শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

আকনবিন্ধীর সোনাপোকা,-- ঝ

(ঝ)

'লাহুরেকো রেলিমাই ফেসনৈ রাম্রো,

রাতো রুমাল রেলিমাই খুকুরি ভিরেকো'।

বিজনী চৌহদের মেয়ে হোস্টেলে দুধ দিতে আসা দাজুর আজ সত্যিই আনন্দ।ছেলে ফৌজে চাকরি পেয়েছে।ফৌজির ফ্যাশন থেকে বড় ফ্যাশন আর কিছু নেই।ফ্যাশনের রাজা ফৌজি। অ’মনেতরা। হাতে রুমাল,কোমরে খুকুরি,ফৌজির মান সুন্দর নেই।

দাজুর আনন্দের কথা।দিন-কাল বড় খারাপ হয়ে পড়েছে। তার ছেলের বয়সী সোপাই তীরখেলার বুকি হয়ে বসেছে। বরাবাজারে তার সম্প্রদায়ের যুবক ছেলেকে স্থানীয় যুবকরা প্রতিটি কথায় প্রত্যাহ্বান জানাচ্ছে। ছোট ছেলের মতলব যে বড় সুবিধার নয়।দুধের চেয়ে বিলেতি বোতলের জলের প্রতি তার আকর্ষণ বেশি। গরু-গোয়াল দাজু সামলাচ্ছে। ঠিক সেই সময় বড় ছেলের ফৌজি চাকরির খবরটা এসেছে।

সে তেজিমালা গুরুঙকে খবরটা দেবার জন্য উশখুশ করতে থাকে। তেজিমালা আসে।দাজুর আনন্দের ভাগ নেয়।খুব ঘনঘন হতে থাকা পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং উত্তেজনার মধ্যেও মানুষগুলো জীবনকে যে উদযাপন করতে পারে।জীবনের এটাই বোধহয় বহমান স্রোত।শিলং শহর তবু বহু সুরক্ষিত।আশেপাশের অঞ্চল গুলোতে রাতের ভেতরে গরু-গাই ঘর-বাড়ির মানুষজন পুড়ে ছারখার হয়।‘দখার’’দখার’শুনে শুনে নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষেরা আতঙ্কিত হয়ে উঠে।এখনও ‘দখার’?ভূমিপুত্ররা ওদের কর্মসংস্থাপনগুলো দাজুরা কেড়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে।

পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রী তেজিমালা গুরুঙ শিলঙে বাড়ি থেকে করতে পারা গবেষণার কাজের জন্য হোস্টেলে এসে থাকতে শুরু করেছে।এই সিদ্ধান্তের গোড়াতে এই ধরনের উত্তেজনা এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ।নিঃসঙ্গ মা মেয়েটিকে দিনের বেলা বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আতঙ্কে ভোগে।ঝালুপাড়ার তার আত্মীয় স্বজন মাকে পরামর্শ দিল,হোস্টেলই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।হোস্টেল থেকে একটু দূরে তার বিভাগ।

তার সম্প্রদায়ের মানুষ গর্ব করে বলে –গোর্খা চাকরির খোঁজে নয়,চাকরিজীবী হিসেবে শিলং এসেছিল।১৮২৬-২৭ সনে অষ্টম গোর্খা রাইফেলের সৈনিকরা ঐ দিকে সিলেট হয়ে তখনকার অসমের অধীনে থাকা চেরাপুঞ্জিতে এসে পৌছেছিল।সেখান থেকেই ব্রিটিশরা শাসনভার চালাতে শুরু করে।অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং তার চেয়েও বেশি স্যাতঁসেতে আবহাওয়ার জন্য ব্রিটিশ বেশ বেকায়দায় পড়েছিল।

তখনই হেডকোয়ার্টারের জন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধানে ছিল।কঠিন পরিশ্রমের শেষে একদিন অষ্টম গোর্খা রাইফেলের একজন সৈনিক ব্রিটিশ কমান্ডারকে নিচে,দূরের ঐ সুন্দর জায়গাটির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলঃ শ্বি,লং… তাই জায়গাটার নাম হল শিলং।

১৮৬০ সন পর্যন্ত শিলং একটি ছোট গ্রাম ছিল। ১৮৬৬ সনে অষ্টম গোর্খা রাইফেলের হেডকোয়ার্টার শিলঙে চলে আসে।সুন্দর জলবায়ুর জন্য জায়গাটা দ্রুত গুরুত্ব লাভ করে।

শিলং শব্দের উৎপত্তির এই আখ্যান শুনলে খাসি সম্প্রদায় উত্তেজিত হয়ে উঠে।শিলং শব্দের উৎপত্তি Leishyllong the superman,অর্থাৎ ভগবান।স্থানীয় আখ্যান এবং জনশ্রুতি অনুসারে Shyllong এক সুন্দর যুবক।বিছি নামের গ্রামে কুমারী মাতার গর্ভে Shyllong এর জন্ম হয়।শ্বেইলং প্রকৃ্তপক্ষে শিলঙ এর আরাধ্য দেব এবং উৎপত্তিরও মূল।

১৮৬৪ সনে এই জায়গাকে নতুন প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।বহু বছর ধরে শিলং পূর্ববঙ্গের ও গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল।

১৮৬৬ সনে শিলঙে বসবাস করে চাকরি করা গোর্খা রাইফেলের সৈনিকরা অবসরের পরে আর দার্জিলিঙে ফিরে গেল না।শিলঙের আশেপাশে জায়গাগুলোতে তারা একসঙ্গে বসবাস করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে ও শিলং নিয়ে আসে।একই ভাষার সুবাদে নেপাল থেকেও প্রব্রজন শুরু হয়।তাদেরও বেশিরভাগই রাজধানী শহর শিলঙের চেয়ে আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।জীবিকার উৎস মূলত চাষবাস এবং তার সঙ্গে গো-পালন।

বিচ্ছিন্নভাবে এই উত্তেজনা বহুদিনের পুরোনো কথা।১৯৭২ সনে অসম থেকে শিলং কে রাজধানী হিসেবে নিয়ে নতুন করে মেঘালয় রাজ্যের সৃষ্টি হওয়ার সমানই পুরোনো এই উত্তেজনা।মাঝে মধ্যে চাপা পড়ে গেলেও এই আগুন যে কোনো একটা অজুহাতে পুনরায় জ্বলে উঠতে আরম্ভ করে।

অসম মেঘালয় সীমার লাম্পি গ্রামের দখল নিয়ে আরম্ভ হওয়া যুদ্ধ সদৃশ মনোভাব যখনই জেগে উঠে ,মেঘালয়ের ভেতরের প্রান্তরে দুই মোষের যুদ্ধে নেপালিদের মরণ হয়।লাম্পি ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় গোর্খা অসমের পক্ষাবলম্বন করেছিল।অসম পুলিশের গুলিতে চারজন খাসি যুবকের প্রাণ গেল,এর পরের ঘটনা প্রবাহে মেঘালয় নিবাসী নেপালিভাষীরা তার প্রায়শ্চিত্ত করছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হল প্রব্রজনের সমস্যা।বরাপানীতে ৭০ বছরের লোকনাথকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারল।জয়ন্তীয়া পাহাড়ের কয়লাখনির নেপালি শ্রমিকদের তাড়াল,জায়গায় জায়গায় বসতি জ্বলল।কোথাও তীর ছোঁড়া হল,কোথাও শিলাবৃষ্টি,কোথাও আগুন।মেঘালয় বিধানসভা উত্তাল হল। চারপাশে নেপালিদের উদ্দেশ্যে Quit Meghalaya নোটিশ জারি হল।এমনকি সরকারি অফিসাররাও রেহাই পেলেন না।১৮২৭ সন থেকে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করা গোর্খাদের থেকে নেপালের প্রব্রজনকারীকে কেউ পৃ্থক বলে মানতে রাজি নয়। নেপালিভাষী মানেই নেপালি।ভারত-নেপাল চুক্তি কোথায়?সেরকম কোনো চুক্তি আমরা মানি না। ১৯৮৭ সনে মেঘালয় থেকে ত্রিশ হাজার গোর্খা এবং নেপালিদের বহিস্কার করা হল। এই বহিস্কৃতরা কোথায় গেল?

ওদিকে সুভাষ ঘিসিঙের আন্দোলন জঙ্গী হয়ে উঠেছে।

এর মধ্যেও যে দাজু হাসার মতো উপাদান পেয়েছে। পুড়ে ছারখার হওয়া ঘরের খুঁটি উপড়ে ফেলে আবার নতুন করে ঘর তৈরি করার কাজে নেমে পড়েছেন।

তেজীমালা হোস্টেলের রুমে ঢুকল। দাজুর মনে আনন্দ ঠিকই। কিন্তু স্বাভাবিক পরিবেশ হলে এই আনন্দের ভাগ দাজু হোস্টেলের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করতেন।আজকের অবিশ্বাসের পরিবেশে সে আনন্দটা কেবল তার সঙ্গেই ভাগ করে নিল। তার রুমমেট বনশ্রী এইমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।সেমিস্টারের ছাত্রী,বয়সেও ছোট যদিও তেজীমালা মনের ভাব তার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। দাজুর আনন্দের কারণটা সে বনশ্রীকে বলবে নাকি? করিডর দিয়ে খট খট শব্দ করে কেউ ওদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। দরজায় টোকা পড়ল।বোধহয় মল্লিকা বসুমতারী।

-বনশ্রী,তোমার ভিজিটর।পার্লারে বসে আছে।

এত সকালে কে এল? উষ্ণ কাশ্মীরী চাদরটা গায়ে মেলে নিয়ে বনশ্রী দ্রুত রুমের বাইরে চলে এল।

লেবেল ফ্লোরের সমান উচ্চতার সামনের বনানির এক মাথায় ভিজিটরস পার্লার।হোস্টেলটাকে বনানির সঙ্গে সংযোগ করা ছোট সেতুটার রেলিঙে মেয়েরা অর্ন্তবাসগুলো মেলে দিয়ে দেখতে না পারার অবস্থা করে রেখেছে।সেতু পার হয়ে সে পার্লারের দিকে এগিয়ে গেল।ছোট্ট পার্লারটার বড় টেবিলটাকে ঘিরে সোফাগুলো।বনশ্রী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল।

-দাদা!!

সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল। বায়োলজিকেল ক্লক দেখছি আজ আগাম সংকেত জানাল না।

অরুণের পরণে একটা ছাইরঙের জ্যাকেট। মাথার চুলগুলোতে শিলঙের ভিজে সকালের হাতবুলানোর স্পষ্ট ছাপ। সে বোনের দিকে প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে তাকাল আর মুচকি হাসল। বেরিয়ে এসেছে বনশ্রী।

-এত বেলা পর্যন্ত শুয়ে থাকিস নাকি তুই!

তৎক্ষণাৎ বনশ্রীর শরীরী ভাষা একজন কিশোরীতে রূপান্তরিত হল।আদর খাবার জন্য ছোট্ট মেয়েটি হয়ে সে গরম কাপড়টা দিয়ে নাক পর্যন্ত ঢেকে নিল।

ছিঃ মুখ ঢেকে নিলে সে কথা বলবে কীভাবে?সঙ্গে সঙ্গে অজস্র প্রশ্ন তার মুখের সামনে এসে ভিড় করেছে।মা ওরা ভালো আছে তো?সে যে হঠাৎ এসে উপস্থিত হল,কোথা থেকে? তারমধ্যে এত সকালে এল কীভাবে?শিবসাগরের সোনারি থেকে তো দূরের কথা,খোদ জেলা সদর থেকেই মেঘালয়ে আসার জন্য রাতের কোনো বাস নেই। দিনের বাসই অগতির গতি।তারমানে দাদা কালই এসেছে আর আজ তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

তার জিজ্ঞেস করা এবং জিজ্ঞেস করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা সমস্ত কথার উত্তর সে দিয়ে গেল। সে গতকাল সন্ধ্যেবেলা শিলং পৌছেছে।তখন হয়তো তাদের হোস্টেলের ভিজিটিং আওয়ার পার হয়ে গিয়েছিল বলেই হয়তো তার সঙ্গে গতকাল দেখা করার সুযোগ পায়নি। রাতটা কোথায় থাকল সে? কেন? তার বন্ধু প্রশান্তের সঙ্গে।

দাড়াঁ!কেবল তুই জিজ্ঞেস করবি?এখানে,প্রশান্তের সঙ্গে কখনও দেখা হয়?

বনশ্রী অনুমান করল-তাহলে প্রশান্ত প্রশাসনীয় স্তরে তার অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়টা দাদাকে বলেনি।ভালোই হয়েছে।ছোট কথা,তত্থাপি শুনলে বাড়ির মানুষগুলো মিছামিছি চিন্তা করবে।কে জানে তখন হয়তো ভাববে সে হোস্টেলটাকে নিজের বলে ভাবতে পারেনি বা হোস্টেল ও তাকে নিজের করে নিতে পারেনি।প্রশান্ত ঠিকই ধরেছে। দূরে থাকা আপনজনের ভালো থেকে আরও ভালো খবর পেলে তবেই আত্মীয়স্বজনরা নিশ্চিন্ত হয়।

প্রশান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনীয় চৌহদে য়ারিকে থাকে।স্কলারশিপের সমস্যা না থাকলে বা ফীস সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না থাকলে সেখানে ছাত্রছাত্রীদের যাবার কোনো প্রয়োজনই হয় না,সময়ও থাকে মা। ঝুনঝাপ্পার অধ্যায়টা এখন পার হয়ে গেছে।তাছাড়া সেই ধরনের পথের সমস্যাবলীর মোকাবিলা করার মতো বনশ্রীর যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে।একান্নবর্তী পরিবারে বড় হওয়ার অনেক সুফলের মধ্যে এটিও একটি।সে হোস্টেলে তার বন্ধু বান্ধবদের একটা আভাস দাদাকে দিল।রুমমেট সিনিয়র স্কলার তেজীমালা,স্নেহময়ী প্রীফেক্ট গ্রেস ফার্ণাণ্ডেজ,সুশীলা নন্দিনী,গপাল পাহারী,গাজাখুরী গল্প বলা মায়া বরঠাকুর,কথা বার্তায় চৌকশ দেবাহুতি আর তাকে জংঘলী নাম দেওয়া মীম আর ক্রীণ।

-জংঘলী?তুই এত নোঙরা থাকিস নাকি?

-সেজন্য নয়।আমার নামটা নাগামিজ করে নিয়েছে।‘বন-জংঘল’থেকে জংঘলী।

-আমরা আমাদের মেয়েকে এত সুন্দর নাম দিয়েছি,ওরা তার এই পরিণতি করেছে!

কিশোরীর খোলসটা থেকে বেরিয়ে এতক্ষণ পর্যন্ত সাহসী মেয়ে উঠতেই অরুণ বিদায় নিতে চাইল।এখন তার মনে পড়ল আজ দেখছি দাদা খোলা দিনে এসেছে।দাদা সারাটা দিন থাকলেও তাকে ক্লাসে থাকতে হবে।আর দুই ঘণ্টার মধ্যেই দাদা চলে যাবে বলেছে যখন তাকে এখনই উঠতে হবে।এবার সে বলে উঠল-এটাকে কী আর আসা বলে!ভোরবেলা স্বপ্ন না বাস্তব সে কথা বুঝে উঠার আগেই দাদা এল এবং সে ক্লাস করে ফিরে আসতে না আসতে দাদা শিলং ছেড়ে যাবে।শনিবার এলে অন্যান্য বার দাদা তাকে শিলং শহরটা ঘুরিয়ে দেখায়।এবার দেখছি আসা না আসা একই হল।

-তুই এত মন খারাপ করলে আমি যেতে পারব না।

-বনশ্রী নিজেকে সামলে নিল। সে দাদাকে একটা ভালো খবর দিয়ে পাঠাবে।বাড়ির সবাই আনন্দ পাবে।

-আমাদের প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট বেরিয়েছে দাদা। জান,আমি সবার চেয়ে উপরে।

অরুণ তার দিকে না তাকিয়ে কথাগুলি শুনছিল।এখনও সেভাবেই রইল।হাতটা মাত্র পেন্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিল।তার ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি দেখে সে অবাক হতেই দাদার হাতটা পকেট থেকে বের করে নিল।মুঠো করা হাতটা সে বনশ্রীর বাঁহাতে মেলে দিল । একটা দশ টাকার নোট।টাকাটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বনশ্রীর হাতটা মুঠো করে দিল।অরুণের মুখটা উদ্ভাসিত।

-জংঘলী ,কুতে থাকিছ?ইফালে চাবি তু একবার কুন আইচে।

মোটের উপর আজ বায়োলজিকেল ক্লক বিকল। এবার নমি ভূঞা।সোজা তার রুমে চলে এসেছিল।তেজী পার্লারে পাঠিয়েছে।পথে দেখা হল মীম,ক্রীণ এবং দেবাহুতি ত্রিমূর্তি।

নমি এসেছিল শিলঙের পাহাড়ের পাথর ভেঙ্গে নমুনা সংগ্রহ করা জার্মান দম্পতি মিঃ এবং মিসেস হফম্যানকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য।গত এক সপ্তাহ ধরে হফম্যান দম্পতি পর্বতে-কন্দরে পাথর ভেঙ্গে বেড়িয়েছেন।বৈজ্ঞানিক স্বামীকে সঙ্গ দেওয়া এবং সহযোগিতা করা মিসেস হফম্যান নিজে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রধান অধ্যাপিকা।নমি ভূঞা যথারীতি এই বিচিত্র বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধা দম্পতির বন্ধু হয়ে উঠল। বিদেশে নিজের মানুষ। তাই গত একটি সপ্তাহ নমি ভূঞাকে ক্লাসরুমে একেবারেই দেখা যায় নি।

নমি ভূঞার সংযোগগুলো বিচিত্র।শুধু কি পাথর ভাঙ্গা হফম্যান দম্পতি? শিলঙে আসা বিদেশি পর্যটক অবলীলাক্রমে নমি ভূঞার বন্ধু হয়ে পড়ে।ফলে নমি ভূঞার ক্লাসে উপস্থিতির গ্রাফ ক্রমশ নিচের দিকে নামতে থাকে।এক নম্বর চৌহদের বিভাগগুলো বনভোজের জন্য নমি ভূঞার সৎসঙ্গ পেল না।সেই দিনগুলো নমি ভূঞা শিলঙের চুনা পাথরের গুহার অধ্যয়নে আগত কোনো বিদেশি গবেষকের সঙ্গে ব্যস্ত ছিল।সেমিস্টারের ক্লাসনোটসগুলো যখন খুশি সে বনশ্রীর কাছ থেকে পেয়ে যাবে বলেই সেসব নিয়ে তার খুব একটা উদ্বেগ নেই।

পুলিশ বাজারের অভিজাত হোটেলটি থেকে আজ হফম্যান দম্পতি গুয়াহাটি চলে গেছেন।তাঁদের সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসার পথে সে হোস্টেলে বনশ্রীর রুমে দুই ঘণ্টা কাটিয়ে এক সঙ্গে ক্লাসে বেরিয়ে যাবে বলে পরিকল্পনা।ভোরবেলাতেই ওয়াই ডবলিউ সি এর হোস্টেল ছেড়েছে যখন ক্লাসে যাওয়ার আগে বনশ্রীর সঙ্গে বিজনী হোস্টেলের সকাল বেলার ভাত দুগ্রাসও খেয়ে যাওয়া হবে।

বনশ্রী খুশি হল।দাদাকে পার্লারে একা ছেড়ে যেতে হবে না।সে নমির সঙ্গে অরুণের পরিচয় করিয়ে দিল।দুজনকেই পার্লারে ছেড়ে বনশ্রী হোস্টেলের রুমের উদ্দেশে রওয়ানা দিল।ক্লাসে যাবার জন্য তৈরি হতে হতে নমি অরুণের সঙ্গে কথা বলুক,রাঁধুনি কঙকে অরুণকে পার্লারে এক কাপ চা পাঠিয়ে দিতে বলে এল। নমি অতিথি হিসেবে ভাত খাবে এবং তারপরে তিনজনেই লাইমুখরা পর্যন্ত এক সঙ্গে যাবে।

ক্লাসের জন্য তৈরি হয়ে বনশ্রী যখন নমিকে ভাত খাবার জন্য ডেকে নিতে পার্লারে এল ,অরুণের সঙ্গে সে তখন বহুদিনের পরিচিতের মতো কথা বলছে।সে ডাকার পরেও সহজে উঠতে চাইল না।নিজের কথায় দুজনেই মগ্ন হয়ে আছে।

তার সমাজসেবা অধ্যায় আরম্ভ করেছে নিশ্চয়।ECHO নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি এক একটি গ্রামের দত্তক নিয়েছে।এক একটি গ্রামের সর্বাত্মক উন্নয়নের লক্ষ্য ECHOর। দারিদ্র নয়,শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং জনহিতৈষী পরিকল্পনাগুলো বিষয়ে মানুষকে সহজ সরলভাবে বুঝিয়ে দিতে পারাটাই হল আসল সমস্যা।কেন্দ্রীয় সঞ্চয়ের সত্তর শতাংশ কাজে লাগানো হয় এই প্রদেশে।মাঝপথে লুটেরার দল এখানে আছে যদিও অসম এবং মণিপুর মাঝপথের লুটেরাদের স্বর্গ।অসমের পথঘাটের দুরবস্থাই চিৎকার করে জানিয়ে দেয় যে সত্তর শতাংশ দালালের পকেটে ঢুকে। মণিপুরের বিকেন বলে,ওদের রাজ্যে কেন্দ্রীয় ধনের কুড়ি শতাংশ জনগণের,বাকিটা দালালের।

লাইমুখরা থেকে অরুণ ডানদিকে পুলিশ বাজার অভিমুখী বাসে উঠে বসল।নমির সঙ্গে দেখা হয়ে অরুণ সারা দিন না থাকার দুঃখটাও বনশ্রীর ইতিমধ্যে নাই হয়ে গেছে। রাস্তার ওপার থেকে দুজন বাসে না বসা পর্যন্ত অরুণ তাকিয়েই রইল।

-তোকে কিন্তু আমি বড় ঈর্ষা করি।–অরুণ থাকা পর্যন্ত অসমিয়ায় কথা-বার্তা বলা নমি পুনরায় ইংরেজিতে ফিরে এল।

-কেনই বা?

-এত ভালোবাসা পাস।মানে দাদা কীভাবে বোনকে ভালোবাসে এই প্রথম কাছ থেকে দেখলাম।দুই ঘণ্টা এক সঙ্গে আছি ,দেখে যা বুঝেছি—তা থেকেই বোধহয় ঈর্ষা জন্মেছে-পরিবার একেই বলে তাই না?

-ঈর্ষা করিস না।আমার দাদা,তোর ও দাদা।

রিস্ট ব্যাণ্ড বাঁধা হাতে নমি ভূঞা বনশ্রীর হাতটা স্পর্শ করল।যেন উলটো সে বনশ্রীকে সান্ত্বনা দিল।ইতিমধ্যে অরুণ দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে।বাস চলতে শুরু করল।

ফায়ার ব্রিগেড স্টপ পাওয়ার আগে আগে ওরা উঠে আসা বাসটার প্রতিটি নিয়ম কানুন পরিস্ফুট হল। ইউনিভার্সিটি বাসের কুপন দুজনের কাছেই আছে,তবু দুজনের একজনেরও ইউনিভার্সিটি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হল না।বোধহয় অরুণ সঙ্গে আসার জন্য সচরাচর ধরণে বনশ্রী লাইন বাসে বসে পড়ল। ওরা ফায়ার ব্রিগেড পৌছাতেই পাশ দিয়ে ইউনিভারসিটির সুন্দর বাসটা অতিক্রম করে গেল।

জিংকিং স্টপেজ পেতে পেতে দুজনের মনেই বিরক্তির সৃষ্টি হল।দুজন কেবল দুজনের চোখের দিকে তাকাল।কপাল ঢেকে রাখা ঘোড়াফানের মতো চুল ঝাঁকিয়ে নমি ডানদিকে ইঙ্গিত করল। বনশ্রী সম্মতি সূচক ভাবে মাথা নাড়াল।

জিংকিং বাস স্টপেজে নেমে দুজনেই ডানদিকে রাস্তা পার হল।এখান থেকে একটু দূরে এগিয়ে বাঁদিকের উঁচু টিলার সংলগ্ন ময়ূরভঞ্জ চৌহদের পূবদিকের ছোট প্রবেশদ্বার।এমনিতে সংক্ষিপ্ত পথ যদিও চৌহদে উঠে যাবার চেয়ে এদিকে নেমে আসাটা সহজ।টিলায় উঠে যাওয়া পথ মসৃণ যদিও ভীষণ খাড়াই।ভোরবেলা,তাই রাস্তাটা দিয়ে নেমে আসার সময় কাউকে দেখা গেল না।

গ্যারেজ দুটির মাঝখান দিয়ে রাস্তায় ঢুকে ওরা রাস্তার মাঝামাঝি গিয়ে পৌছাল।একপাশে উঁচু দেওয়াল এবং অন্যপাশে সম্ভ্রান্ত বস্তি।চৌহদ্গুলো ছবির মতো মনোরম এবং পরিষ্কার।ঘরগুলো ছোট হলেও চোখ জুড়িয়ে যায়।বাগিচাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ পটু হাতের নিদর্শন।সোনালি রোদ পাইনের ফাঁক দিয়ে পড়ায় বাগানের দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়।

মাঝ মধ্যে দুই একটি কম বিত্তশালী গৃহস্থ। মসৃণ এবং অন্তরঙ্গ।চারসীমার কাঁটা তারের বেস্টনিতে নানা ধরনের ফুল লতা এবং স্কোয়াশ লতার অতিরিক্ত আয়োজন।

উঁচু খাড়াইয়ের পথটার ঠিক বাঁকটাতে একটা বেড়ায় বাইতে থাকা একটা লতা দেখে নমি সামনে এগিয়ে গেল। যে কোনো একটি লতার মতোই যদিও গোলাকার পাতাগুলোর একটি দিক সাদা। পথটা দিয়ে নিচে নেমে আসার সময় এই বৈশিষ্ট্য নিশ্চয় চোখে পড়বে না,কিন্তু নিচ থেকে ওপরের দিকে যাবার সময় সাদা দিকটা তার একক স্থিতি আড়াল করে রাখতে পারে নি। তার মনে হল ,লতাটা বন্য।গৃহস্থের বেড়ায় লতাটা সীমার বাইরে থেকে আরোহন শুরু করেছে।

এখান থেকেই খাড়াই আরম্ভ হয়েছে মাত্র।বড় করে নিঃশ্বাস টেনে একবারে রাস্তাটা অতিক্রম করার আগে আগে সে বনশ্রীকে লতাটা দেখাল।বনশ্রী সামনে এগিয়ে গেল।

পাতাগুলোর নিচের দিকে চ্যাপ্টা হয়ে লেগে থাকা সোনালি রঙের গোল বস্তুগুলো নাড়াচাড়া করে উঠল।

-টুবুকি-লতা!কতদিন পরে দেখলাম!

-কী করছিস?দেখিস দেখিস!হাত দিয়ে ছোঁস না।বন্য লতা,তাতে ঐ যে ছোট ছোট পোকা রয়েছে।বিষাক্ত হতে পারে-কোনো ঠিক নেই।

একটা পাতার নিচ থেকে ইতিমধ্যেই বনশ্রী পোকাটাকে দুই আঙ্গুলে বন্দি করে এনেছে।ফালা মটরের সমান,চ্যাপ্টা বুক আর কাছিমের পিঠের মতো সোনালি বর্ণের পোকাটা সে হাতের তালুতে নিয়ে দেখল।হ্যাঁ,সোনাপোকা।নমির বাধানিষেধ এবং প্রবল আপত্তির মধ্যে সে আলফুলে নিজের দুই ভুরুর মাঝখানে সোনাপোকার টিপ পরল।

তার পাতলা দুই ভুরুর মাঝখানে সূক্ষ্ণ একটি সঞ্চালনের অনুভব।বনশ্রী পূর্ণ দৃষ্টিতে নমির দিকে তাকিয়ে হাসল।কিছুক্ষণ আগের আতঙ্ক এখন বিষ্ময় হয়ে নমির মুখে ফুটে উঠেছে।

--আমরা টুবুকি লতা বলি।পোশাকি নাম আকনবিন্ধী।আর আকনবিন্ধীতে এইসব সোনাপোকা।

বনশ্রীর দিকে তাকিয়ে নমি হঠাৎ থেমে গেল।তার সামনে সোনালি বর্ণের টিপ পরা এই মেয়েটির গ্রামীণ সরলতা তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে।সে সম্মোহিতের মতো বনশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে।

-বনশ্রী!তুই এখন নামে-কাজে সম্পূর্ণ।

-জান নমি,আমার নিজেকে এখন সেই শৈশবের মেয়েটি বলে মনে হচ্ছে। তখন কি করেছিলাম জান কি?গ্রামের সব মেয়েরা বড়দের মতো করে সাজগোজ করতাম।মায়েদের কাপড় চুরি করে পরি।সিঁদূর নয়,সোনাপোকার টিপ পরি।যখনই ঢিপিতে আকনবিন্ধী দেখি আমাদের মহা আনন্দ।সোনাপোকা আছে।আকনবিন্ধী সোনাপোকার ঘর।মায়েরা বলে,আকনগাছ যেন পুরুষ।আকনবিন্ধী হল স্ত্রী।আর সোনাপোকা হল ছেলেমেয়ে।

-আবার বল।কী সুন্দর সংসার!

-আকন এক ধরনের গাছ।ঔষধি।আকনবিন্ধীর পাতাগুলো আকন গাছের মতোই কিন্তু ছোট।আর এই যে,মায়ের বুকে ঢুকে থাকার মতো এইসব ছেলেমেয়ে!আজকাল এই আকনবিন্ধী বা টুবুকি-লতা নাই হয়ে আসছে।

-হারিয়ে যেতে চলা অনেক রঙের মধ্যে এটাও এক ধরনের রঙ।কিন্তু বনশ্রী,টিপটা তোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।তোর এই ধরনের পাগলামি আমাকে সবসময়েই আকৃষ্ট করে।

-তাই ভাবছি। দেশ বিদেশে বন্ধু ছড়িয়ে থাকা নমি যে আমাকে কিসের জন্য এত ভালোবাসে,সঙ্গ দেয়!তোকে জিজ্ঞেস করা উচিত না অনুচিত জানি না,বহুদিন ধরে তোর –

-আমার ঘর,পরিবার আমি কোথাকার –ইত্যাদি?

-ঠিক সেরকমও নয়—

-সে রকমও নয়,ঠিক ওটাই।আমি বুঝি,বনশ্রী।এই একটা সংযোগ বাদ দিয়ে মানুষ সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য বড় সঙ্কোচ বোধ করে।কৌতূহল দেখায়।কৌ্তূহল কখনও হৃদয় বিদারক হয়।ব্যক্তিগতভাবে নিস না।এটাই সত্য কিন্তু।

-আমার জন্য তুই এক এবং শেষ।আর কোনোদিন জিজ্ঞেস করে তোকে কষ্ট দেব না। শপথ।আমি খুব সাধারণ মেয়ে বলেই এইসব জিজ্ঞেস করে তোকে কষ্ট দিলাম।আমি তোর বন্ধুত্বের বাইরে আজ থেকে আর কিছু জানার চেষ্টা করব না।

-কিন্তু আমি আজ বলব।এই যে তুই ক্ষতস্থান উন্মোচন করে দেখছিস,প্রলেপ না দিয়ে উন্মুক্ত করে দিয়ে চলে যাবি?সেটা তো বনশ্রীর স্বভাব বিরোধী কাজ হবে।আনলাইক বনশ্রী।

নমি ভূঞা এবং বনশ্রী গগৈ ইতিমধ্যে ঢালু রাস্তাটার উঁচু জায়গাটায় এসে পৌছেছে।ডানহাতের ছোট পথটা দিয়ে এগিয়ে গেলেই সারি সারি পাইন গাছের ছায়ায় নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে থাকা ময়ূরভঞ্জ চৌহদের পূব প্রান্তরের ছোট প্রবেশদ্বার।নংঠুমাইর থেকে উঠে আসা চৌহদের মূল প্রবেশদ্বার এখন অতিমাত্রায় ব্যস্ত।দৃষ্টিনন্দন ময়ূরভঞ্জকে ধ্যান করে সারি সারি তীর্থযাত্রী উঠে আসছে।

পূব প্রান্তরের অনাদৃত প্রবেশদ্বারের কাছে পাকা বেঞ্চে নমি ভূঞা তার কাঁধের লাল নাগা কাপড়ের থলেটা রেখে দিল। তার পরনে ভূটিয়া এবং খাসি মহিলার জেমসমের একটা বিচিত্র সংমিশ্রণ।কাগজের মতো সাদা মুখ।গাঢ় রঙে রাঙানো ঠোঁট।পূর্ণ দৃষ্টিতে সে বনশ্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ভুরু পর্যন্ত পরে থাকা হর্সটেলের মতো চুলের নিচের স্থির তার চোখ দুটিতে কোনো প্রাণ নেই।

দুজনেই বেঞ্চের দুই প্রান্তে দুজনের মুখোমুখি বসার মতো বাঁকা ভাবে বসল।অনতিদূরের ব্যস্ততাপূর্ণ সকালের এখানে কোনো চিহ্ন নেই।কৌতূহলের চেয়ে বেশি অন্য একটি ভাবাবেগে বনশ্রী ডুবে যেতে থাকল।

এটা অপরাধবোধ না অনুশোচনা তা এখন আর ভেবে কোনো লাভ নেই। ধনু থেকে বের হয়ে যাওয়া তীর,মুখ থেকে বের হয়ে যাওয়া কথার অবশ্যাম্ভবী পরিণতি নিয়ে সম্পূর্ন ভাবে প্রস্তুত না হতে পারাটা কাপুরুষতা।

ক্ষতস্থান মুক্ত করার জন্য নমি প্রস্তুত।নিজের রিস্ট ব্যান্ড বাঁধা মণিবন্ধ সে পুনরায় পরীক্ষা করল।অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব এই চারফুটের মেয়ে বেশভূষাও বিচিত্র।ধীরে ধীরে সে সিমলা এবং ভূটিয়া উপাদানগুলো শিলঙের স্থানীয় উপাদানে স্থানান্তরিত করছে।‘দখার’কে প্রবেশ করার জন্য বাধা দেওয়া ভেতরের অঞ্চল গুলোতেও নাওমি বুয়ানের স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

শুধু প্রবেশ নয় সেই জায়গাগুলোতে জনগণ তাকে ভালোবাসে।

আর অষ্টো-এসিয়াটিক ভাষাটিকে সে বিস্ময়করভাবে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে আয়ত্ত করে ফেলেছে।দার্জিলিঙের স্কুল কলেজে শিক্ষা গ্রহণের সময় ইন্ডো-ইউরোপিয়ান গোষ্ঠীর ভাষা ছাড়া অন্য গোষ্ঠীর ভাষায় কথা-বার্তার কোন সুযোগ সে পায়নি।

স্থানীয় অনাথালয়গুলিতে,সমাজ কর্মীদের মধ্যে নাওমি বুয়ান ঘন ঘন উচ্চারিত নাম।তার জন্য ‘ক্ষুদ্র ভারতবর্ষে’র দরজা খোলা ছিল।স্বেচ্ছায় সে ডঃঝুনঝাপ্পার ‘ক্ষুদ্র ভারতবর্ষের’বাইরে থাকতে শুরু করেছে।

কারণ ?সে ঝুনঝাপ্পার গড়ালের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। প্রচুর স্বাধীনতার প্রচুর সদ্ব্যবহারে সে বিশ্বাস করে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো নাওমি বুয়ানকে নাওমি বুয়ান করে তুলেছে।

তারচেয়েও বেশি কিছু দরকার ছিল কি ? প্রয়োজন ছিল কি ?


চলবে ...