বাবা
'যা নেই তা নেই ।
যা আছে তা নিয়ে গুছিয়ে চলো ।
হা-হুতাশ করে কোনও লাভ নেই '।
-মা বলতেন ।
মা-র মনের জোর দেখে,
বাবা তাকিয়ে থাকতেন ।
মা যখন চলে গেলেন,
বাবা বললেন, 'রান্নাঘর কি বিপজ্জনক কঠিন।
আর বলতেন, তুই তোর মায়ের মতো।
মামার বাড়ির সব পেয়েছিস'।
আসলেও তাই।
আজ বাবা নেই।
ভাগ্যিস মাও নেই।
মাকে সামলানোই কঠিনতম কাজ হতো।
বাবা যতক্ষন লেখার টেবিলে, মায়ের চেয়ে
সুখি কেউ ছিলো না।
নিজের জরুরী জিনিস না কিনে, বাবার প্রয়োজনের
বই, জিনিস সব কিনে আনতেন।
রাগ করলে, মা বলতেন, 'আমার সব আছে। তুমি পড়ো, লিখ, ফালতু ভেবো না'।
আমি নিশ্চিত,
বাবা এখন মার বকা খাচ্ছে তুমুল।
আমাকে একা ফেলে যাওয়ার সময় বাবার হয় নি।
একগুঁয়ে, বেয়াদপিতে বাবা ছিলো, আমার
একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। একমাত্র মিত্র ও।
আমি এখন কাকে বলবো, ধূর ...
উদ্বাস্তু কালচার, এ মাটির বারোটা বাজালো।
এখন কার সাথে ঝগড়া করবো!
কাকে বলবো, গৃহস্থ কবির পুরস্কারে,
তোমার নাম সামনে উত্থাপিত হবে।
সব বলাবলি শেষ।
বাবার বিরোধী স্বত্তা, শুধু আমার মধ্যে জেগে।
২
ছাই মাখা ক্যানভাস
তিক্ততা, হতাশা আছড়ে উগরে ক্লান্ত
জনপদ । মৃতপ্রায়।
কোনও নূতন সুর নেই।
কন্ঠ নেই।
বাতাস নেই।
জলে আর্সেনিক।
সংবাদের পাতাও কি মহিমায় সব স্থির।
প্রশান্তি পালিয়েছে যেন শান্তির পিছু পিছু।
নিজেকে ভুলিয়ে রাখার পাগলপণ
খেলায় মেতে উঠেছে মানুষ।
মৌলিক বলে কিছু নেই আর।
বাঘহীন বন, এখানে বিলাসী শেয়ালের
বাড়ন্ত দেখেছে, বিগত পঁচিশ ।
আমরা কি জেনেছি তার কিছু?
আমরা কি শিখেছি কিছু, সে সব দেখে?
আমাদের অর্জন-
মুখ চেপে রাখা নিজ হাতে,
কান চেপে রাখা,
চোখ বুজে থাকা।
তিনটি বাঁদর তাই তো করে আসছে,
দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে।
৩
স্মরণ
আপনি থাকছেন স্যার
আপনি থাকছেন
আপনি থাকবেন
আরবের কূপের মতো দুর্লভ আপনি
ইথুপিয়ার শকুনের চেয়ে তীক্ষ্ণ ঠোঁট
ফরাসি মদিরার চেয়ে উজ্জ্বল ত্বক
লাসভেগাসের উচ্ছল রাতের মতো চোখ
পা দুটিতে তো হিমালয় জয় লেগে আছে
গান্ধীজি আপনার হাত দুটি দেখতে পাননি
আপনার এ দুঃখ
বাংলা কবিতা লিখে তো ঘুচিয়েছেন,
আমরা কৃতজ্ঞ, ৠণী।
আপনি থাকছেন স্যার
থাকছেন,
আমাদের শান্তি শুধু বাড়ি ফেরার পথ
ভুলে গেলো।