শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

মহাসত্যের বিপরীতে, পর্ব ১১

‘ চোখে কেমন লাগছে ধাধা-/ লাগছে কেমন পাগল পারা/ তারাগুলোই জোনাক হল/ কিম্বা জোনাক হল তারা’– সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

এগারো

১৯৩৩ সাল । ত্রয়োদশ দলাই লাম থুবতেন গিয়াৎসো তখন লাহসার পোটালা প্রাসাদ থেকে তিব্বত শাসন করেন । আকাশচুম্বী সোনালি ছাদবিশিষ্ট ওই পোটালা প্রাসাদ-দুর্গের পাদদেশে সমতল শহর লাহসা । গভীর শ্রদ্ধা আর ভক্তি নিয়েই তিব্বতি পুণ্যার্থীরা এই পবিত্র শহরে পা রাখেন । পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলি ঘিরে রেখেছে এই পবিত্রভূমিকে । খ্রিস্টানদের কাছে যেমন জেরুসালেম, মুসলমানদের কাছে যেমন মক্কা । সারা পৃথিবীর কোটি কোটি বৌদ্ধদের কাছে সেরকমই অলৌকিক পবিত্রধাম এই লাহসা। জেরুসালেম এবং মক্কার যেমন ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে, লাসার তেমনি রয়েছে, এক গূঢ় গোপন কারণ। বুদ্ধ পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মের তন্ত্রের যে প্রভাব, তার অন্যতম উৎস ও চর্চার কেন্দ্রস্থল এই আশ্চর্যনগরী । ‘লহা’ মানে ঈশ্বর আর ‘সা ’ মানে দেশ বা ‘ ভূমি '। এই বিস্তৃত দেবভূমির চারপাশের যে কোনও পাহাড় থেকে উপত্যকার সাদা রঙের বাড়িঘরগুলি দেখলে মনে হবে যেন অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে উপুড় হয়ে পেটালা প্রাসাদকে প্রণাম করছে । অদ্ভুত এক বাতাস বয় এবং তা ঝুলে থেকে এই শহরের সমস্ত বস্তুকেআন্দোলিত করে , সবার ভিতরে ঢুকে পড়ে, ভেদ করে নতুন উৎকর্ষে পৌছে দেয়, পুনরুজ্জীবিত করে আয়ু বাড়িয়ে দেয়, সঞ্জীবিত করে একেকজনকে শতাব্দীজীবী করে তোলে। লাহসায় শুধু অলৌকিক ঘটনা ঘটে না, লাসা শহরটাই যেন অলৌকিক।

লাহসায় ঢোকার অনেক আগে থেকেই দূর থেকে একটি ছোটো পাহাড়ের উপরে লাল ব্রোঞ্জের অতি সুন্দর চোদ্দোতলা পোটালা প্রাসাদ দেখা যায়।

কি-চু নদী পেরিয়ে সাতবার ফারগো কালিং চৈত্য প্রদক্ষিণ করে লাহসার দক্ষিণ-পূর্ব দরজা দিয়ে শহরে ঢুকেই ওরা ঘোড়া থেকে নেমে রাস্তার উপরেই সাষ্টাঙ্গে প্রণাম জানায় প্রথমে শাক্যমুনি, তারপর মহাকালী ও অবশেষে চেন-রে-জির উদ্দেশ্যে। তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে , জয়সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে , জয় শাক্যমুনির জয়, জয় মহাকালীর জয়! জয় রাজাধিরাজ দলাই লামা চেন-রে-জির জয়, বুদ্ধের জয় , ধর্মের জয় , সংঘের জয়! ওম মণিপদ্মে হুম, ওম মণি পদ্মে হুম, ওম্ মণি সেই পদ্মে হুম, জয় স্নোং-সান-গাম্পোর জয়, জয় মহারানির জয় . . . তারপর পঁচিশবার বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে দণ্ডি কেটে ওরা উঠে আবার ঘোড়ায় চাপে।

ওদের দেখে কিছু স্থানীয় মানুষ এসে ভিড় করেছিল। তাদেরই মাঝখান দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে তারা একটা উপযুক্ত মাথা গোঁজার ঠাঁইখুঁজতে এগিয়ে চলে। একজন বয়স্ক নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে গরব আন্দাজ করে নেয় কীরকম বাসস্থান পাওয়া যেতে পারে!

ওই ফারগো কালিং থেকে পোটালা রাজপ্রসাদ অল্প সময়ের মধ্যেই পৌছে যাওয়া যায়। পথের দুধারে সারি সারি বনেদি ধরনের একতলা কিংবা দোতলা কাঠের বাড়ি। ছাদগুলো সবই প্যাগোডা ধরনের। মাঝেমধ্যে কয়েকটি পুকুর আর গাছপালা |

গরব ও তার দলের সবাই দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তি নিয়ে লাহসায় পৌছতেই ওই অদ্ভুত বাতাস ওদের নাসারন্ধ্র দিয়ে শরীরে ঢুকে সমস্ত অস্তিত্বে এক অনুপম তরতাজা ভাব এনে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা অবাক হয়ে অনুভব করে যে তাদের শরীরে আর বিন্দুমাত্র ক্লান্তিও অবশিষ্ট নেই । মানুষ নতুন জামাকাপড় পরলে যতটা ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয় , তার চাইতে অনেক বেশি পরিবর্তন করে ফেলে এই অদ্ভুত বাতাস । ওদের ডাকাত অস্তিত্বের লেশমাত্রও অবশিষ্ট থাকে না । তিব্বতের রাজধানীর পথে একটি আরামপ্রদ বাসস্থানের খোঁজে ঘুরতে থাকা মানুষগুলি এখন পেশাদার ব্যবসায়ী ছাড়া আর কিছুই নয়।

অনেকটা গলি পার হয়ে ওরা পৌঁছোয় জোখাং মন্দিরের কাছে। বিরাট এই মন্দিরটা ঠাসাঠাসি বাড়ির মাঝখানে থেকে হঠাৎ আকাশ ছুঁয়েছে।বাইরে থেকে কিছুতেই মন্দিরটার আপাদ চূড়া দেখা যায় না । । লাহসা ও তিব্বতের এটাই মূল মন্দির । জোখাং মন্দিরের চত্বরটা ঘোড়া থেকে নেমে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । প্রণাম দিন কিংবা বিশ্রাম যাই বলো, ধর্না দেবার মতন লুটিয়ে পড়ে সবাই বলতে থাকে , ওম মণিপদ্মে হুম , ওম মণিপদ্মে হুম . . .

ওরা আজ আর এগোবেনা । কেননা তারপর দণ্ডি কেটে সাতবার মন্দির পরিক্রমা করে আরও সাতবার প্রার্থনা চক্র ঘুরিয়ে পূর্বজন্মের কর্মফল খন্ডন করতে হবে, তারপর শুরু হবে মন্দির প্রবেশের দণ্ডি। এসবের জন্যে আরও অবকাশ চাই।

খ্রিস্টপূর্ব প্রায় চারশ শতকে রাজা শ্রোং-সান-গামপোর প্রতিষ্ঠিত বাড়ি এই লাহসা শহর । পোটালা পাহাড়ের উপর তিনিই তৈরি করেছিলেন করা নিজের দুর্গ। সেই দুর্গটিই এখন পোটালা প্রাসাদ নামে পরিচিত।

এই দুর্গটি অবশ্য তার আগেও ছোট আকারে ছিল। সেটা কে বানিয়েছিলেন জানা যায় না। শ্রোং-সান-গামপোর দুই রানি। এক রানি নেপালের, আর অন্যজন চীনের। বিয়ের যৌতুক হিসেবে এই দুই রানিই নাকি তিব্বতে প্রথম বৌদ্ধধর্মকে নিয়ে আসেন। নেপালের রাজকন্যা নিয়ে আসেন সোনা, রূপা, বুদ্ধের বাণী আর বৌদ্ধ পণ্ডিত। আর চিনের রাজকন্যা নিয়ে এলেন অতুলনীয় সুন্দর শাক্যমুনির মূর্তি। চীনের তাং বংশের রাজকন্যা চেন-চেং এর আনা সেই শাক্যমুনির মূর্তিটিই লাহসার মূল মন্দির এই জোখাং-এর পূজিত দেবতা| এই মন্দিরের আরেক নাম সুক-লা-খাং । প্রতিদিন হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ও ভক্ত লামারা এখানে আসছেন তাদের মুক্তির পথ সন্ধানে। বৌদ্ধতান্ত্রিকদের মতে এই বিগ্রহ নাকি খুব জাগ্রত। গরব ও তার দলের সদস্যরা তাই পরে একদিন স্নানটান করে এখানে পুজো দিতে আসবে। এমনিতেই বছরের প্রথম মাসগুলিতে অনুষ্ঠিত কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ছেড়ে দিলে অন্য সময় লাহসায় থাকার জায়গার কোনও অসুবিধা হয় না । বিশেষ করে দামি ঘোড়া থেকে নেমে আসা অভিজাত পোশাক পরিহিত মানুষদের অবস্থান জানানোর জন্য সরাইখানাগুলির মালিক ও দালালরা মুখিয়ে থাকে। গরব ও তার দলের সবাই অবশ্য শহরের প্রান্তে ফারগো-কালিং-এই একটি বড় বাড়ি ভাড়া নেয়। সেই বাড়িটার প্রশস্ত উঠোন আর আস্তাবল রয়েছে। এদের মধ্যে যারা গরবের পরিচারকের ভূমিকায় অভিনয় করছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা আস্তাবলের পাশের ছোটো ঘরগুলিতে থাকতে শুরু করে। এই দুর্ধর্ষ দস্যুরা স্থানীয় ছিঁচকে চোরদের ঘোড়া চুরির সুযোগ দিতে চায় না। আর যারা দেখতে বেশ ভালো, তারা কেউ ব্যবসায়ী গরবের খাজাঞ্চি, কেউ বা সচিবের ভূমিকায় অভিনয় করছে, তারা দোতলায় তুলনামুলক বড় ঘরে থাকছে। তাদের পাশেই একটি আলাদা ঘরে থাকছে গরব আর দেচমা।

লাহসা পৌছে একদিন ওরা সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেয়। শুয়ে বসে দিন কাটায়। গরব একটি রেস্তোরা থেকে খাবার আনায় । তারপর সবাই মিলে ভুড়িভোজন আর সীমিত মদ্যপান। সীমিত এজন্যে যে গরব চায় না ওর কোনও সঙ্গী আকণ্ঠ মদ খেয়ে বেহেড মাতাল হয়ে চেচামেচি করে আশপাশের মানুষকে নিজেদের আসল পরিচয় জানিয়ে দিক! তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। গরব ওদেরকে তা বুঝিয়ে বলায় সবাই এক বাক্যে মেনে নেয়। ওরা সবাই গরবকে ভীষণ মান্য করে। তার বিচক্ষণতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের জন্যে ওরা বিনাবাক্য ব্যয়ে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। তার কথা ওরা বোঝে, এতেই দলের এবং ওদের নিজেদের লাভ হবে। তবুও সাবধানের মার নেই । গরব ওদের বলেছে, লাহসাতে সামলে চলতে হবে, লোকজনের সঙ্গে হাসিমুখে ও ভদ্রভাষায় কথা বলতে হবে। একা একা উদ্দেশ্যহীন কেউ শহরে ঘুরে বেড়াবে না । পরস্পরের উপর ও সতর্কনজর রাখবে। মনে রাখতে হবে ওরা ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ী, এখানে তীর্থ করতে এসেছে। আবার কেউ যেন অতি ভক্তি দেখিয়ে খামোখা অন্যের নজর আকর্ষণ না করে সেটাও দেখতে হবে!

লাহসায় যে কোনও খবর দ্রুত ছড়ায়। এখানকার মানুষ বেশি বাক্যবাগীশ। এই শহরে কেউ যদি বলে, চিলে তোমার কান নিয়েছে, কেউ নিজের কানে হাত দিয়ে দেখে না, চিলের পেছনে ছোটে। একজন ধনী ব্যবসায়ীর আগমনও এখানে দ্রুত খবর হয়। তৃতীয় দিন সকালেই ওরা যখন প্রাতঃরাশ সারছে ওদের দরজার বাইরে একদল অনাহুত মানুষ এসে ডাকাডাকি শুরু করে। ওরা সবাই রোগাপ্যা। প্রাচীন প্রথা অনুসারে লাহসায় ঢুকলেই ওদেরকে কর দিতে হয়। পর্যটক, তীর্থযাত্রী কিংবা ব্যবসায়ী প্রত্যেককেই তাদের আর্থিক ক্ষমতা অনুসারে কর দিতে হয়।

রোগপ্যারা এমনিতে প্রান্তবাসী নিচুজাতির মানুষ। লাহসা শহরে,বসবাসের কোনও অধিকার এদের নেই। কোনও ভদ্রলোকের বাড়িতে প্রবেশাধিকার নেই। অথচ শহরের সমস্ত নর্দমা পরিষ্কার করা, আবর্জনা সাফ করা, মৃত পশুপাখি আর বেওয়ারিশ লাশ শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে চিল-শকুনকে খাওয়ানোর কাজ করে এরা। এরা স্বভাবে নির্লজ্জ, কথাবার্তায় উদ্ধত । আগে নার তা কোনও তীর্থযাত্রী বা পর্যটক ওদের দাবি অনুসারে না দিলে নমে ওরা দল বেঁধে তাকে গালি দিত, অপমান করতো, এমনকি পথে বেরুলে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করতো না। লোকে বাধ্য হয়ে ওদের দাবি মেনে নিত অথবা শহর ছেড়ে পালাতো। এখন অবশ্য স্থানীয় প্রশাসনের চাপে ওরা কিছুটা সংযত থাকে।

গরব ওদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতো, তাই দ্রুত এতটাই রোগাপ্যা কর পাঠায় যা তাদের কম না মনে হয় আবার খুব বেশিও মনে না হয় । বেশি দয়া দেখালেও সমস্যা হতে পারে। যথেষ্ট টাকা । হাতে পেয়ে রোগাপ্যারা খুশি হয়ে তখুনি ওখান থেকে চলে যায় ।

যাওয়ার সময় ওরা গরবদের ঘোড়ার বিষ্ঠা তুলে নিয়ে আস্তাবলটিকেও পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। যাওয়ার আগে তাদের দলপতি বলে, প্রতিদিনকার নোংরা দরজার বাইরে রেখে দেবেন, ছেলেরা রোজই পরিষ্কার করে দিয়ে যাবে!

গরবের সচিবের ভূমিকায় যে দস্যু অভিনয় করছে সে যথেষ্ট লেখাপড়া জানা মানুষ। সে পোটালা প্রাসাদে গিয়ে দলাই লামার সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসে।

এমনিতে যখনই কোনও বড় অভিযাত্রী দল লাহসায় এসে আবেদন জানায়, দলাই লামা তাদেরকে সমবেত দর্শন দেন। তিনি একটি উঁচু সিংহাসনে আসন করে বসেন। চারপাশে পাতা মাদুরে বসে থাকেন তাঁর শাপ্যেরা। এরা দলাই লামার সভাসদ। অন্যান্য অভ্যাগত, দেহরক্ষী, ব্যবস্থাপনার কর্মী ও সেবকরা দাঁড়িয়ে থাকেন।

এছাড়া যারা দর্শনার্থী তাদেরকে অপেক্ষা রাতে হয়। আরও দর্শনার্থী এলে একসঙ্গে চাঁদা দিয়ে এমনি দীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে সময় লাগে। কারও প্রবেশই এবানে নিঃশুল্ক নয়। সমবেত আবেদনের ক্ষেত্রে যিনি সবচাইতে বেশি চাঁদা দেবেন তাঁর নামেই আবেদনপত্র জমা করতে হয়। যার নামের আবেদনপত্র জমা হয় তিনি নিজের ইচ্ছামতন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং এমনকি অপরিচিতদেরও নিয়ে দর্শনে যেতে পারেন। দরিদ্র তীর্থযাত্রীরা এমনি অভিজাত কোনও দর্শনার্থীর দয়ায় অল্প টাকা চাঁদা দিয়ে ঢোকার জন্য প্রতীক্ষায় দীর্ঘ আপেক্ষায় থাকেন।

এক্ষেত্রে সর্বাধিক দক্ষিণা যিনি দিয়েছেন তিনিই হাতজোড় করে নতমস্তকে দলাই লামার সিংহাসনের সামনে আগে পৌঁছোন। অন্যরা হাতজোড় করে নতমস্তকে তাঁর পেছন পেছন সারিবদ্ধভাবে একে একে এগিয়ে আসেন। দলাই লামা তাদের প্রত্যেকের কপালে নানা রঙের রঙিন পাখির পালক দিয়ে তৈরি একটি ঝাড়ু দিয়ে ছুঁয়ে দেন। সেই ঝাড়ুর হাতলে নানা রঙের দিতে বাঁধা থাকে।

দর্শনার্থীদের বিশ্বাস, ওই পালকের ঝাড়ু ছোঁয়ানোর সময় যার কপালে কোনও রঙিন ফিতেরও ছোঁয়া লাগে সে নাকি বেশি আশির্বাদ পায়। তাঁর বেশি পুণ্য হয়। আর যে ধনী দর্শনার্থীরা বেশি দক্ষিণা দিতে সক্ষম তাদের সপারিষদ, সপরিবার, এমনকি একার জন্যেও এ ধরনের দর্শন হতে পারে। এক্ষেত্রে দর্শনার্থী নিজের হাতে সিংহাসনের সামনে মহার্ঘ উপটৌকন ও দক্ষিণা সমর্পণ করেন। মন্দিরের সচিব ও খাজাঞ্চিরা তখনই তা গুণে নথিবদ্ধ করেন

এছাড়া রয়েছে জিমেটচুং বা কক্ষ দর্শনপ্রথা। সব চাইতে ধনীরা দলাই লামার সঙ্গে তার বাসগৃহে মিলিত হন। সেখানে বাইরের কেউ থাকেনা। পাঞ্চেম লামার ক্ষেত্রে এই প্রথাকে বলে জিগাট জে।

দাম্ভিকও বিচক্ষণ গরব এই জিমেটচুং প্রথাই বেছে নেয়। ভিড়ে মিশলে হঠাৎ পূর্ব-পরিচিত কেউ চিনে ফেলার ভয়ও থাকে। এমনকি যেসব তীর্থযাত্রী দলকে তারা লুট করেছে, তাদের কেউ-ও ওদের দেখে চিনে ফেলতে পারে। বিশেষ করে ওকে, তিব্বতিদের মধ্যে এমন ছ' ফুট উঁচু মানুষ খুবই কম রয়েছে, ওর চেহারাও অনেকটা ভারতীয়দের মতন, দেচমাকেও কেউ চিনে ফেলতে পারে। কক্ষ সাক্ষাতে দলাই লামার সঙ্গে দু-তিনজন সেবক ছাড়া আর কেউ থাকবে না। ওরা কেউ কিম্বা দলাই লামা স্বয়ং কখনও ওদের দেখেনি। তাছাড়া এক অজ্ঞাতপিতা ও দাসীর পুত্র এই নবীন দস্যুসর্দার সাধারণের ভিড়ে না মিশে এভাবেই ধনীদের মতো দলাই লামার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে শ্লাঘা বোধ করে।

এক কক্ষসাক্ষাতের ব্যবস্থা করার সময় সচিবের ভুমিকায় থাকা দস্যু তার সর্দারের পরিচয় বলে, চীন সীমান্তবর্তী এক জনপদের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী। আর তারপরই অপরপক্ষকে কোনও সুযোগ না দিয়ে দক্ষিণার পরিমাণ ও যেসব মহার্ঘ উপটৌকন সে নিজের এবং সঙ্গে আসা স্ত্রী ও কর্মচারীদের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে মহামহিমকে দিতে চায়, সেগুলির তালিকা দিতে শুরু করে। সে বলে, তালিকাটি দীর্ঘ কেননা যেসব কর্মচারী সঙ্গে আসতে পারেনি, তাদের পক্ষ থেকেও অনেক উপটৌকন রয়েছে এই তালিকা শেষ করার পর সে প্রণামী দেওয়ার ঢঙে ব্যবস্থাপকের হাতেও আলাদা করে দক্ষিণা গুঁজে দেয়। আর আটদিন পর চান্দ্রমাসের ১৫ তারিখে পূর্ণিমার দিনে সাক্ষাতের লগ্ন ঠিক হয়।

মাঝের দিনগুলিকে নিজেদের ঘোড়াগুলি, উপঢৌকনের জন্যে হয় রাখা বাছাই করা কিছু খচ্চর আর ফেরার সময় ওদের মালপত্র বহনোপযোগী সামান্য কয়েকটি খচ্চর ছাড়া বাকি সব কটাকে ওরা পশুর হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। দলাই লামার উপঢৌকনের কার জন্য নির্দিষ্ট মহার্ঘ বস্তুগুলি ছাড়া অতিরিক্ত সবকিছুই তারা ধীরে ধীরে রয়েসয়ে বিক্রি করে। ওদের ভাগ্য ভালো, সমস্ত পশু এবং মহার্ঘ বস্তুসমূহ ওরা ভালো দামেই বিক্রি করতে পারে। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা হয়তো এর থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে পারতো না ।

চতুর্দশীর দিন সকালে প্রথমে গরব ও দেচমা ও পরে দলের সবাই প্রতিদিনের মতন ঝোপের আড়ালে প্রাতঃকৃত্য সেরে তারপর কী-চু নদীতে শৌচ সেরে সরাইখানায় ফিরে পরিচ্ছন্ন পোশাকে দল বেঁধে রামোস মন্দিরে মাথা ঠেকাতে যায়। রাজা স্রোং-সান গাম্পোর নেপালি রানি তৈরি করেছিলেন লাহসার দ্বিতীয় প্রাচীন এই বুদ্ধমন্দিরটি। সাতবার মন্দিরটিকে প্রদক্ষিণ করে তারপর দণ্ডি কেটে ও ধর্মচক্র ঘুরিয়ে অবশেষে বিগ্রহ দর্শন।

রামোস মন্দির থেকে বেরিয়ে ওরা সোজা চলে যায় জোখাং মন্দিরে। সেখানে মন্দির পরিক্রমা, দণ্ডি কাটা ধর্মচক্র ঘোরানো ইত্যাদি মহার্ঘ সেরে মন্দিরে ঢুকতে বেলা হয়ে যায়। অন্য তীর্থযাত্রীদের মতন গরব, দেচমা ও সমস্ত ডাকাতরা অর্ঘ্য হিসেবে মাখন আর চাল দেয় আর তাদের হাতে থাকে একটি করে চাদর।

বাইরে থেকে প্রথমে দালানের মধ্যে ঢুকতেই অন্ধকার, কিছুক্ষণ পরই অবশ্য চোখে অভ্যস্ত হয়ে যায় প্রত্যেকেরই। দেওয়ালের গায়ে সারি সারি ঘিয়ের প্রদীপ। এই প্রদীপগুলি নাকি কোনওদিন নেভানো হয়না। শাক্যমুনির অনন্ত আলোকের প্রতীক। আরও এগিয়ে যেতেই লোহার গ্রিলের দরজার ওপারে বিশালাকায় দেড় মানুষ সমান ভগবৎ মূর্তি, প্রশান্ত সোনালি উজ্জ্বল রঙের মুখ, সাদার উপর নীল চোখের মণি। স্নেহশীল দৃষ্টিতে ভক্তদের দিকে তাকিয়ে আছেন। মুখ ছাড়া শরীরের আর সব অংশ ভক্তদের দেওয়া নানা রঙের চাদরে ঢাকা। মূর্তির সামনে বিরাট এক মানুষ সমান উঁচু একটি গামলার আকারে রয়েছে ঐ কেউ ঘিয়ের প্রদীপ। তামার তৈরি সেই মহাপ্রদীপের চারদিকে ছোটো ছোটো সলতে উঠে গেছে সংলগ্ন প্রদীপগুলোর মধ্যে, এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে সহস্র প্রদীপ শিখা। দৈনিক প্রায় চারশ কিলোগ্রাম ঘি লাগে এই প্রদীপশিখাগুলোকে জ্বালিয়ে রাখতে। লোহার গ্রিলের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে চারজন পূজারি লামা। তারাই ওদের হাত থেকে সমস্ত অৰ্য্য নিয়ে সাজিয়ে রাখে। চাদরগুলি বিগ্রহের হাতে নিবেদন করে সকলকে চরণামৃত দেয় , প্রদীপে ঘি ঢালে, চাল বিতরণ করে। পুজো শেষে ফেরার পথে ওরা দেখে মন্দিরের দেওয়ালে অজস্র তাঙখা ঝোলানো রয়েছে। মণ্ডপের আর একদিকে রয়েছে হাজার বুদ্ধের মন্দির। ওই মন্দিরে ঢুকে ওরা মণ্ডপে দেখে ছোটো বড় অসংখ্য বুদ্ধমূর্তি। ভগবান বুদ্ধের যতরকম মূৰ্তি কল্পনা করা যেতে পারে তারই নমুনা এখানে রয়েছে। একটু উচুতে উঠে রয়েছে ভয়ংকর এক কালীমূর্তি। তিব্বতের ধর্মরাজ দলাই লামার ইষ্টদেবতা এই মহাকালী। দর্শন শেষে বাইরে বেরুনোর আগেই মন্দিরের ভেরী বেজে ওঠে, সঙ্গে ডমরু - সন্ধ্যারতি শুরু হয়েছে। সারাটা দিন যে কেমন করে কেটে গেল ওরা তা টের পায়নি । সবমিলিয়ে যে স্বর্গীয় আনন্দ ওরা উপভোগ করলো তা কোনওদিন ভোলার নয়।

পূর্ণিমার দিনে ওরা সবাই আগেরদিনের মতন হাত-মুখ ধুয়ে পবিত্র হয়ে নতুন জামাকাপড় পরে নেয়। এদের মধ্যে কয়েকজন কিছু ডান কানে সোনার দুল পরে, অন্যরা হাতে তর্জনীতে যসমমণি বা জেইড খচিত আংটি পরে। তারপর সময়ের একটু আগেই ওরা নরবৌলিং-এর পথে বেরিয়ে পড়ে। লাহসা শহরের বাইরে চারপাশে মনোরম উদ্যান ঘেরা দলাই লামার বাসস্থান এই নরবৌলিং প্রাসাদ।

দেচমা ময়ূরকন্ঠী নীলরঙের জড়িদার লম্বা আংরাখা আর গরবের দেওয়া বিশেষ কিছু গয়না পরে। এই গয়নাগুলি সে গা থেকে খুলে নিজের পক্ষ থেকে দলাই লামাকে উপঢৌকন দেবে । সে ঘোড়ার পিঠে বসে সম্ভ্রান্ত মহিলাদের মতো স্বামীর ঘোড়ার পাশাপাশি মাথা নুইয়ে চলতে থাকে।

নরবৌলিং এ পৌছে ছদ্মবেশী ডাকাতরা উদ্যানের এককোণে শান্তভাবে চুপচাপ বসে প্রতীক্ষায় থাকে। কেউ ফিসফিস করেও কথা বলে না। সময় এলে ওরা গরবের পেছন পেছন প্রাসাদের ভেতরে যাবে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ওদের মনের সমস্ত ঔদ্ধত্য ও গ্লানি মুছে গিয়ে ধীরে ধীরে কখন শুধু পুণ্যাকাঙ্ক্ষী সত্তাটি জেগে ওঠে তা ওরা নিজেরাও টের পায়না। দলাই লামার উদ্যানে যারা পৌঁছোয় তারা প্রত্যেকেই ঈশ্বরে নিবেদিত প্রাণ ধার্মিক মানুষ। উদ্যানে নানা রঙের অজস্র ফুল ফুটেছে আর অসংখ্য রঙিন প্রজাপতি উড়ছে।

ছদ্মবেশী ডাকাতরা এখন যেন সিংহের গুহায়। মহামহিম রক্ষক, সর্বজ্ঞ তামচেড খ্যানপার মনে যদি সামান্যতম সন্দেহও হয় যে ওরা ডাকাত তাহলে ওরা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে যাবে আর বিচারে গুরুতর শাস্তি হবে। ঈশ্বরের অবতার দলাই লামা এমনিতে দয়ারসাগর, তিনি তিব্বতের সর্বময় কর্তা।

দলের ছেলেদের চোখমুখ দেখে গরব ওদের মনের ভাব আঁচ করতে পারে। এই চাপে ওদের মধ্যে কেউ একজন নিজেকে ভুলে বেফাঁস কিছু বলে ফেললে সবাই ধরা পড়ে যাবে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, আমাদেরকে এতক্ষণ ধরে বসিয়ে রেখেছে কেন রে?

গরব আর থাকতে না পেরে সবাইকে কাছে ডাকে। তারপর নিচুস্বরে ফিসফিস করে বলে, আমরা কারা আর কোথা থেকে এসব উপটৌকন জোগাড় করেছি মহামহিম সর্বজ্ঞ দলাই লামার এসব নিয়ে কোনওই মাথাব্যথা নেই! যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা, তোরাও ঠিকঠাক অভিনয় করেছিস। এখন শুধু শুদ্ধচিত্তে কায়োমন-বাক্যে ঈশ্বরের নাম জপতে জপতে সেই শুভ মুহূর্তের অপেক্ষা কর, তাঁর আশীর্বাদ নে, অন্যদের জন্যও আশীর্বাদ প্রার্থনা কর।

ওর কথায় সবার মনে তাজা ধার্মিক বাতাস বয়ে যায়। তাহলে সব ঠিক আছে, মহামহিম কিছুই টের পাবেন না। দেচমা মনে মনে হাসে। নিরক্ষর মানুষগুলি ‘মহামহিম’ এবং ‘সর্বজ্ঞ’ শব্দ দুটির মানে জানে না তাই নেতার কথায় বিশ্বাস করে যে, সর্বজ্ঞ কিছুই টের পাবেন না।

দেচমা মানে বোঝে বলে তার বুক দুরুদুরু করে। কিন্তু সে মহামহিমের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, সত্যি সর্বজ্ঞ কিছুই টের পাননি, অথবা টের পেলেও তার পায়ের কাছে জড়ো হওয়া মহার্ঘ দান সামগ্রীর চাপে চুপ করে থাকেন, অথবা তিনি যেহেতু দয়ারসাগর ওদের উৎসর্গের বহর দেখে পাপীদেরও ক্ষমা করে দিয়ে হাসিমুখে ওদের মাথায় পালকের ঝাড় ছুঁইয়ে দেন। তিনি গ্রহণ করেন ওদের দেওয়া মহার্ঘ চিনাংশুক সম্ভার, নীলকান্তমণি, রুপোর বাসনপত্র, পশমি কার্পেট আর উঠোনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো অনেককটা তাগড়া খচ্চর! সেগুলি মহামহিমের বসার জায়গা থেকে দেখা যায়। যারা এত উপঢৌকন দেয় তাদের কপালে শুধু পালকের ঝাড়ু না ছুইয়ে দলাই লামা তাদের সঙ্গে কথাও বলেন। গরব নতমস্তকে তার প্রশ্নের স্বতঃস্ফূর্ত জবাব দেয়। সে বলে যে তার ব্যবসাক্ষেত্র চীন সীমান্তের সিঙ্কাইটজে শহর। চীনের পশ্চিম সীমান্তে সেচুয়ান প্রদেশে তিব্বতিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। চীনদেশে বসবাসকারী ওই তিব্বতিদের বলা হয় গ্যাংরংপা। ‘গ্যা’ মানে চীনদেশীয় আর ‘রং’ মানে উপত্যকা। গ্যাংরংপা মানে চিনা উপত্যকায় বসবাসকারী তিব্বতি মানুষ। দলাই লামার কাছে এদের সম্পর্কে তেমন তথ্য না থাকারই কথা। নিজের ব্যবসা সম্পর্কে সে বলে , আবহাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে সে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা জিনিস সংগ্রহ করে চীনে বিক্রি করে আবার চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জিনিস কিনে পার্শ্ববর্তী তিব্বতি এলাকায় সরবরাহ করে। মৃদু ও বিনীতকষ্ঠে অবলীলায় বানিয়ে বলা গরবের কথাগুলি শুনে এমনকি দেচমা এবং অন্য সঙ্গীদেরও মনে হয় যে, ও যা বলছে – সবই সত্যি।

দলাই লামা বলেন, ‘ আশীর্বাদ করি পূত্র , তুমি ও তোমার স্ত্রী, তোমার সমস্ত কর্মচারী ও সেবক এবং তোমার বাড়ির সমস্ত সদস্য, আর তোমার যেসব কর্মচারী ও প্রতিবেশীর পক্ষ থেকে উপটৌকন এনেছ - সবাই রোগভোগহীন দীর্ঘ জীবন পাও, তোমার ব্যবসা আরও আরও সমৃদ্ধিলাভ করুক।

তারপর ওদের ২৩ জনের ছোটো দলটির প্রত্যেকে একে একে এগিয়ে যায় আর কপালে মহামহিমের পবিত্র পালকের ঝাড়ুর ছোঁয়ায় শিহরিত হয়। প্রত্যেকের কপালেই ঝাড়ুর হাতলের কোনও না কোনও রঙিন ফিতের ছোঁয়া লাগে।

দেচমার মনে হয়, সর্বজ্ঞ দলাই লামা সত্যিই ধরতে পারেনি যে ওরা সবাই ডাকাত!

সাক্ষাৎ শেষে ওরা সবাই স্কুলের বাচ্চাদের মতন সারিবদ্ধভাবে নরবৌলিং প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে উদ্যানে পৌঁছোতেই একঝাঁক রঙিন প্রজাপতি উড়ে এসে ওদের গা মাথা ছুঁয়ে চারপাশে উড়তে থাক। এই প্রাকৃতিক ঘটনাটিকেওরা মনে মনে ঈশ্বরের আশীর্বাদের সংকেত হিসেবে মেনে নিয়ে খুশি মনে প্রাসাদের আস্তাবলে পৌঁছোয়। সেখান থেকে যে যার ঘোড়ায় চেপে পথে পা রাখলেও একটি অতীন্দ্রিয় প্রাপ্তির আবেগে দলের প্রত্যেকেই দুলতে দুলতে পথ চলতে থাকে।

দু’পাশের বাড়ির মানুষজনকে পবিত্র ও স্বর্গীয় বলে মনে হয়। দেচমার ঘোড়াটি নাগপোর পাশাপাশি হাঁটছিল। দেচমা বারবার না গরবকে দেখছিলাে । তার স্বপ্নের অলৌকিক ঘােড়াসওয়ারকে সেই । বিকেলের আলোয় দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছে, সওদাগরের বেশে কোনও নিষ্ঠুর দস্যুসর্দার নয়, সে যেন এক অচিন দেশের বীর রাজপুত্র - কিম্বা ছদ্মবেশী কোনও ভারতীয় দেবতা।