শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

আমরা কি শাড়ি পরব না এবার, -- পর্ব - ১৩

সে অ-নে-ক দিন আগের কথা... দুর্গাপুজোয় জন্ম ব'লে মাতামহ আদর ক'রে নাম রাখলেন 'উমা'... ঘরোয়া আটপৌরে উমা উমা উমা... তো সেই আটপৌরে গুড়গুড়ি উমার-জননী তখন যুবতী... রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিতা তিনি... তো অষ্টমীর সকালে মা বাবার হাত ধরে উমা চলতেন বেলুড়মঠে কাত্যায়নী দেবী দুর্গাকে দেখতে... ধপধপে সাদা ধুতিতে লাল টুকটুকে ভূঁড়ির গণেশকে যে কী পছন্দই ছিল তার... 'পুজো হয়ে গেলে আমি মহারাজকে ব'লে গণেশকে বাড়ি নিয়ে যাবো'... তখন এ্যাতো মানুষজনের ভীড় হতো না... মেয়েদের সারিতে বসা মহিলার দল হেসে গড়াতেন... কোন পরিচিত প্রবীণ সন্ন্যাসীর কানে গেলে গাল টিপে আদর ক'রে বলতেন, 'আরে তাই তো... তোর মতো একটা ফুটফুটে গণেশ-জননীকে ছেড়ে গণেশ কি আর আমাদের কাছে থাকতে চায়!!' তো এসব করতে করতেই উলু দিয়ে ঘটা করে আমার সাইজের 'কুমারী' এসে তাঁর উচ্চাসনে বসতেন... তাঁর অঙ্গে লাল টুকটুকে বেনারসি... বড়ি-নাকের টানা নথ থেকে আলো ঝলকায়, আলতা-রাঙা চরণ তার, আর হাতে পদ্ম... যেন রূপকথার গল্প থেকে উঠে আসা রাজকন্যা সে... তো আটপৌরে উমা বিস্ময়ে ভরে দেখতো আর মা দুগগাকে কায়মনোবাক্যে বলত, 'সামনের বার ওই টুকটুকে- বেনারসির কুমারী বানিয়ে দিও তো আমাকে'...কিন্তু অতো শাঁখ-ঘণ্টা-উলুর আওয়াজে মা'র কানে সে কথা ঢুকলে তো? তো, বেনারসি কুমারী না হতে পারলেও, তখন ক্লাস 'নাইন /টেন' হলেই কিশোরীরা ভিজে চুলখোলা অষটমীর সকালের গন্ধ হয়ে যেত... মায়েদের আলমারি ঘেঁটে বেরোতো তাঁদের বিয়ে বা বৌভাতের বেনারসি শাড়িটি... মায়েদের লাল পাড় সাদা কড়িয়াল বেনারসি বা গরদেরও খুব ডিম্যাণ্ড ছিল... সঙ্গে 'টাক' সেলাই-করা মায়েদেরই লাল ব্লাউজ... এদিক ওদিক ঘেঁটে গোটাকয়েক লাল চুড়ি আর মালা একছড়া যোগাড় হয়েই যেতো... অষ্টমীর সকালে সদ্যস্নাতা এই নতুন 'পদ্মকিশোরী' না ঝরে-থাকা- শিউলি-আলপনা, কে যে বেশি আলোময়ী হয়ে উঠতো কে জানে... সে-ই কবে থেকেই শাড়ির সঙ্গে সখ্যতা বাঙালি মেয়ের... সেই ট্র‍্যাডিশন সমানে চলছে... পুজোয় শাড়ি পরবো না?... একদিনের তরেও?... না বাপু, সত্যি বলছি, অমন কথাটি এখনো কর্ণগোচর হয় নি...