শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

করোনাকালের ডায়েরি, শেষ পর্ব

শুভ ঠাউদ্দার এই নাছোড়বাব্দামি দেখে হেসে ফেলে , চল-অচল-অ গৌতম খুশিই হইব ...

--- আইচ্ছা তুমি উইখানে গিয়া কি করবা কও ত , আগের মতন বয়স আছে নাকি তুমার , মাথা টাথা ঘুরাইয়া পড়বা ...

শ্যামলীর এইউদ্বেগ দেখে শেখরবাবু হাসতে হাসতে বলে ওঠেন , তাইলে তুমিও আমাগ লগে চল-অ , আমি মাথা ঘুরাইয়া পল্লে তুমি ধরবা...

শুভ হাসে ।

শ্যামলী হিস হিস করে ওঠে, ফাইজলামি করনের আর জাগা পাইলানা ...

শেখরবাবু বীরদর্পে স্কুটির পেছনে গিয়ে বসেন ।শুভসবার সামনে দিয়ে স্কুটিটা চালিয়েবেরিয়ে গেল । কেউ কিছুটি বলতে পারলো না । শুধু অসহায় তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার দিকে । শেখরবাবু মনে মনে ভাবতে থাকেন , গৌতমের এই কঠিন বিপদে দৈহিক ভাবে কিছু করে উঠতে না পারলেও ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো একান্ত জরুরি ...।

Space ###

শেখরবাবু আর শুভর শ্মশান থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল । মাঝখানে হঠাৎ আকাশভাঙা বৃষ্টি হওয়াতে সৎকারে বিঘ্ন ঘটেছে ঘন্টাখানেক । শেখরবাবু চানটান সেরে যখন ঘরে এসে সোফায় বসলেন তখন সন্ধে নেমে গেছে । শ্যামলী চা নিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালো ।

--- খুব কষ্ট হইছে উইখানে না ?

--- কষ্ট হইব ক্যান , গৌতম আমারে ত কিছুই করতে দেয় নাই , আমি বইয়া বইয়া শুধু অর্ডার দিছি , কাম ত করছে গৌতম , শুভ আর ওই ডোমটা , জগন্নাথ ...

---হচাই তুমরা তিনজনই গেছিলা , আর কেউ যায় নাই !

শ্যামলীর কন্ঠে আক্কেল গুড়ুম হওয়ার ঝোঁক ।

শেখরবাবু কোনো রা না করে হাঁ-সূচক মাথা নাড়াল শুধু । শ্যামলী শেখরবাবুর দিকে কিছুক্ষণহা করেতাকিয়ে থেকে কাঁপা কাঁপা ভীত গলায় বলে ওঠে , কী দিন আইল গ ...

শ্যামলীর দু চোখ ভিজে ওঠে ।


###

রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়েছে । শুভর ঘরে লাইট জ্বলছে । বোধ হয় শোয়নি । ও তো রাত জেগে স্টাডি করে । শ্যামলীর শেষ রাত । কিন্তু আজও শেখরবাবুরঘুমগুলো যেন সব ধুয়েমুছে নিকেশহয়েগেছে । কেবল গৌতমের মৃত পিতার মুখচ্ছবিটা চোখের ওপর ভেসে উঠছে ।মৃত্যু হলো অন্য রোগে অথচ লোকে তাঁকে সন্দেহ করেছে করোনায মৃত বলে । এমন কি তাঁর আত্মীয়স্বজনরাও পর্যন্ত ! কী মর্মান্তিক ! গৌতমের কান্নাভেজা মুখটাও বার বার ভেসে উঠছে তাঁর চোখের ওপর ...। ছেলেটি সারাক্ষণই শুধু কেঁদেছে !

শেখরবাবু বেশিক্ষণ আর শুয়ে থাকতে পারলেন না । বিছানা থেকে নেমে পায়চারি করা শুরু করলেন । তাঁরও যদি এমনঅবস্থা হয় ! মাথায় যেন কোনো কাজ করছে না তাঁর। ইচ্ছে করে , শ্যামলীর ঠাকুরঘরে গিয়ে সিংহাসনের ওপর জোরে জোরে কপাল ঠোকেন ! ...

এমন সময় অন্ধকারে তাঁর সামনে আরেকটি ছায়া এসে দাঁড়ালো ।

--- কি হইল ঠাউদ্দাতুমি অখন-অ ঘুমাও নাই !

এ তো শুভর কন্ঠস্বর ! শেখরবাবু চমকে ওঠেন , শুভ তুই ! আইজ বুজি স্টাডি নাই ?

--- আছে আছে , কিন্তু গৌতমের কথা ভাইব্যা ভাইব্যা স্টাডিতে মন বসতাছেনা , তাই একটু বারান্দায় হাটতা ছিলাম , তুমারে দেইখ্যা আগাইয়া আইলাম ... তুমার চুখেওঘুম আইতাছে না তাই না ঠাউদ্দা ?

---হ রে শুভ , কাইল থিক্যা রাইতে আমার ঘুম আহে না ...

--- হইবই হইবই , পরিস্থির চাপ , আতংক , কু - ভাবনা ...একটু আগে স্ট্যাটিসটিক্স দেখলাম, অখন সারা বিশ্বের প্রায় আদ্ধেক মানুষ ইনসমনিয়ায় ভুগতাছে , লগে লগে ঘুমের অসুধের কোম্পানিগুলি ডাবল লাফা লুটতাছে । দাঁড়াও আনতাছি ...

বলতে বলতে শুভ চলে যায় ওর ঘরের দিকে । একটু বাদেই ফিরে আসে । তারপর শেখরবাবুর হাতে একটি ছোট্ট ট্যাবলেট দিতে দিতে বলে , লও ঠাউদ্দা , এই ট্যাবলেটটা খাইয়া শুইয়া পর ঘুম আইস্যা যাইব ...

--- তুই ঘুমের অসুধ খাস !

শেখরবাবু চমকে উঠলেন ।

--- হ ঠাউদ্দাখাই ,কুনো কুনো দিন বেশি স্টাডিতে মাথায় বায়ু চইড়া যায় , কিছুতেই ঘুম আইতে চায় না , তখন খাই ...কুনো ক্ষতি করে না ...লাইট পাওয়ারের ...রাইতে ঘুম না- হইতে না- হইতে অইন্য রুগে ধরব যে ...যাও ঠাউদ্দা খাইয়া শুইয়া পর ...

শেখরবাবু সুবোধবালকের মতো নাতির কথায় মজে গিয়ে ট্যাবলেটটা মুখে দিয়ে টেবিলে রাখা গেলাস থেকে একটু জলখেয়ে শুয়ে পড়েন ।

এরপর ঘুম ভাঙে পরদিন সকালে । উঠেই দেখেন বিছানায় শ্যামলী নেই । পাশের ঘরগুলো থেকে সবার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । রান্নাঘর থেকে টুংটাং শব্দ । শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছেশেখরবাবুর আজ । রাত জেগে কারো কাশি - সর্দির শব্দ শুনতে হয়নি !এ রকম সকাল অনেক দিন পর পেলেন তিনি । বিছানা ছেড়ে বাইরে এসেবেসিনের কাজ সেরে প্রতিদিনকার অভ্যেস মতোসবার খোঁজ নিতে থাকলেনতিনি । দীপক বাথরুমে ঢুকেছে । ওর ব্যাংকে যাওয়ার তাড়া । সাগরিকা ওর ঘরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত , ওর নাকি জনতা-সদনেআজ কিসের একটা ইন্টারভিউ আছে । বৃথাই খাটছে মেয়েটি ! ওখানে বাঙালির চাকরি অসম্ভব । বরং বেইজ্জতি হতে হয় কিনা মেয়েটির ওটাই চিন্তার । দিসপুরই বা যাবে কী ভাবে ও ! ও বলেছে বাসেই যাবে । কিন্তু , পাবলিক ট্রান্সপোর্টে তো উচিৎ হবেইনা । ওগুলো প্রতিদিন ঠিক মতো সেনিটাইজ্ড করা হয় কিনা সন্দেহ । শুভকেই বলতে হবে ওকে স্কুটি করে পৌঁছে দিয়ে আসতে । নিয়ে আসতেও হবে । কিন্তু শুভর তো উঠতে দেরি হয়ে যায় ।সাগরিকার ইন্টারভিউ দশটায় । নটার সময় রওনা দিতে হবে । শেখরবাবু তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিই স্কুটি করেদিয়ে আসবেন নাতনিকে । সেটা তিনি জানিয়ে রাখলেন সাগরিকাকে । সাগরিকা হই হই করে ওঠে , ঠাউদ্দা , তুমি দেখি আইজকাইল অমিতাভ বচ্চন হয়ে উঠতাছ হি হি হি ...

ওই মুহূর্তে রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে শ্যামলী ,

--- আইজকাইল তুমার ঘুম একটু বাড়ছে মনে হইতাছে ....তুমি না কইছিলা , বুড়া হইয়া আইলে মানুষের ঘুম কইম্যা আহে , তুমার ঘুম বাল্ল ক্যান ?

শেখরবাবু শ্যামলীর প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে লেখারঘরে ঢুকে গেলেন । একটু বাদে মাধবী চা দিয়ে গেল ।

###

শেখরবাবু সাগরিকাকে দিসপুর জনতা-সদনেরপরীক্ষাস্থলেপৌঁছে দিয়ে সেখানেই সদনেরচত্বরের বাইরেছাতিম গাছের ছায়ায় একটিখোলা চায়ের দোকানে বসে ঘন্টা খানেক কাটিয়ে দেবেন বলে স্থির করলেন ।কারণ, এ চত্বরে আর অন্য কোথাও একটু বসে সময় কাটানোর ঠাঁই চোখে পড়লো না । শেখরবাবুদোকানীর সংগে গাঁজাখুড়ি আলাপ শুরু করে দিলেন ।দোকানি অনেকবার চেষ্টা করেছিল তাঁর হাতে চায়ের গেলাস গুঁজে দিতে ।কিন্ত শেখরবাবু বার বার এড়িয়ে গেছেন এই বলে যে , তিনি স্পেশাল চা ছাড়া অন্য কোনো চা খান না । দোকানি বানাচ্ছিল লাল চা । শেখরবাবু কিন্তু লাল চাই পছন্দ করেন । কিন্তু শেখরবাবুর কেন জানি বার বার মনে হচ্ছিল দোকানির শরীরে করোনা আছে । ব্যাটা মাস্ক পরেছে কিন্তু নাকমুখ ওর খোলা । মাস্কটা ঝুলছে ওর থুতনির নিচে । তবে এখনো পর্যন্ত ওকে কাশতে দেখেননি শেখরবাবু । কিন্তু জ্বরটর আছে কিনা এই চিন্তা তাঁকে ছিঁড়েফিরেখাচ্ছে । তিনি দোকানির থেকে তাঁর অবস্থানের দূরত্ব মাপলেন মনে মনে । হ্যাঁ, ঠিক আছে ছ ফুটই হবে। তবুও তাঁর মনে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বার বার । কি জানি, যদি ...। আর ভাবতে পারেন না শেখরবাবু ।অথচ জনতা -সদনেরবাবুরা মাঝে মাঝেইএখানে এসে চা খেয়ে যাচ্ছেন । মস্তি করছেন ওর সংগে । ...

এমন সময় সাগরিকা এসে হাজির । শেখরবাবু বাক্যহীন হয়ে তাকিয়ে রইলেন ওর দিকে ! এত তাড়াতাড়ি ! হাতঘড়ি দেখলেন। তারপরআবার ওই বিস্মিত চোখে তাকালেন সাগরিকার দিকে । দেখলেন , সাগরিকার মুখটা ভার । চোখ দুটো ছলছলে ...।

--- ঠাউদ্দা , অক্ষনি চল-অ , আর এক মুহূর্ত থাকুম না ইখানে ...

বলতে বলতে সাগরিকা দ্রুত পা চালিয়েস্কুটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । শেখরবাবু কিছু বুঝে উঠতে পারেন না । অনেকটাই হতভম্ব হয়ে নাতনির হুকুম মেনে স্কুটিতে স্টার্ট দিয়ে দেন । সাগরিকা পেছনে বসে ।

শেখরবাবু সাগরিকাকে নিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছলেন । তাঁদের আসার শব্দ শুনে শ্যামলী হন্তদন্ত হয়ে ভেতরথেকে বেরিয়ে এলো ।

--- কী ওইল , এত্ত তাত্তাড়ি তুমরা চৈল্লা আইলা !

--- কী জানি, রিকার কী অইছে কে জানে ...

কথাটা বলে শেখরবাবু নাতনি সাগরিকার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন । সাগরিকা তখনও চেপে চেপে কাঁদছে । চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। শ্যামলী খুব উদ্বিগ্ন চোখে নাতনির কাছে দৌড়ে আসে ।

--- কী ওইছে গো শোনা আমার , শরিলটরিল খারাপ কল্ল নেকি !

বলতে বলতে সে সাগরিকার কপালে হাত দেয় । হাত দেওয়া মাত্র চেঁচিয়ে ওঠে শ্যামলী , ও মা গ , রিকার শরিল জ্বরে পুইড়া যাইতাছে গ ...

বলে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে শ্যামলী ।

শেখরবাবু আঁতকে ওঠেন , কও কি !

ওরা দুজনে ধরাধরি করেসাগরিকাকে ভেতরে নিয়ে যায় । মুহূর্তেরমধ্যে বাড়ির ভেতর যেন তুমুল ঝড় উঠলো । শ্যামলী-মাধবীকেছাপিয়ে শেখরবাবুর আতংকভরা গলাটাই চড়ে উঠছে । তিনি শুভর ঘরের দরজা ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে ডাকছেন ---

--- অই শুভ উঠ ...

ভেতর থেকে শুভ ঘুমের ঘোরেই সাড়া দেয় , কী ওইল তুমি দিদিরে লইয়া যাইবা কৈছিলা না ?

--- হ , গেছিলাম ত , ফিরাও আইছি , অর হঠাৎ জ্বর উঠছে ...

শুভ ধরমর করে উঠে বসে , কার জ্বর উঠছে কইলা !

--- রিকার ....

--- কও কি !

বলতে বলতে শুভ দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ।

ঘুম ঘুম চোখে সে খেই খুঁজে পাচ্ছে না কী করবে ! অনেকটা কাঁদো কাঁদো গলায় জানতে চায় , অখন কী করুম কও ত ঠাউদ্দা ,একটা প্যারাসিটামল খাওয়াইয়া দিলে হয় না ?

শেখরবাবুর গলা দিয়ে স্বর বেরোতে চায় না যেন । সারা শরীর কাঁপছে তাঁর । ওই অবস্থায় তিনি বলেন , আগে অর টেস্ট করান দরকার , সোয়াব টেস্ট ...

--- অ হ্যাঁ , ঠিক কইছ, দেখি কোভিড হেল্পলাইনে ফোন কইরা ...

বলতে বলতে শুভ মোবাইলে নম্বর টেপা শুরু করে ---

ওপারে রিং হয় ---

--- হ্যালো ...

--- আপনেরা কি কোভিড হেল্পলাইন কইতাছেন ?

--- হয় হয় ...

--- আমার দিদির ধুম জ্বর উঠছে ...

--- কার জ্বর কলে ?

--- আমার দিদির , মানে মোর ডাঙর ভনির...

--- অ এতিয়া ত হচপিটালত বেড খালি পোয়া মুচকিল , হোম আইসোলেশনত থাকিব লাগিব ...

--- হেইটা ত বুঝলাম সোয়াব টেস্টটা আগে করাইতে হইব ত ?

--- আপনার ওচরতে কোভিড টেস্টিং সেন্টার নাই নেকি ?

--- ওচরতে নাই , বহুত দূরে , আপনার হেল্প লাগব ,প্লিজ ...

--- ঠিক আছে আপনার এড্রেসটু মেসেজ করি দিয়ক, আমার মানু যাব , চিন্তাকরিব নে লাগে ...

বলতে বলতেওপারে মোবাইল বন্ধ করে দেয় ।


###

একটু বাদেই অ্যামবুলেন্স করে এসে পড়ে স্বাস্থ্য কর্মীর লোক । ওদের সবার গায়ে পরা কিড-বর্ম । সাগরিকার নাকে স্ট্রিপ ঢুকিয়ে রেপিড টেস্ট করে ওরা । ফলাফল দেখা গেল নিগেটিভ । স্বাস্থ্যকর্মীর প্রধান যিনি , তিনি বলে উঠলেন , একো ন হয় , এনেয়ে নরমেল জ্বর , চিন্তার একো নাই ...প্যারাসিটামল খোয়াই দিব , প্রয়োজন হলে এন্টি -বাইওটিক ...

স্বাস্থ্যকর্মীরা আর বসে থাকে না । চলে যায় ।

শ্যামলী আনমনে বলে ওঠে , তাইলে জ্বরটা ক্যান উঠলো ?

সাগরিকা জ্বরের ঘোরে জবাব দেয় , হেরা না আমারে ' বিদেখি বঙাল' কইছে...

বলতে বলতে সে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে ।

শেখরবাবু এতক্ষণে আবিষ্কারকরতে পারলেন সাগরিকার জ্বরের উৎস ।

তিনি গিয়ে বসলেন তাঁর লেখার ঘরে একটু জিরোবার জন্য। কিন্তু কী জিরোবেন ! তাঁর শরীরেও বুঝি জ্বর আসছে । সাগরিকার ওই জ্বর । হু হু করে ধেয়ে আসছে কাঁপন ।

এই জ্বরও খুবদ্রুত সংক্রমিত হয় ...। শত টেস্টেও ধরা পড়ে না ।

..............................................






Kumar Ajit Dutta

F/4, Madhab Sankar Housing Complex

PandabNagar , Boripara

P O Pandu , Guwahati 781012 Assam

Mob No 9435307169