা!

এই যে মশাই শুনুন, ইয়ার্কি ছাড়ুন, ফর ইওর ইনফরমেশন, টিকিট অলরেডি কাটা হয়ে গিয়েছে!

একটু অবাকই হলাম, আমাকে না জিজ্ঞাসা করেই টিকিট কেটে ফেলেছে, ব্যাপারটা ঠিক বুঝ উঠতে পারছি না, ধাঁধাটা অবশ্য মিটলো উর্মির পরের কথাতেই, আরে কী হয়েছে দেখুন না, কাল আমার আর আমার এক বান্ধবীর সিনেমাটা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই বান্ধবী এইমাত্র ফোনে জানালো যে সে যেতে পারবে না, তাই ভাবলাম আপনাকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখি, আপনার তো আবার শনিবার শনিবার করে অফিস ছুটির পর সিনেমাহলের সামনে গিয়ে সিগারেটে টান দেওয়ার অভ্যাস আছে!

তাহলে কাল কি উর্মি আর আমিই শুধু ... কথাটা সোজাসুজি না জিজ্ঞাসা করে একটু ঘুরিয়ে বললাম, শর্মীও যাবে তো?

ও বাবা ! একদিনের আলাপেই দেখছি শর্মীতে একদম ফিদা হয়ে গিয়েছেন, তবে শুনে রাখুন, কোনো লাভ নেই, বোনুর কিন্তু একজন স্টেডি বয় ফ্রেন্ড আছে।

আর বোনুর দিদির? কোনো কিছু ভাববার আগেই মুখ দিয়ে কথাটা যেন ছিটকে বের হয়ে এলো।



পার্ক হোটেলে আজ বিকেল পাঁচটা থেকে আমাদের কোম্পানির একটা প্রোডাক্ট প্রেজেন্টেশন চলছে, এই প্রেজেন্টেশনটা এক্সক্লুসিভলি ফর এক্সিন, শুভঙ্কর ওদের অফিসের মোটামুটি সব কেষ্ট-বিষ্টুদেরই ধরে নিয়ে এসেছে, আমাদের জি এম সায়গল সাহেবও সকালের ফ্লাইট ধরে আজ কোলকাতায় চলে এসেছেন , প্রেজেন্টেশন শেষে এখন শুরু হয়েছে ককটেল হুইচ উইল বি ফলোড বাই ডিনার, হুইস্কির গ্লাস হাতে দূর থেকে সায়গল সাহেবকে দেখে যাচ্ছি, সেলস লাইনে বিস্তর নামডাক আছে লোকটার, সবাই বলে ওনার চোখদুটো নাকি ঠিক শকুনের মত , ভাগাড়ে পড়ে থাকা অর্ডারের সামান্য অপরচুনিটিও ঐ নজর এড়িয়ে যেতে পারে না, আজ সায়গলের সেই শকুনের দৃষ্টিটা গিয়ে পড়েছে এক্সিনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর রিচার্ডের ওপর , রিচার্ড সাহেবের আজ আর বোধ হয় নিস্তার নেই।

বয়কে ডেকে খালি গ্লাসটা আবার জ্যাক ড্যানিয়েলে ভরিয়ে দিতে বলি, ভালো লাগছে না, আয়নার সামনে আজকাল দাঁড়ালে নিজেকে ভীষণ ফেকলু ফেকলু বলে মনে হয়, প্রতিদিনকার একঘেয়ে রোলে অভিনয় করতে করতে ভীষণ যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, জীবনটাও একদম স্টিরিও টাইপ হয়ে গিয়েছে, কোনো বৈচিত্র্য নেই, কোনো চমক নেই , জাস্ট রেপ্লিকেশন অফ অ্যানাদার ডে , এই দেখুন না, সেই কবে থেকে প্রফেশনাল ফিল্ডে কাস্টমারদের একই কথা বলে আসছি , ক্লোজ ইওর আইস এন্ড বিলিভ মি, আই অ্যাম অফারিং ইও দ্য বেস্ট প্রডাক্ট, প্লিজ বাই ইট , আবার এই কথাটাই কখনও বা একটু ঘুরিয়ে বলছি, স্যর আপনি শুধু অর্ডার দিয়ে যান , রেস্ট অফ দ্য থিংগস আই উইল টেক কেয়ার, ইয়েস, রেস্ট অফ দ্য থিংগস ... রিয়েলি আই মিন ইট, চয়েস ইজ ইওরস, চাইলে ক্যাশ নিতে পারেন অথবা হোটেলের বন্ধ ঘরে অন্য স্বাদে শরীরের খিধেটাও মিটিয়ে নিতে পারেন ... আবার আপনার ফ্যামিলি বণ্ডিং যদি খুব স্ট্রং হয় তাহলে আপনার জন্য আমি একটা ওয়েল অর্গানাইজড ফ্যামিলি ট্রিপেরও ব্যবস্থা করে দিতে পারি ... ইউটিলিটি সেক্টরেও বুঝলেন আমার অনেক চেনাজানা আছে, বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট বা স্কুলে ভর্তি... আপনার শ্বশুর মশাইয়ের জন্য অমুক বাবার মালিশের তেল ... তারপর ধরুন আপনার বাড়ির টেলিফোন লাইন বিগড়ে গেলে তা মেরামত করে দেওয়া ...এভরিথিং ... এভরিথিং ক্যান বি টেকেন কেয়ার বাই দিস কুশল কর ... আপনাকে শুধু তার বিনিময়ে অর্ডার দিয়ে যেতে হবে , প্রতিদিন যন্ত্রের মতই এই কথাগুলি বলে চলেছি ...। সংসারেও আজকাল আমার রোল যেন একদম ফিক্সড , সেখানে আমি একটা অঙ্গপ্রতঙ্গওয়ালা রুটি রোজগারের মেশিন যেন। তেল, মবিল, ইনপুট, আউটপুট সবকিছু মেপে মেশিনটা চলতে থাকে আর ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছে মুখে জাল দেওয়া এঁড়ে বাছুরের মত টাকার প্রডাকশন দিয়ে যায় ... সত্যি কথা বলতে কী টাকাপয়সার জোগান দেওয়া ছাড়া আজকাল সংসারে আমার আর কোনো ভূমিকাই নেই... ভুল বললাম, ভূমিকা একটা আছে বটে, সেটা হচ্ছে মাঝে মাঝে উর্মির মুখ নিঃসৃত বাক্যবাণ বিনা প্রতিবাদে শুনে যাওয়া... কখনো সে বাক্যবাণে মিশে থাকে শ্লেষ আবার কখনো বা আক্ষেপ... আমার মত একটা স্বার্থপর অপদার্থ মানুষকে বিয়ে করে উর্মির জীবনটা নাকি একদম বরবাদ হয়ে গেছে... উর্মি যখন আজকাল এসব কথা বলে আমি তখন একদম চুপ করে থাকি , প্রতিবাদ করি নাই্‌, অবশ্য বাক্যালাপের সময় উর্মি ইনটারেপশন একদমই পছন্দ করে না, নিজেই তখন শুধু বলে যেতে চায়... একদম একতরফা একবজ্ঞা … কোনো কিছু শোনবার ধৈর্য তখন ওর থাকে না… এমনিতে অবশ্য আমাদের সংসারে সব কিছুই এখন উর্মির কন্ট্রোলে চলে...আমি সেখানে একটা পুতুল নাচের পুতুল মাত্র ... উর্মি সেই পুতুলটাকে ইচ্ছে মত সুতোয় বেঁধে নাচায় আর আমি ওর ইশারায় নাচতে থাকি, কখনো বা এক জন ব্যর্থ পুরুষ হিসেবে আবার কখনো বা একজন নীচ ইতর শয়তান হিসেবে …

তবু মাঝে মাঝে এই ঘুণ ধরা বুকটাতেও বিপ্লবের যেন জন্ম হয় তবে সেই বিপ্লবের খুব একটা তেজ থাকে না ... ভুস করে জ্বলে উঠেই তা আবার নিভে যায়, আর তখন রাতের আঁধারে কে যেন বলতে থাকে ... অনেক হয়েছে কুশল , এনাফ ইজ এনাফ ... ভাঁড় সেজে সংসারে এই ঘুরে বেরনোটা এবার বন্ধ করো … দ্য টাইম হ্যজ কাম হোয়েন ইউ নিড টু সে গুডবাই … না, না, জীবন থেকে নয়, গুডবাই টু দিস নৌটঙ্কি ... চুলোয় যাক প্রতিদিনকার এই ধরা বাঁধা জীবন, জাস্ট ক্লোজ ইওর আইস এবং বেরিয়ে পড়ো … ভেসে যাও অনির্দিষ্ট পথে ... দেখবে সেখানে কেউ চেনাশোনা থাকবে না… থাকবে না প্রভিসন ফর টেকিং ইউ টার্ন কিন্তু তোমার পরছাঁইয়া সেখানে হাতে হাত ধরে চলতে থাকবে তোমার সাথে … ধুর শালা, আজকাল যে কী হয়েছে কে জানে … দু’পেগ মাল পেটে পড়লেই ভুর-ভুর করে সব আঁতলামোর কথাবার্তা মনে আসে , হোয়াই শুড আই লিভ দ্য স্টেজ… বিয়াল্লিশ তেতাল্লিশ বছর ধরে এই যে আমি নিজেকে তৈরি করেছি তা কি এই ভাবে বিদায় নেওয়ার জন্য , নো, নেভার, তার থেকেও বড় কথা কার জন্যই বা আমি নিজেকে এই সংসার থেকে বিদায় জানাব ... উর্মি... সে তো অন পেপার আমার লিগ্যাল বৌ হলেও ওর জন্য আজ আমার আর কোনো ফিলিংস বেঁচে নেই... লিসন উর্মি , যদি শুনতে পাও তাহলে ভালো করে কান পেতে শোনো, ইউ আর কমপ্লিটলি ওয়াইপড আউট ফ্রম মাই হার্ট … ইয়েস, কমপ্লিটলি .... এই, এই, শোনো, শোনো...তোমাকেই ডাকছি ... ট্রেয়ের ওপর মদের গ্লাস সাজিয়ে হলের মধ্যে ঘুরতে থাকা বয়টা আমার ডাকে ঘুরে দাঁড়ায় … কাম হিয়ার ... আমায় মদ না দিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছ ...বেয়ারাটা সামনে এসে দাঁড়ালো ... ওয়ান লার্জ... ইয়েস, ওয়ান লার্জ... বুঝলে না এই কুশল কর একদিন লার্জার দ্যন লাইফ ইমেজ গড়তে চেয়েছিল ... ঠিক আছে, তোমার অত কিছু বোঝার দরকার নেই ... তুমি বরঞ্চ তাড়াতাড়ি আমার জন্য এক পেগ বানিয়ে নিয়ে এসো .... এন্ড মেক ইট পাতিয়ালা , ইয়েস পাতিয়ালা ... নো ওয়াটার ... নো সোডা ... ওনলি আইস ... এন্ড গেট ইট কুইকলি... হ্যাঁ কী যেন বলছিলাম ... মনে পড়েছে ... উর্মির কথা হচ্ছিল ... সত্যি বলছি উর্মি আমার জীবনে এখন কমপ্লিটলি একটা ক্লোজড চ্যাপ্টার ... কিন্তু এখানেই এসে কেন যেন আমি কনফিউজড হয়ে যাই, আচ্ছা সত্যিই কি উর্মি আমার জীবন থেকে একেবারে মুছে গিয়েছে … নো, আই থিং, ইটস নট ... সত্যিই যদি উর্মি আমার জীবন থেকে একেবারে মুছে যেত তাহলে কেন ঘুমের মধ্যে বারবার ও এসে দাঁড়ায় ... কেন আমি তখন অপলক দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকি... উর্মির মুখেচোখে তখন কোনো প্রসাধন থাকে না … ওর কালোপানা মুখটায় লেগে থাকে অদ্ভুত এক লাবণ্য আর সেই লাবণ্যের মোলায়েম আলোয় আমি যেন কেমন এলোমেলো হয়ে যাই … ওর কাজল কালো চোখদুটোয় তখন আমি পৃথিবীর সব ভালবাসা যেন টলোমলো করতে দেখি … গ্রাম্য বউ হয়ে তখন উর্মি আমায় ভাত বেড়ে দেয় … দাওয়ায় পিড়ি পেতে কাঁসার গ্লাসে জল গড়িয়ে দেয় আর আমি ভাতের গ্রাস মুখে তুললে ও হাতপাখা নিয়ে আমায় হাওয়া করতে থাকে যাতে আমার গরম না লাগে … ভাত ফেলে আমি দু'হাতে উর্মিকে জড়িয়ে ধরতে চাই … কিন্তু পারি না ... মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন ও ছিটকে চলে যায় ... ঘুম থেকে উঠে পড়ি আর দেখি আমার স্পর্শে উর্মির চোখেমুখে কী ভীষণ বিরক্তি … মুখে অবশ্য ও কিছু বলে না … নিষ্ঠুরের মত আমার হাতটা শুধু ওর শরীর থেকে সরিয়ে দেয় … উর্মির চোখমুখে তখন থাকে একরাশ ঘৃণা আর বিরক্তি, নাইট ল্যাম্পের আলোয় আমি সেই মুখের দিকে চেয়ে থাকি…

কী কুশল, বাড়ি যাবে না … চোখ মেলে তাকাই … উর্মি নয় … কোনের যে সোফাটায় এতক্ষণ একা বসেছিলাম সেখানে শৈবাল এসে দাঁড়িয়েছে , শৈবাল আমার অফিস কলিগ, এলোমেলো চোখে হলঘরটার দিকে তাকাই … হলঘরটা এখন প্রায় ফাঁকা … এক্সিনের লোকরা অনেক আগেই চলে গিয়েছেন, আমাদের অফিসের লোকজনরাও বাড়িমুখো , শুধু শৈবালের মত দু-একজন বিল-পত্র সেটল করবে বলে এখনো বসে রয়েছে ... উঠে দাঁড়াই , টলোমলো পায়ে দরজার দিকে এগোতে থাকি ... বাড়ি ...ইয়েস... বাড়ি তো ফিরতেই হবে ... পচতে থাকা ঘিনঘিনে এই মনটা নিয়ে দিনের শেষে আমাকে বাড়ি তো ফিরতেই হবে … কেননা ... উর্মি নয় ... সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার ঝিনুক ...

গত মাসেই ঝিনুক পনের থেকে ষোলোতে পড়েছে অথচ অদ্ভুত ছেলেমানুষি ভাব এখনও ওর চোখমুখে লেগে আছে , অফিস থেকে ফিরলেই আমার হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে বলবে , হে ড্যাড, হাউ ওয়াজ দ্য ডে, ল্যাপটপের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে সোফার দিকে এগোতে গেলে বাড়ন করবে , নো, নো, পাপা, নো সিটিং, আগে চলো, লেটস হ্যভ এ কুইক ডান্স, ঝিনুক ওর হাতের মুঠোয় আমার হাতদুটো নিয়ে গেয়ে উঠবে ... কাটে না সময় যখন আর কিছুতে...বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না ... জানলার গ্রিলটায় ঠেকাই মাথা...মনে হয় বাবার মত কেউ বলে না ... বাংলা গান ও সেরকম জানে না বা শোনেও না, কিছুদিন হলো আমিই এই গানটা ওকে শুনিয়েছিলাম, আমাদের এই বাপ-বেটীর সোহাগ অবশ্য উর্মি সহ্য করতে পারে না ... টিভিটা বন্ধ করে তাই হলঘর ছেড়ে ও বেডরুমে বা কিচেনে চলে যায় , উর্মির ধারনা আদর দিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে আমি নষ্ট করছি ... একটু একটু করে ঝিনুককে যে ও একটা ব্রাইট ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমিই যেন একমাত্র প্রতিবন্ধক … আই অ্যাম দ্য ওনলি ব্যারিয়র । কিন্তু উর্মি যতই ঝিনুককে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাক না কেন আমি জানি ঝিনুক আমাকে খুবই ভালবাসে, ছুটির দিনে তাই হঠাৎ হঠাৎ করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে, পাপা, তোমার মন খারাপ , তাই না, ওকে, ওয়েট এ সেক, লেট মি মেক ইউ হ্যাপি , ও জানে আমি কীসে খুশী হবো, তাই কাবার্ডের ভিতর থেকে রেকর্ড প্লেয়ারটা বের করে তাতে চড়িয়ে দেয় লং প্লেয়িং রেকর্ড, ওকে পাপা, লেটস হ্যভ সাম মিউজিক অফ মিসেস কাজল কর … আমার মন খারাপের দিনে মায়ের গান যে আমার মন খারাপ ভুলিয়ে দেয় সেটা ঝিনুক জানে … প্যার করনা দিল-এ-বেতাব বুরা হোতা হ্যায় ... অ্যামেজিং, হোয়াট এ লাভলি ভয়েস শী ওয়াজ হ্যাভিং, ঠাম্মার উচিৎ ছিল কমার্শিয়াল গানের জগতে ভেঞ্চার করা, আচ্ছা পাপা, তুমি বা দাদাই ঠাম্মাকে কেন সিনেমায় প্লে ব্যাক করতে ইনসিস্ট করলে না …ঝিনুকের প্রশ্নে আমি যেন কুঁকড়ে যাই , নিজের অজান্তেই নিজের হাতদুটোর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, কাজল করের গান চিরতরে যেদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেদিন এই হাতদুটোও কি নিঃশব্দে তার গলা টিপে ধরেনি?

পা দুটো ঠিকঠাক পড়ছে না , মাঝেমাঝেই যেন লাট খাচ্ছি, হলের বাইরে বেরনোর রাস্তাটা বারবার যেন গুলিয়ে যাচ্ছে, স্মৃতিরাও ঠিক এমনি গুলিয়ে যায় ... এই দেখুন না উর্মির কথা থেকে ঝিনুকের কথায় চলে এলাম কেমন, আবার ঝিনুকও এখন ফেড আউট, সেখানে এখন মিসেস কাজল কর ... নো , না ... দিস ইজ নট ফেয়ার ... এক জনের স্মৃতিতে এভাবে অন্যের ঢুকে পড়াটা মোটেই ঠিক নয় ... এটা অন্যায়... শুধু অন্যায়ই নয় … স্মৃতির এই খেলায় আমার ভীষণ ভয় করে … যদি স্মৃতির পিচ্ছিল পথ ধরে পাপান কখনো এসে দাঁড়ায় তখন আমি কী করব … না ভগবান … প্লিজ ডোন্ট ডু ইট … এত নিষ্ঠুর তুমি হয়ো না ... তুমি তো জানো উর্মি যতই মানতে চাক বা না চাক পাপান কিন্তু আজও আমার স্মৃতিতে ভীষণ ভাবে বেঁচে আছে … আমি কী করব বলো … আমি তো ঝিনুকের মত কাঁদতে পারি না … উর্মির মতন যখন তখন পাপানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতির চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে পারি না … তাই রাত বাড়লে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমি বাড়ির ছাদে এসে দাঁড়াই … ছাদের পাঁচিলের সেই জায়গাটায় এসে বলতে থাকি … নোটন নোটন পায়রাগুলি … ঝোঁটন বেঁধেছে … ও পাড়েতে ছেলেমেয়ে নাইতে নেমেছে ... অথবা ...জনি জনি ... ইয়েস পাপা ... ইটিং সুগার ... নো পাপা ... না ভগবান, প্লিজ তুমি এরকম করো না ... প্লিজ আমার মনের দুর্বলতম জায়গাটা নিয়ে তুমি এমন ছেলেখেলা করো না …



এই ট্যাক্সি ... রোককে... দাঁড়াও ... কোথায় যাচ্ছ তুমি ... মনে নেই আমাদের কথা হয়েছিল … তুমি আমায় বাড়ি পৌঁছে দেবে ... বাড়ি … ইয়েস … বাড়ি... ৩/৮ পঞ্চানন তলা রোড ... দেখবে বাড়ির সামনের নেম-প্লেটে এখনও লেখা রয়েছে ‘কাজল’ ... বাট ইউ নো, বারশো স্কোয়ার ফুটের ঐ বাড়িতে আতিপাতি করে খুঁজলেও কোথাও তুমি আজ আর মিসেস কাজল করকে খুঁজে পাবে না ... আমাদের বলবার আগেই শী হ্যজ লেফট দ্য হাউজ ... চলে গিয়েছেন আমাদের ছেড়ে... আর রেখে গিয়েছেন অজস্র স্মৃতি আর কিছু লং প্লেয়িং রেকর্ড ... উর্মি যেগুলি কাবার্ডের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে চায় ... কিন্তু ঝিনুক... আমার মেয়ে... আমার মন খারাপের দিনে সেগুলি টেনে টেনে বার করে ...


ক্রমশ