শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

আমরা কি পরব না শাড়ি? শাড়ি পরব না নাকি আমরা ?, -১

যশোধরা রায়চৌধুরী ঃ পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক , খ্যাতনামা কবি , কথাসাহিত্যিক । ঘুরতে ভালোবাসেন দেশ বিদেশ । কাজের বা ভ্রমণের জন্য সালোয়ার কামিজ বা ট্রাউজার টপে আপত্তি নেই । কিন্তু প্রিয় পোশাক অবশ্যই শাড়ি

শাড়ি ভাল করে ক্যারি করা শিখলামই না কোনদিন। লম্বা নই তাই ঝুলিয়ে আঁচল দেখাতেও পারিনা। সব সময়ে কাঁধে পিন।

আপিসে ছাড়া শাড়ি পরতে ভাল্লাগেনা। আপিসে আবার শাড়ি না পরলে ভাল্লাগেনা। লকডাউনে ভাইরাসের ভয়, বাড়িতে প্রথম কয়েক মাস থাকা, সারাদিন ঘরোয়া ম্যাক্সি বা পাতলা কামিজ পরে থাকা, মাসের পর মাস শাড়ি না পরা, যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আপিস শুরু হল, মাস তিনেক কেবল সালোয়ার কামিজ পরলাম । শেষ মেশ আগস্ট থেকে শাড়ি পরছি আপিসে। এসেই ধুয়ে ফেলছি। তাই এখন যত আর্টিফিশিয়াল সিল্ক, অর্থাৎ পাতি সিন্থেটিক মিশ্রিত শাড়ির ডাক পড়েছে।

তসর, পিওর সিল্ক, বেনারসি কোটা, জামদানি, এসব শাড়ি আরো কতদিন পরব না কে জানে !!!! কান্না পায় ওদের জন্য।

5f895aa0244e0.jpg

জামদানি


এবার পুজোতে শাড়ি কিনব না পিতিজ্ঞে করেছি। এত শাড়িতে আলমারিবন্দি রাখার প্রায়শ্চিত্ত। এখনো গত পুজোর না ভাঙা শাড়ি রয়ে গেছে আলমারিতে।

ভাল শাড়ি যেহেতু নিয়মিত পরা হয়না তাই তা রাখার জন্য অনেক কারিকুরি চাই। কেউ কেউ ড্রাই ওয়াশ করিয়ে নিমপাতা দিয়ে রাখে, কেউ বা তোয়ালে দিয়ে মুড়ে রাখে। কেউ কেউ ন্যাপথলিন পাতলা কাপড়ের পুঁটলিতে মুড়ে পাশে দেয়, কেউ বা আলমারিতে ওডোনিলের বার ঝুলিয়ে রাখে। কেউ কেউ শাড়ি হ্যাংগারে টাঙিয়ে রাখে, কেউ কেউ শাড়ি ভাঁজ করে রাখে। ভাল শাড়ি বের করে মাঝে মাঝে রোদে দেওয়ার চল ছিল একদা। যখন স্টিলের আলমারি সুলভ হয়নি, সবুজের ওপর লতাপাতাকাটা ডিজাইন করা ইয়াব্বড় স্টিলের ট্রাংকে ভাল শাড়ি রাখা হত আর ভাদ্রমাসের রোদ্দুরে ভাজাভাজা করা হত। অনেকটাই রোদে দিতে, কিছুটা মনে হয় অন্যদের দেখানোর জন্য। বিয়ের সিজনে বিয়ে বাড়িতে কটা দিন মাত্র পরতে পারা যায় কিনা। বাকি সারা বছর ত বন্দী।

5f8967529ebdf.jpg

আবার উঠেছে সেই চমৎকার রোদ্দুর। আহা এ রোদ চোখে দেখলেই মন হাঁকুপাঁকু করে শাড়ি রোদ্দুরে দিতে।

পুজোয় এবার আগের বছরের পাট না ভাঙা শাড়িই পরে ফেলব, তবে প্যান্ডেলে যাব না। ঠাকুর দেখব টিভিতে। আর মনে মনে মাকে জানাব, রূপংং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি!!!