শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

মহাসত্যের বিপরীতে,পর্ব -৮

‘বাধা পেলেই শক্তি নিজেকে চিনতে পারে – চিনতে পারলেই আর ঠেকান যায় না’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আট. থোগাপার প্রতিশোধ ও কৈলাসপুত্রের জয়যাত্রা

গরব ভাবতো, কোনও ভাল গুরু পেলে সে একদিন থোগাপার মতন তান্ত্রিক হবে। তার প্রতি লাগস্পার সমস্ত অবিচারের প্রতিশোধ নেবে। গরবের মতন থোগাপারও ছিল এক অসহায় দুঃখিনী মা। তাঁর গল্পটি যদিও অন্যরকম। গৃহশিক্ষকের কাছে তাঁর গল্প শনেছে গরব।

১০৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের গুন থাং প্রদেশের কিয়াংসা উপত্যকায় থোগাপার জন্ম। পিতার নাম সেরাব গিয়ালৎসেন, মায়ের নাম কারমো কিয়েন, ছোট বোনের নাম পেতা আর বাগদত্তার নাম ছিল জেসে। তাঁর ঠাকুর্দা ছিলেন কবিরাজ আর বাবা একজন পাকা জুয়ারি। জুয়া খেলে একসময় তিনি খুব বড়লোক হয়েছিলেন। আবার এক ধূর্ত বহিরাগত জুয়ারির পাল্লায় পড়ে একদিন সর্বস্ব খোয়ান। তারপর ভিখিরির মতন ঘুরতে ঘুরতে দক্ষিণে হিমালয়ের পাদদেশে তীর্থযাত্রায় ভ্রমণরত ঠাকুর্দার শরণাপন্ন হন। তিনি আর কোনওদিন জুয়া খেলবেন না এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঠাকুর্দা আবার তাঁকে ব্যবসার জন্য মূলধন দেন। ঠাকুর্দার পরামর্শে সেই টাকায় তিনি দুগ্ধবতী গরুর পাল কিনে এনে পূর্বদেশে বেশিদামে বিক্রি করেন। সেই টাকায় ভেড়ার পাল কিনে মহানন্দে সেগুলিকে লালন করে সেগুলির পশম বেশিদামে দক্ষিণ তিব্বতের মানুষদের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকে কমদামে তুলো কিনে উত্তর তিব্বতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। এভাবে সেরাব গিয়ালৎসেনের জীবনে আবার সুদিন আসে। তাঁর বাবা সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী কণে কারমো কিয়েনের সঙ্গে বিয়ে দেন।

সেরাব গিয়ালৎসেনের দাদা-বৌদি ও অন্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা এই বিয়েতে খুশি হননি। থোগাপার শৈশবেই তার ঠাকুর্দা মারা যান। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করে জুয়া ছাড়লেও মদ ছাড়েনি সেরাব গিয়ালৎসেন। সংসারেও তেমন মন ছিল না। কারমো কিয়েন ছিল তাঁর হাঁটুর বয়সী। সেজন্যেই হয়তো দুজনের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব হয়নি। আর মাত্র কয়েক বছর না কাটতেই মারা যান সেরাব গিয়ালৎসেন। তার মৃত্যুর পর থোগাপা ও তার মা জানতে পারে যে কারমো কিয়েনের বয়স কম বলে সেরাব গিয়ালৎসেন তার দাদা-বৌদিকেই বিষয় সম্পত্তির ভার অর্পন করে থোগাপা পরিণত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তাদের দেখভালের দায়িত্ব লিখে দিয়ে গেছেন।

কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর জেঠু ও জেঠিমা তাদের সমস্ত ধনসম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদেরকে সেই প্রাসাদোপম বাড়ি থেকেও তাড়িয়ে দিলেন। নিরীহ কারমো কিয়েন কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে কোলে নিয়ে শিশুপুত্রের হাত ধরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব যারা এককালে সেরাব গিয়ালৎসেন এবং তাঁর বাবার ছাতার তলায় পরগাছা ছিল তাঁরাও এ দৃশ্য দেখেও দেখল না। বাধ্য হয়ে কারমো কিয়েন ওই গ্রামের প্রান্তে তাদেরই একটি পুরনো জমি দেখভালের জন্য বানানো কুঁড়েঘরে থাকতে শুরু করেন। তাঁর স্বামীর দুয়েকজন মদের আড্ডার বন্ধু মাঝেমধ্যে লুকিয়ে তাদেরকে খাবার দিয়ে আসতেন।

কারমো কিয়েন শুধু কাঁদেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি স্বামীহারা, তার ওপর নির্দয় আপনজনদের এই অত্যাচার; সব থেকেও তারা সর্বহারা! দু’দিন আগে যারা ছিল ধনী, আজ তারা পথের ভিখিরি! শিশুকন্যা আর ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি শুধু বারবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলেন, ‘হায় ঈশ্বর, হায় তথাগত!’ অগত্যা ছেলেমেয়েকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে কারমো কিয়েন তখন প্রতিবেশিদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঠিকে কাজ শুরু করেন। যব পেষা, মাখন তোলা, সেলাই করা, বাসন ধোঁয়া, ঘর পরিস্কার করা, কুয়ো থেকে জল তোলা। ধীরে ধীরে দ্রুত কাজ করতে শিখে নিয়ে তিনি আরও বাড়িতে কাজ করতে থাকেন। রাতে বাড়ি ফিরে কুপির আলোয় ছেলেকে পড়ানোর পর রোজই বলতেন, তুইই আমার একমাত্র ভরসা, আমার আশার আলো, এত অত্যাচারের প্রতিশোধ তোকে নিতেই হবে!

থোগাপা শিশু হলেও পরিস্থিতি তাঁর বয়স দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তিনি চুপ করে মায়ের কথা শুনতেন, মায়ের কষ্টে চোখ ছলছল করতো, চোয়াল দৃঢ় হতো! আবার কোনওদিন মায়েছায়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে একসঙ্গে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়তেন। তারপর প্রাথমিক পাঠ শেষ করেই কিশোর থোগাপা একদিন সত্যি সত্যি মাতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে আদরের বোন পেতা আর দুঃখিনী মাকে বিদায় জানিয়ে একটি খচ্চরের পিঠে চেপে পথে বেরিয়ে পড়েন উত্তর প্রান্তের কোনও এক নামী জ্ঞানী তান্ত্রিকের খোঁজে।

একাদশ শতাব্দীর তিব্বত! সেই সময় তাঁর সঙ্গে পথে দেখা হয় তারই মতন কোনও তন্ত্রগুরুর খোঁজে বেরিয়ে পড়া পাঁচ কিশোরের। তারা প্রত্যেকেই দামি ঘোড়ার পিঠে চেপে চারপাশ দেখতে দেখতে এগুচ্ছিলো। ওকে দেখতে পেয়ে তাদের মধ্যে একজন ভাঙ্গা ভাঙ্গা তিব্বতিতে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি ভুটিয়া?

থোগাপা মাথা নাড়েন। তিনি বলেন, না আমি তিব্বতি।

ওর কথা শুনে আরেকজন হেসে বলে, -বাঃ, তুমিও আমাদের প্রত্যেকের মতোই ‘ত’ বাসী। থোগাপা বুঝতে না পারলে ওরা বুঝিয়ে বলে। ওরা পাঁচজন ভারতের ভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে, তমলুক, তালপাড়া, ত্রিবেণী, ত্রিপুরা এবং ত্রিচূর; এই সবক’টা অঞ্চলের নামের আদ্যক্ষর ‘ত’ দিয়ে। তারা সবাই ভুটিয়াতেই কথা বলছিলো। ভুটিয়ার সঙ্গে থোগাপাদের স্থানীয় কথ্য তিব্বতির যথেষ্ট মিল থাকায় সে অনায়াসে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। এদের মধ্যে ত্রিপুরার ছেলে ডোম্বীপার সঙ্গে থোগাপার চেহারার মিল রয়েছে। কিন্তু বাকিদের নাক উঁচু, বড় বড় চোখ – অন্যরকম।

ওরা পরস্পরকে সাহায্য করে সাবধানে খরস্রোতা সাংপো নদ পার হয়। সেই সময় তিব্বতের সর্বত্র তন্ত্রচর্চা চলে। তাই সবখানে তান্ত্রিকের ছড়াছড়ি। তাদের মধ্য থেকে উপযুক্ত গুরু খুঁজে পাওয়া একমাত্র পূর্বজন্মের কর্মফল ছাড়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই ছয় কিশোরের মিলিত কর্মফলেই হয়তো তাঁরা মহান লামা ইয়ংতুন ত্রোগ্যালের কাছে পৌঁছে যান। একটি বিশাল ফুলের বাগানের মাঝে একটি বাড়িতে তাঁর আশ্রম।

ওই ছয় কিশোর নিজেদের সততা, আচার-ব্যবহার ও সেবায় সন্তুষ্ট করে তন্ত্রবিদ্যা শিখতে শিখতে ক্রমে যুবক হয়ে ওঠে। হাতে হাতে সবকাজ করতো বলে তাদের বন্ধুত্বও বেশ প্রগাঢ় হয়। তাদের মধ্যে ত্রিপুরার ডোম্বীপার সঙ্গে থোগাপার সম্পর্ক সবচাইতে বেশি নিবিড় হয়। তাঁর কাছেই থোগাপা প্রথম জ্যাঠা জ্যাঠির নিষ্ঠুরতার কথা বলতে বলতে কেঁদে ভাসায়। তাঁর কথা শুনে ডোম্বীপাও তাঁর মায়ের মতোই হিসহিসিয়ে বলে, তোকে এই অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে হবে...নিতেই হবে।

গুরু লামা ইয়ংতুন ত্রোগ্যাল বলেছিলেন, সাবধান, এই তন্ত্রবিদ্যা দিয়ে কোনও ভাল মানুষের ক্ষতি করিস না!

থোগাপা বন্ধু ডোম্বীপার পরামর্শে বলীয়ান হয়ে জ্যাঠা-জ্যাঠির উপর প্রথম আঘাত হানে। একটি বিয়ের উৎসবের সময় তাদের প্রাসাদে বজ্রপাত করে। আর তারপর পরিষ্কার আকাশ থাকা সত্ত্বেও পাকা ফসলের ক্ষেতে শিলাবৃষ্টি করে। এভাবে জ্যাঠার পরিবারও ভিখিরি হয়ে পথে নামলে সেত বাড়ি ফিরে এসব দেখে বেশ খুশি হয়। বন্ধু ডোম্বীপাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। তাঁদের চোখের সামনে বেশ ধুমধাম করে ডোম্বীপার সঙ্গে একমাত্র বোন পেতার বিয়ে দেয়। ডোম্বীপা ছিলেন ত্রিপুরার রাজার ছেলে। খুব সুন্দর কবিতা লিখতেন। পেতাকে তিনি দেশে ফিরে রাজরানী করেছিলেন।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে গুরুর আদেশ অমান্য করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অনুশোচনায় থোগাপা প্রায়শ্চিত্য করেন। তারপর গুরু মার্পার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে হয়ে ওঠেন তিব্বতে তন্ত্রসাধকদের চূড়ামনি গুরু মিলারেপা।

গরব মিলারেপার কথা ভেবে কপালে হাত ঠেকায়। সে যখন নিশ্চিত হয় যে লাগস্পা তার বাবা নয়, তার বিরুদ্ধে আর কোনও ক্ষোভ থাকে না। সে শুধু গোলামী থেকে মুক্তি চেয়েছিল। তাই সে নাগপোকে নিয়ে পালিয়েছে। সারারাত কনকনে শীতে লাগাতার ঘোড়া চালিয়ে সে ভোরের আগেই শৈশব-কৈশোরের গ্রাম ছেড়ে অজানা অনিশ্চয়তার পথে অনেকদূর এগিয়ে যায়। গায়ে তখনও ছারপোকার দংশনের জ্বালা। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই ছারপোকার দংশন তার নিত্যসঙ্গী।

সূর্যোদয়ের পর ধীরে ধীরে ঠান্ডা কমে। বাতাস প্রাণবন্ত হয়। দিগন্তবিস্তৃত মেঘহীন নীল আকাশের নিচে দূরবর্তী পর্বতমালা বেষ্ঠিত শুষ্ক মালভূমিতেও গরবের মনে ক্রমে একটি জোরালো আনন্দ, এক অভূতপূর্ব অনির্বচনীয় পুলক জেগে ওঠে – সে এখন মুক্ত!

কোথাও একটিও পাখি উড়ছে না, কোনও জনপ্রাণীর চিহ্নমাত্র নেই। নিঝুম নিস্তব্ধ চরাচর। তবুও মুক্তির আনন্দ ধীরে ধীরে ওর শরীরে ছারপোকার দংশনের জ্বালা ভুলিয়ে দেয়। সমস্ত দুরূহ গাধার খাটনি থেকে, বংশপরম্পরায় অন্যের আদেশে কলের পুতুলের মতন চলার থেকে মুক্তি!

সে একবার ঘোরার পিঠ থেকে নেমে দুইহাত কোমরে রেখে বুক ভরে তাজা বাতাস নেয়। ঘোড়াটার গালে চুমু দিয়ে তাকে ঘাস খাওয়ার সুযোগ দিয়ে সে তাজা বাতাসে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে হাল্কা হয়। এই বাতাস তাকে মাতোয়ারা করে তোলে। সে ঘোড়াটার গলা জড়িয়ে ধরে এবার তার মুখে চুমু খায়। বিড়বিড় করে বলে, ‘নাগপো, আমার আদরের নাগপো...’। সে নাগপোর সমস্ত মুখমণ্ডলে চুমু দিতে থাকে। এই আদরে সে টের পায় – ঘোড়াটার গায়ের লোম কাঁটা দেয়, চোখ চকচক করে ওঠে। গরব আবার নাগপোর পিঠে চেপে চারপাশের প্রকৃতির দিকে একজন বিজয়ীর দৃষ্টিতে তাকায়। ঘোড়াটি তার অনুমতি ছাড়াই দুলকি চালে চলতে শুরু করে। দমকা বাতাস প্রকৃতিকে সতর্ক করে, সা – ব - ধা- ন! কৈলাসপুত্র জয়যাত্রায় চলেছেন।

একে কী জয়যাত্রা বলা চলে? সে জানে না কেমন হবে এই যাত্রাপথ, সে জানে নাআগামীকাল, এমনকি আগামী মুহূর্তটিকেও। সে তো আর তাঁর পিতার মতন রহস্যময় কোনও অলৌকিক মানুষ নয়। সে কোনও দৈবশক্তি জানে না। এই মুহুর্তে তার কোনও উদ্দেশ্য নেই, কোনও পরিকল্পনাও নেই। এই পালিয়ে মুক্তির স্বাদ পাওয়ার যাত্রা গতরাতে শুরু হলেও মনে মনে সে অনেকদিন আগে থেকেই পালানোর কথা ভেবেছে। যেদিন গৃহশিক্ষকের কাছে তার প্রশংসা শুনে লাগস্পা তার পড়া ছাড়িয়ে দিয়েছিল সেইদিন থেকেই প্রায় প্রতিদিন সে পালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। লাগস্পার আস্তাবলের সেরা ঘোড়া এই নাগপোকে সে-ই ছোটবেলা থেকে লালনপালন করেছে। কিন্তু যেদিন থেকে আস্তাবল আর গোয়ালের কাজ পেয়েছে সেদিন থেকে সে নাগপোর আদর যত্ন আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল একদিন তাকে নিয়ে পালাবে বলেই।

দীর্ঘদিন আগেই অবচেতনে শুরু হওয়া এই যাত্রা অবশেষে বাস্তবে পরিণত হওয়ায় সে কোনদিকে যাবে তা ঠিক করতে পারে না। যেদিকে দু’চোখ যায় ঘোড়া চালিয়ে ছোটবেলার গ্রাম থেকে যত দূরে যাওয়া যায় শুধু সেই চেষ্টাই করে যায়। তাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু সে যেদিকেই যাবে নিজের মর্জিমতন যাবে। এখন এই ঘোড়া ছাড়া এই পৃথিবীতে ওর আর কেউ নেই।

এখন লাগস্পার মনে কী চলছে তা অনুভব করার চেষ্টা করে সে। লাগস্পা নিশ্চিতভাবেই ভাববে যে তার বাড়ির মৃতা দাসীর ছেলেটির হাতে যেহেতু টাকা-পয়সা নেই সে প্রথমে ঘোড়াটি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতে চাইবে। সেই ঘোড়া বিক্রি করতে তাকে যেতে হবে নিকটবর্তী বড় চীনা বাজারে। গরব যে কাজ চালানোর মতন চীনা ভাষা জানে তা লাগস্পার জানা আছে। এলাকায় মোতায়েন চীনা সৈন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করে সে ভাষাটি শিখেছে। চীনাদের সঙ্গে কথা বলতে তার কোনও তর্জমাকারীর প্রয়োজন পড়ে না। লাগস্পা একথা জানে বলেই সে নিশ্চয়ই দার্তসিদোগামী হাইওয়েতে তল্লাশি অভিযান চালাবে। গরব জানে, চীনদেশের মানচিত্রে সেচুয়ান প্রদেশের পশ্চিমপ্রান্তের এই শহরটির নাম লেখা রয়েছে তাচিয়েলু। গরব সে পথে পা না বাড়িয়ে উত্তরের অরণ্যের দিকে যে পথটা গেছে সেই পথকে বেছে নেয়।

সত্যি সত্যি গরবের কাছে কোনও টাকা নেই। কিন্তু তাঁর ঘোড়ার জিন সংলগ্ন থলে দুটিতে শুকনো মাংস, ৎসাম্পা, মাখন আর চা এতটাই রয়েছে যে তাঁর সপ্তাহখানেক চলে যাবে। ততদিনে সে লাগস্পার থেকে যতটা সম্ভব দূরে চলে যাবে।