বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

মহাসত্যের বিপরীতে, দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব -৩

ভাবনাকে ছুঁড়ে দিয়েছি নিরাশ্রয় গতির সাথে , দেখি / খোদা অব্দি পৌঁছে, নাকি তাঁকে ছেড়ে বেরিয়ে যায় / নাকি তারপর আবার সে আমার কাছেই ফিরে আসে ।

-- গুলযার (ত্রিবেণী ) # তর্জমা # সফিকুন্নারী সামাদী

তৃতীয় পর্ব

পরদিন সকালে একের পর এক অন্ধকার বারান্দা পার করে গরবকে মঠাধ্যক্ষের কুঠরিতে পৌছে দেওয়া হয়। সেই ঘরটায় কোনও জানালা নেই । শুধু কুলুঙ্গিতে একটি ছোট্ট মাখনের প্রদীপ জ্বলছে। এমন আলো হাওয়াহীন পরিবেশে কোনও মানুষ থাকে কী করে? নাকি থাকে না, নিছকই আগত ব্যক্তির মনে চাপ সৃষ্টির জন্যে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়!

প্রদীপের মিটিমিটি আলোতে গরব দেখে মঠাধ্যক্ষ একটি নিচু পায়াঅলা খাটের উপর আসনপিঁড়ি হয়ে বসে আছেন। গরব তাঁকে প্রণাম জানায়। তারপর অধীর আগ্রহে মঠাধ্যক্ষের দিকে তাকায়। তাঁর মুখ নিঃসৃত কয়েকটি বাক্য শুনে গরব নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সে দেখে একটি অলীক মুখ, পাথর প্রতিমার মতন শান্ত ও নিরুদ্বেগ। হলুদাভ চামড়ায় কোনও বলিরেখার চিহ্নমাত্র নেই অথচ ঠিক ঠাহর না করতে পারা বয়সের বৃদ্ধ।

মুখ দেখে চরিত্র বিচার করার বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তিও মঠাধ্যক্ষের চেহারা দেখে নিশ্চিতভাবে ধোঁকা খাবেন। তাঁর চোখ দুটি অস্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যে জুলজুল করছে। সেই চোখের ইশারায় মেঝেতে পাতা একটি চৌকো কাপড়ের আসন দেখিয়ে মঠাধ্যক্ষ বলেন, তুমি বসতে পারো !

এমন অদ্ভুত গলার স্বর গরব আগে শোনেনি। এ যেন কোনও জীবিত মানুষের কণ্ঠস্বর নয়। লাহসার বাজারে দেখা ব্যাটারি লাগানো কলের পুতুলটি যেমন আওয়াজে ‘ওম মণিপদ্মে হুম, ওম মণিপদ্মে হুম’ বলে যাচ্ছিল তেমনি যান্ত্রিক আওয়াজ। কিন্তু বলছেন গরবের বোধগম্যের বাইরে অন্যকিছু। পাহাড়ি মৌমাছির গুঞ্জনের মতন প্রবল কিন্তু এই স্বরে কোনও আরোহণ অবরোহণ নেই। এই অপ্রত্যাশিত আওয়াজ শুনে এবং ওই অদ্ভুত চোখের দ্যুতি দেখে গরবের অস্বস্তি শুরু হয়। সে তবু মঠাধ্যক্ষের নির্দেশ মতন মেঝেতে পাতা আসনটায় বসে থাকে।

কলের পুতুলের আওয়াজে তিনি এবার বিরতিহীন বলতে শুরু করেন, ডাক্তার মিগমার তোমাকে আহত ও অচৈতন্য অবস্থায় একটি নদীর তীর থেকে তুলে এনেছেন, শুশ্রষা করেছেন। তুমি নিজের জন্মবৃত্তান্ত এবং খ্যাং তিসে থেকে ফেরার পথে সন্দেহবশে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানালেও নিজের পেশা সম্পর্কে কিছু জানাওনি। আজ তুমি ভবিষ্যৎদ্বাণী শুনতে চাইছ। কোনও মিথ্যে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করো না, সত্য জানার নানা পদ্ধতি আমি জানি। তাছাড়া, তোমার চরিত্র, তুমি অতীতে ভাল কিম্বা খারাপ যা-ই করে থাকো না কেন, এসব জানতে আমি তেমন আগ্রহী নই। অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন নিম্ন ও মধ্য মেধার মানুষই ভাল ও খারাপের সীমারেখা টানার বৃথা চেষ্টা করে। দীর্ঘকাল ধরেই আমি এসব নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছি। আমি জানতে চাইছিলাম তোমার শারীরিক ও মানসিক প্রকৃতি ও সত্ত্বাকে। ডাক্তার মিগমার যেদিন তোমাকে সো সা লিং - এ এনেছেন সেদিন থেকেই আমি তা করছি। সেজন্যে তোমাকে দেখার কোনও প্রয়োজন আমার ছিল না। প্রতিটি সত্ত্বা, প্রত্যেক বস্তু থেকে একটি প্রবাহ ক্ষরিত হয় যা সে যে পরিবেশের অঙ্গ তারই প্রকৃতিকে বদলে দেয়। একবাটি শুদ্ধ জলে যদি এক দানা লবণ পড়ে সেই জল তখন নোনতা হয়। তখন লবণ চোখে না দেখতে পেলেও আমরা জিভে জল দিলেই নোনতা স্বাদ পেয়ে যাই। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো না। এখানে যে বিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়, তার প্রাথমিক শর্তগুলিও তোমার বুদ্ধিমত্তার অনেক উপরে !

মঠাধ্যক্ষের কথা শেষ হতেই গরব অবাক হয়ে দেখে কুলুঙ্গিতে রাখা একটি ধুপদানিতে গোঁজা কয়েকটি ধুপকাঠি নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে। নিমেষে একটি অদ্ভুত সুবাস সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। কোনও তিব্বতি ধুপকাঠির সুবাসের সঙ্গে এর মিল নেই। কেমন একটা সর্বগ্রাসী মাদক গন্ধে গরবের মাথা ঝিমঝিম করে। মঠাধ্যক্ষ নির্বিকার, নীরব, দৃষ্টি গরবের মুখমণ্ডলে স্থিরনিবদ্ধ।

গরব মনের কথা বলে ফেলে,- মহামহিম, আমি একজন অপরাধী, দীর্ঘকাল ধরে আমি দেশের নানা প্রান্তে ডাকাতদলের নেতা হয়ে হানা –

ওকে থামিয়ে দিয়ে মঠাধ্যক্ষ বলেন,- ব্যস, আর বলতেহবেনা, আমি সব জানি! আমাকে কোনও প্রশ্ন করো না। দৈববাণী প্রস্তুত, - শোনো!

অদ্ভুত ধূপের সুবাস আরও ঝাঁঝালো হয়ে ওঠে। গরবের মনে হয় এবার দমবন্ধ হয়ে যাবে। সে এখন ভাবনাকে ছুঁড়ে দিয়েছে নিরাশ্রয় গতির সাথে, সে দেখতে চায় এই ভাবনা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোয়, নাকি তাঁকে ছেড়ে বেরিয়ে যায়, নাকি তারপর আবার সে গরবের কাছেই ফিরে আসে! মঠাধ্যক্ষের স্থির আবেগহীন চোখের দৃষ্টি ক্রমে যেন দুটি সরু শীতল আলোকের রশ্মি যা ইস্পাতের ফলার মতন প্রাক্তন দস্যু সর্দারকে ফালাফালা করে দিতে থাকে। এ যেন তার ব্যক্তিত্বের শব ব্যবচ্ছেদ। — শোনো !

তীক্ষ্ণ বরফের ফলার মতন শীতল আওয়াজে মঠাধ্যক্ষ বলেন, যা ছিল তোমার জীবন - তা এখন মৃত। গরবের রক্ত ছলকে ওঠে, - দেচমা?

মঠাধ্যক্ষ আবার বলেন, - সব শেষ, মৃত !

গরব জানেনা সেদিন সে কেমন করে মঠাধ্যক্ষের ঘর থেকে এসেছে। তার মনে আছে শুধু সেই ধাতব আওয়াজ - সব শে - ষ, মৃত ! ওই শব্দ তিনটি যেন ভারী কিছুর মতন ওর মাথায় আছড়ে পড়ে। আর সে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। চলৎশক্তিহীন।

জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে একা একটা কুঠরিতে শুয়ে থাকতে দেখে। সেই কামরাটা তার আগের কামরা নয়। কিন্তু সে তেমনি শুয়ে থাকে। ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নিথর, অবশ হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে একসময় আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।

পরদিন সকালে প্রাকৃতিক ডাকে ঘুম ভাঙে। ভীষণ দুর্বল লাগে। ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখে আকাশ মেঘে ঢাকা। অবশ্য মঠের ওই দেওয়ালঘেরা অংশ থেকে কখনওই সম্পূর্ণ আকাশ দেখা যায় না। গরব অনেক কষ্টে উঠে গিয়ে প্রাতকৃত্য সেরে আসার কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার মিগমার ওকে দেখতে আসেন। তিনি নরম স্বরে বলেন, মঠাধ্যক্ষ বলছিলেন,- দৈববাণী শুনে তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে, খুবই চিন্তার বিষয়, এখনও দেখছি তোমার স্বাস্থ্য খুবই দুর্বল! যে কোনও মানসিক উৎক্ষেপ তোমার জন্যে ক্ষতিকারক! এই পৃথিবীতে জীবন মানেই সুখ, দুঃখ, আনন্দ ও বিষাদের উত্থান পতন। প্রত্যেকের উচিত পরবর্তী জীবনটাকে আনন্দময় করার জন্যে অন্য দুনিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া!

গরব অবাক। এর আগে কোনওদিন মিগমার ওকে কোনওরকম ধর্মশিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেননি! গরব অস্ফুটস্বরে বলে, ঠিক, আমাদের লামারাও একই কথা বলেন!

– নিগুঢ় দার্শনিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে বনদের সঙ্গে লামাদের খুব একটা পার্থক্য নেই। পার্থক্যটা ধর্মাচরণে, জনপ্রিয়তায়, ইতর মানুষের মনে!

– আমি জানতাম না, ধর্মীয় ব্যাপারে আমি খুব কম জানি!

– অধিকাংশ মানুষই তোমার মতন! কিন্তু তুমি শিখতে পারো!

– হ্যাঁ,, . . . নিশ্চয়ই . . . আমি শিখতে চাই!

গরবের কণ্ঠস্বরের এই আকুতি কঠিন মিগমারের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। না জানি কেন তাঁর চোখে জল চলে আসে। তিনি ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে সেই ঘর থেকে চলে যান।

একটা অদ্ভুত রিক্ততা গরবকে বিমূঢ় করে রাখে।

পরবর্তী কয়েক দিনে গরবের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা তার জীবনটাকেই পাল্টে দেয় । দেচমা আর নেই, দেচমা মৃত - এই দৈববাণী ওকে শূন্যতায় ভরিয়ে দেয়। মায়ের মৃত্যুর পর সে যত কষ্ট পেয়েছিল, অনগের মুখে নাগপোকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর শুনেও সে তেমনি কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু দেচমার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তার জীবন হাহাকারময় শূন্যতায় পর্যবসিত হয়।

মঠাধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকে ওকে উঠোনে পায়চারি করা আর অন্য মঠবাসীদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু গরব আর কোনও কিছুতেই উৎসাহ পায় না। শোকের খরস্রোতে ডুবে থেকে হতাশ গরব ভাবে সো সা লিং - ছেড়ে গিয়ে সে কী করবে? অথচ কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ওকে চলে যেতে হবে! কোথায়? যাবে সে, কার কাছে ? বলতে আর কেউ নেই পৃথিবীতে!

এই অনুভূতি তার বাঁচার আগ্রহটাকেই শেষ করে দিলে সে ভীষণরকম শ্লথ হয়ে পড়ে। উঠোনে হাঁটা ও সবার সঙ্গে কথা বলার এই অনুমতিকে সে তেমন উপভোগ করতে পারেনি। অধিকাংশ সময়ই সে কোথাও উঠোনের এক কোণায় চুপ করে বসে থাকে অথবা ঘরে ঢুকে কাঠকয়লা জ্বালানো কড়াইয়ে হাত সেঁকে। ভীষণ দুর্বল লাগে। মাঝেমধ্যে উঠোনের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পায়চারি করে তার জীবনের তিন প্রিয় সত্তা দুই মানবী ও একটি ঘোড়ার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের স্মৃতি রোমন্থন করে। তার দলের সমস্ত ডাকাতদের চেহারা একে একে মনে পড়ে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা ও একের পর এক অভিযানের কথা। কিন্তু সবচাইতে বেশি মনে পড়ে দেচমার কথা। তার সেই দস্যুদলের পথ আগলে দাঁড়ানোর ভঙ্গি, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্নমাখা দৃষ্টিতে বলা, তুমিই আমার স্বপ্নের ঘোড়সওয়ার, আমি তোমার সঙ্গেই থাকতে চাই। আর তারপর সেই মাসের পর মাস পাশাপাশি ঘোড়া চালানো, প্রতিরাতে পরস্পরকে নতুনভাবে আবিষ্কারের আনন্দ, লাহসায় ত্রয়োদশ দলাই লামার আশীর্বাদ নেওয়া আর খ্যাং তিসের অদ্ভুত সংকটময় মুহূর্তগুলি ওর স্মৃতিতে ঘুরে ফিরে আসে। অবশেষে চীনা সৈন্যদের ধাওয়া ও নদী পার করতে গিয়ে দেচমার ঘোড়ার পা পিছলে যাওয়া, ঢেউয়ে ভেসে দেচমার জলে ডুবে যাওয়া, বিদ্যুতের চমকে জলের উপর শুধু তার দু'হাতের আঙুলগুলিকে দেখতে পাওয়ার দৃশ্য গরব কোনমতেই ভুলতে পারে না! এই শোক তাকে জীবন সম্পর্কে নিস্পৃহ করে তোলে।

একদিন বিকেলে উঠোনে পায়চারি করার সময় প্রবেশদ্বার দিয়ে একজন মঠবাসীকে ঢুকতে দেখে সে অবাক হয়ে যায়। ইনি আগন্তুক নন, অন্য মঠবাসীদের মতনই পোশাক আশাক কিন্তু চেহারা ভারতীয়দের মতন। এই প্রথম এই মঠে এরকম চেহারার কাউকে দেখে না জানি কেন ভেতর থেকে একটা আত্মীয়তার চোরাটান অনুভব করে।

সে কাছেগিয়ে বলে, আমি জানতাম না এই মঠে আমি ছাড়া বাইরের কেউ রয়েছে!

ভারতীয় সন্ন্যাসী মুচকি হেসে বলেন, ও আপনি তিব্বতী, আমি দেখে ভেবেছিলাম… - এখানে খুব কম জানার সুযোগ পাওয়া যায়। প্রায় সর্বত্রই –‘অনধিকার প্রবেশ নিষেধ ’!

– আমার নাম গরব, আমাকেএখানে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল!

– ওহ , আমার নাম রামপ্রসাদ!

তিনি এখানে কেমনভাবে এসেছেন সে ব্যাপারে চুপ থেকে বলেন, আপনার নামটাও দেখছি ভারতীয়দের মতনই!

গরব কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তখনই রামপ্রসাদ ওর কুঠুরির দিকে ইঙ্গিতকরে মৃদুকণ্ঠে বলে, আসতে চাইলে ভেতরে আসুন!

রামপ্রসাদ যেন ওর মনের কথা বুঝতে পারে। ওরা প্রথমদিনেই ‘আপনি ’ থেকে ‘তুমি ’ তে চলে আসে। অনেকক্ষণ গল্প করে রাতে খাবার সময় হলে যে যার ঘরে চলে যায়। কিন্তু পরদিন আবার গল্প করে। সেই থেকে ধীরে ধীরে দু’ জনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে।

প্রতিদিনই ধীরে ধীরে চাপাস্বরে গল্প করে ওরা। রামের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা মুগ্ধ শ্রোতা গরবের সামনে অনেক রহস্যের উন্মোচন করে, নতুন সব অভাবনীয় চিন্তার দুনিয়া খুলে যায়। আর রাম সোৎসাহে গরবের মুখে তার নানা অভিযানের কথা, ডাকাত দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক কাফেলার সওদাগর অভিযাত্রীদের লুট করার কথা শোনে। একদিন গরব তাকে খ্যাং তিসের ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা বলে । আরেকদিন বলে তার মনে জেগে ওঠা এই সো সা লিং-এর রহস্যের কথা - অনগের শোনা গল্প আর নিজের অভিজ্ঞতা। ওকে না জানিয়ে ওর ঘোড়া দুটি বিক্রি করে দেওয়া আর মঠাধ্যক্ষের দৈববাণীর কথা। রামপ্রসাদ বড় বড় চোখ করে ওর কথা শোনে।

সে বলে, এই খ্যাং তিসে হল মানস কৈলাস। এছাড়া ভারতে রয়েছে কিন্নর কৈলাস আর আদি কৈলাস। আদি কৈলাসের আরেক নাম হল ওঁ পর্বত। তারপর চাপাস্বরে বলে, তার মানে তুমি একটা গূঢ় রহস্যের মোকাবিলা করেছো ! সাধারণ মানুষ গুঢ় অর্থ না জেনেই অবলীলায় জন্ম, মৃত্যু আর পুনর্জন্মের কথা বলে। আসলে জীবনকে শুধুমাত্র মৃত্যুর নিরিখেই ব্যাখ্যা করা যায়, আর মৃত্যুকে জীবনের নিরিখে। অজ্ঞান ব্যক্তির কাছে আলাদা মনে হলেও এই দুটো বাস্তবের ভিন্ন মুখাবয়ব - টাকার এপিঠ কিম্বা ওপিঠ - এটা বুঝতে হবে! এ বিষয়ে আমার দেশের বড় বড়ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছি, আমি নিজে কলিকাতা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় সাহেব অধ্যাপকদের কাছে জানতে চেয়েছি, ডাক্তারি পাশ করার পর প্রথম পোস্টিং দার্জিলিং –এমিশন হাসপাতালের অধ্যক্ষকেও জিজ্ঞেস করেছি, আর পরে সন্ন্যাস গ্রহণ করে অনেক বড় বড় সাধুকে প্রশ্ন করেছি। নানা জনের তত্ত্বাবধানে নানা পদ্ধতিতে তন্ত্রসাধনা করেছি , মৃত্যুর অতল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকার মতন ঝুঁকিপূর্ণ ও ভয়ঙ্কর সব পদ্ধতি , অনেক মহাত্মার সংস্পর্শে এসেছি , কিন্তু এমন কাউকে পাইনি যিনি সজ্ঞানে জীবন ও মৃত্যুর সমস্ত রহস্য ভেদ করেছেন!

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ । হঠাৎ খসখসে শব্দে গরব তাকিয়ে দেখে একটি বিশাল প্রায় খরগোশ আকারের পিকা ইঁদুর রামপ্রসাদের কুঠরি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে উঠোন পেরিয়ে উপাসনাগৃহের দিকে চলে গেল।

রামপ্রসাদ উঠে দরজা অবধি গিয়ে একবার এদিক ওদিক দেখে, তারপর আবার ঘরে এসে গরবের মুখোমুখি বসে নিচুস্বরে বলে, তুমি আমার স্বজাতির মানুষ, তোমার ধমনীতে আর্যরক্ত। তোমার বাবা ছিলেন একজন ধর্মপ্রবর্তক, যদিও তিনি শয়তানের সাধনায় পথভ্রষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু তোমাকে আমার ভাল লেগেছে। আজ তোমাকে নিজের কিছু আবিস্কারের কথা বলি । কথাগুলি মনে রেখে চললে তোমার ভাল হবে। আত্মরক্ষা করতে পারবে!

এই মঠে যেসব সন্ন্যাসী থাকেন আর চিকিৎসাবিদ্যা চর্চা করেন তারা এ সম্পর্কে কিছু জানেন না!

গরব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি কেমন করে জানলে? লেখা থেকে অনেক কিছু জেনেছি, তারপর একবার হিমাচ্ছাদিত অতি দুর্গম তোকলাং গোম্পায় সংস্কার কর্মসূচি দেখার দুর্লভ সুযোগ হয়েছে।

  • সংস্কার কর্মসূচি আবার কী?
  • তোকলাং-এ ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর-তরুণদের সংস্কার করে ওই আশ্রমেই ৫-৬ বছর ধরে বিদ্যা শিক্ষা হ্য়, পরে তাঁরা গৃহাশ্রমে ফিরে যান। গায়ে অঙ্কোল তেল মেখে নগ্ন অবস্থায় বরফের মধ্যে এই সংস্কার হয়।
  • খুলে বলো!
  • সমুন্নত লিঙ্গ তরুণদের এক সারিতে রেখে, অল্পবয়সের জন্য অপুষ্ট ইন্দ্রিয় কিশোরদের ভিন্ন সারিতে দাঁড় করানো হয়। তারপর পুষ্ট ইন্দ্রিয় কিশোরদের মূত্র ছিদ্রে ক্যাথিটার ঢুকিয়ে তাতে পারদ-পুটিত ভেষজরস ঢালা হয়!
  • ক্যাথিটার আবার কী? ব্যথা করবে না? পারদ-পুটিত ভেষজরস দিয়ে কী হবে?
  • ক্যাথিটার অত্যন্ত সরু নল। না না, ঠিকভাবে ঢোকালে ব্যথা করে না, পারদ-পুটিত ভেষজরস ছেলেরা নৌলামুদ্রার টানে লিঙ্গেন্দ্রিয় বার বার উপরে টেনে শোষন করে। বীর্য স্তম্ভনের এই প্রাচীন পদ্ধতি গোরক্ষ সংহিতা, হঠযোগ প্রদীপিকা, ঘেরণ্ড সংহিতার মতন প্রাচীন ভারতীয় যোগ ও তন্ত্র শাস্ত্রেও লেখা আছে। কিন্তু এগুলিতে লিঙ্গেন্দ্রিয় দিয়ে ঘি, দুধ, জল শোষণের বিবরণ থাকলেও পারদ-পুটিত ভেষজরসের কথা কোথাও পড়িনি। এখন ভারতে কোথাও প্রক্রিয়া কোথাও চালু নেই। ভারতে তো এখন শুদ্ধ পারদ ভস্ম পাওয়াই দুষ্কর।
  • তুমি বললে না যে পারদ-পুটিত ভেষজরস লিঙ্গ দিয়ে শোষণ করলে কী হয়?
  • স্ত্রীসংসর্গ ছাড়া অন্য কোনোভাবে ধাতুস্রাব হবে না। স্ত্রীসংসর্গ করলে শীঘ্রপতন না হয়ে ভোগকাল দীর্ঘ হবে। প্রমেহ, স্বপ্নদোষ ও ধাতুস্রাব থেকে সংস্কারী যুবক সারাজীবন মুক্ত থাকবে। বীর্যস্তম্ভনের ফলে প্রাণরস নিশ্চল থাকবে। জীবন হবে সংযমিত। এবার তোমাকে বলি, সেখানে যাদের অপুষ্ট ইন্দ্রিয় ছিল, তাঁদের পৃথক সারিতে এনে লিঙ্গে বিশেষ ভেষজরস মালিশ করা হল। দু-দিন পরে তৃতীয়দিনে তাঁদের প্রাঙ্গণে আনা হল। তখন দেখি যাদের অপুষ্ট ইন্দ্রিয় ছিল, আজ তাদের সকলের পূর্ণতা এসে গেছে। এমনকি যাদের সুক্ষ সুক্ষ যৌনরোম ছিল, তাদের ঘন যৌনকেশ হয়েছে।
  • এত দ্রুত, কী বলছো?
  • হ্যাঁ, আর তৃতীয়দিনে এদেরও মূত্রছিদ্রে ক্যাথিটার দিয়ে পারদ-পুটিত ভেষজরস শোষণ করানো হয়। সেই গোম্পাতেই দেখেছি, যারা ৩-৪ বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে তাদের বজ্রদৃঢ় গড়ে তুলতে রোজ ভোরে বিস্তৃত তুষারাবৃত ময়দানে বিবস্ত্র বসিয়ে প্রাণায়াম করানো হয়। তাদের সকলের জিভের নিচের অংশ ছেদন করা।কুম্ভকের সময় সকলের শরীর ফুলে ঢোল ঢোল। জিভ উলটে গলায় পুরে রাখে, সকলের দৃষ্টি ভ্রুমধ্যে, তাদের শ্বাসও পূর্ণরূপে থেমে থাকে। এভাবে কিছুক্ষণ পরই এই বরফের দেশেও তাঁরা নগ্ন শরীরে দরদর করে ঘামতে থাকে।
  • বলেন কী?
  • হ্যাঁ, এটা খেচরী মুদ্রার সঙ্গে যুক্ত প্রাণায়াম। যোগশাস্ত্রে একেই বলে সূর্যভেদী।
  • এই প্রশিক্ষণ কী কাজে লাগে?
  • এই প্রশিক্ষণ নিয়ে যারা সংসার জীবনে ফিরে যান, তাঁদের গৃহধর্মে স্ত্রী সন্তানাদি থাকলেও ব্রহ্মচারী বলা যায়। কারণ একমাত্র সন্তান ধারণের জন্যই তাঁরা বিন্দুপাত করবেন। অন্যসময় স্ত্রী ঋতু রক্ষার্থে যতই সংসর্গ করুন না কেন, শক্তিপাত করবেন না। এদের ধারণ ক্ষমতা নিজ আয়ত্বে থাকে। যখন তখন এদের কামেচ্ছা হয় না। জীবন হয় সংযমিত ও নিয়ন্ত্রিত।
  • আপনি অনেক কিছু জানেন দেখছি!
  • আমাদের দেশে একজন তিব্বত বিশেষজ্ঞ ছিলেন, নাম শরৎচন্দ্র দাস, তাঁর লেখা পড়েই প্রথমে জেনেছি ভারতীয় যোগীদের আবিষ্কার এসব পদ্ধতি এখনও তিব্বতে চালু আছে। তোকলাং থেকে শালম মঠে গিয়ে ৪২জন যুবকের আরও উন্নত যোগ প্রশিক্ষণ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সেখানে ওদের প্রথমদিনেই মস্তক মুণ্ডন করে বিবস্ত্র অবস্থায় বিশিষ্ট ভঙ্গিতে বসানো হয়। আমি দেখি, ২১ জন বাঁ পায়ের গোড়ালি মূলাধারে দাবিয়ে ডান পা লম্বা ছড়িয়ে রেখেছেন। মূলবন্ধ, মহাবন্ধ, জ্বালন্ধর বন্ধ করে মুহুর্মুহু কুহু নাড়ির আকর্ষণে শক্তিকেন্দ্র মূলাধার থেকে কুণ্ডলিনীকে টানছে। আমি জিজ্ঞেস করলে তাঁদের প্রশিক্ষক বলেন, ‘এরা এখন কুম্ভক মুদ্রা অভ্যাস করছে, অন্য ২১জন তাঁদের সাহায্য করছে!’ আমি দেখি যে কুম্ভক মুদ্রায় নবীন যোগীদের রোমহর্ষিত। সহযোগীরা তাঁদের বাঁ হাতের চার আঙুল দিয়ে সাধকদের লিঙ্গমূল স্বাধিষ্ঠান চেপে ধরে নাভিকেন্দ্রে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়ে চাপ দিচ্ছে। ডান হাতে তাঁরা সাধকদের মস্তকে হাল্কা হাল্কা চাপড় দিচ্ছে। দেখতে দেখতে সাধকরা ভাববিভোর হয়ে তাঁদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আনন্দে অনেকের চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রুধারা গড়াতে থাকে। প্রশিক্ষক বলেন, তোকলাং গোম্পাতে এদের সকলের কুণ্ডলিনী জাগ্রত ছিল। আজ এদের সুষুম্নাতে চালিয়ে উর্ধরেতা করা হচ্ছে। আজ ২১ জনের মধ্যে ১৭জন দ্বিতীয় গ্রন্থী ভেদ করে মণিপুরে উঠেছেন। ৪ জনের মূলাধার ছেড়ে স্বাধীষ্ঠানে থেমেছে। তাঁর মানে সকলেই সফল। প্রথমদিনে তাঁদের লক্ষ্যই ছিল স্বাধীষ্ঠান ভেদ করা। আগামীকাল বাকি ২১জন সাধনায় বসবেন, আজকের ২১জন তাঁদের সহযোগিতা করবেন। এরপর প্রতি দশদিন অন্তর এক একটি চক্র, গ্রন্থি বাঁ পদ্ম ভেদের কৌশল শেখানো হবে। সহস্রদল কমলে পৌঁছুতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। অধিকাংশ সাধক হৃদয়দেশে অনাহত বাঁ কন্ঠদেশে বিশুদ্ধচক্র ভেদ করে কেউ কেউ ‘আজ্ঞাচক্র’-এ শক্তিচালন করতে পারেন, কিন্তু ভেদ করতে পারেন না। আজ্ঞাচক্র বাঁ কূটস্থ ভেদ বিধাতার অনুকম্পা আর সাধকের জন্ম-জন্মান্তরের সুকৃতির শক্তিতে বলীয়ান দু’একজনই করতে পারেন। অবশ্য নাভিকেন্দ্র ‘মণিপুর’ ভেদ হলেই উচ্চকোটির সাধক বলে মানা হয়।
  • আরেকটু ভেঙে বলো!
  • দ্বিতীয় বা তৃতীয় কমলে শক্তির উর্ধগমন হলে ভাবাবেশ এত তীব্র হয় যে, সাধক জন্ম-জন্মান্তর ধরে সেই কুহকে ডুবে থাকতে চান। তুমি স্ত্রী সম্ভোগ করেছ?
  • গরব দুষ্টু হেসে মাথা নেড়ে সায় জানায়। রামপ্রসাদ বলে,- পুরুষের স্ত্রী সম্ভোগ বাঁ স্ত্রীর পুরুষ সম্ভোগ সফল হলে যে অনির্বচনীয় আনন্দ হয় তা পরস্পরকে নিয়মিত মিলনের বাসনাতে আমৃত্যু তৃষ্ণার্ত রাখে। এমনকি অক্ষম বুড়োরাও ইন্দ্রিয় সুখের স্মরণে কল্পলোকে থাকে। এই দুই গ্রন্থিভেদ সম্ভব হলেও সাধকের এমনই অবস্থা হয়। বেশিরভাগ সাধকই দু’একটি ভেদ করে তুষ্ট হয়ে পড়েন। সামান্য কয়েকজন আজ্ঞাচক্র ভেদ করেন, যাদের সহস্রারে স্থিতি হয়। তাঁরা ব্রহ্মময় হয়ে পড়েন। তাঁরাই হন ত্রিকালজ্ঞ, সমদর্শী ও ভগবৎ পদবাচ্য।
  • তুমি যে বললে, সহায়করা বাঁ হাতের চার আঙুল সাধকের লিঙ্গমূলে চাপ দিয়ে আর নাভিকেন্দ্রে বুড়ো আঙুল চেপে অন্যহাতে মাথায় চাপড় দেয় – কেন?
  • কুণ্ডলিনী আধারপদ্ম ছাড়ার সাথে সাথেই মানে দ্বিতীয় গ্রন্থির দিকে এত বেশি কামবাসনা জেগে ওঠে যে রেতপাতের সম্ভাবনা একশো শতাংশ। সেই মুহূর্তে বীর্যপাত না হলে সাধকের সুষুম্নাকাণ্ডের রোমাঞ্ছ প্রতি রোমকূপে অনুভূত হয়। তখন নাকি তাঁরা সম্ভোগকালীন স্খলন থেকেও আটগুণ তৃপ্তি ও প্রশান্তি পান। সহায়করা নির্দিষ্টস্থানে চাপ দিয়ে ব্রহ্মতালুতে চাপড় দিতে থাকলে বীর্যপাত হবে না। শক্তিচালনও সহজ হয়।
  • সাধকদের মাথা ন্যাড়া কেন করেছিল?
  • ব্রহ্মতালুর অনুভব ক্ষমতা স্পষ্ট করতে, শুধু মাথান্যাড়া নয়, সহায়কদের যৌনাঙ্গের একটি উপশিরা চেনাতে তাঁদের যৌনকেশও কামানো হয়।
  • আর এই যে বললে, কুণ্ডলিনী জাগানো বাঁ উপস্থাপন – এসব আবার কি?
  • কুণ্ডলিনী চৈতন্য বাঁ জাগরণ একটি যোগপ্রক্রিয়া। সংসারীরা জপসিদ্ধির জন্য আর যোগীরা ষঠচক্র ভেদ করার জন্যে এই চালনপ্রক্রিয়া বাঁ জাগরণ প্রক্রিয়া অভ্যাস করেন। ষষ্ঠচক্র বাঁ আজ্ঞাচক্রেরই আরেক নাম কূটস্থ। এই চক্র ভেদ করলে বাকি অন্যান্য গ্রন্থি স্বাভাবিক ভাবেই খুলে যায় !

আরও চাপাস্বরে রামপ্রসাদ বলেন , সো সা লিং - এর মঠাধ্যক্ষ একজন হঠযোগী তন্ত্রসাধক এবং তিনি অমর হতে চান। কিন্তু তিনিও তোমার বাবারই মতন ভুল পথে চলেছেন। তিনি এমনকি আমার চিন্তা জগতে ঢুকে আমার পরিকল্পনা জানারও যে চেষ্টা করেছিলেন, তা টের পেয়েছি। কিন্তু আমি নিজের মনকে একটি অপ্রতিরোধ্য ঘোমটা পরিয়ে রাখার বিদ্যে জানি। তিনি অনেক চেষ্টা করেও সেই। পর্দা ভেদ করতে পারেননি । কিন্তু একথা সত্যি যে তিনি অনেক ক্ষমতা রাখেন । এই সাে সা লিং রহস্যের ঘ্রাণ আমি অনেক দূর থেকে পেয়েছি । সেই রহস্য উদঘাটনের আকর্ষণেই এতদূর থেকে হিমালয় ও অন্যান্য পর্বতের গিরিকর ও বন্ধুর পথ পার করে এসেছি । নিজেকে একজন ভারতীয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছি । বনদের চিকিৎসা পদ্ধতি জানতে চেয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি । ওরা একরকম নিমরাজি হয়ে আমাকে গ্রহণ করেছে । কিন্তু আমার শিক্ষা চলছে ঢিমেতেতালে । সবসময় তটস্থ থাকতে হয় , কেননা ওঁরাও সতর্ক । ওরা যেহেতু প্রেতবিদ্যায় পারদর্শী , কেউ ওদের বোকা বানাতে চাইলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । তোমার চিকিৎসক মিগমার আপাতত আমাকে তোমার মানসিক চিকিৎসার দায়িত্ব দিয়েছেন । আমার নির্দেশ মতন তুমি নিয়মিত কিছু যোগাসন অভ্যাস করো । তাহলেই রোজ আমার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবে !

চলবে ...